ডায়ালসিলেট ডেস্ক :: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা ছাত্র-জনতার গণমিছিলকে কেন্দ্র করে গতকাল শুক্রবার পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে সিলেট ও খুলনায়।
Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!এর মধ্যে হবিগঞ্জে সংঘর্ষে ১জন শ্রমিক নিহত হয়েছেন । খুলনায় পিটুনিতে পুলিশের ১ সদস্য নিহত হয়েছেন।
রাজধানীর উত্তরায় গণমিছিল কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের পাল্টাপাল্টি সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের কারও কারও হাতে ধারালো অস্ত্র দেখা গেছে। লক্ষ্মীপুরে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে।
এ সময় এক যুবককে অস্ত্র হাতে বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া দিতে দেখা গেছে। নরসিংদীতে আওয়ামী লীগ–ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতা-কর্মীরা হামলা চালিয়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছেন। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ৩৭০ জন।
এর আগে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি ঘিরে সংঘর্ষ-সংঘাতের ঘটনায় এ নিয়ে নিহত হয়েছেন ২১৫ জন।
গত বৃহস্পতিবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছিল, গণহত্যা ও গণগ্রেপ্তারের প্রতিবাদে এবং শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবি আদায়ে শুক্রবার ‘প্রার্থনা ও ছাত্র-জনতার গণমিছিল’ কর্মসূচি পালন করা হয়।
বেলা সাড়ে তিনটার দিকে শিক্ষার্থীরা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকের সামনে অবস্থান নেন। সেখানে তাঁরা জিরো পয়েন্টের দিকে যেতে চাইলে পুলিশ মিছিল লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল ছোড়ার ঘটনা ঘটে। মিছিলে স্থানীয় বাসিন্দাদেরও যোগ দিতে দেখা যায়। এ সময় পুলিশের উদ্দেশে ‘ভুয়া’ ‘ভুয়া’ ও সরকারবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেওয়া হয়। পুলিশ সাঁজোয়া যান নিয়ে বিক্ষোভকারীদের সামনে এগোতে গেলে বাধার মুখে পড়ে। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে বৃষ্টির মধ্যে পুলিশ পিছু হটে।
বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে বিক্ষোভকারীরা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে থেকে এগিয়ে গিয়ে গল্লামারী ব্রিজের ওপর অবস্থান নেন।
পুলিশ গল্লামারী মোড় থেকে দফায় দফায় সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালায়। প্রায় আধা ঘণ্টা সেখানে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ চলে। এর মধ্যে পুলিশের একটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে ফিরতে শুরু করেন। এ সময় গল্লামারী কাঁচাবাজার এলাকার একটি দোকানের মধ্যে পুলিশের চার সদস্য আটকা পড়েন। দোকানের শাটার খুলে তাঁরা বাইরের পরিস্থিতি দেখতে গেলে বিক্ষোভকারীরা ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। পুলিশ সদস্যরাও গুলি ছোড়েন।
এ সময় বিক্ষোভকারীরা পুলিশ সদস্যদের বেধড়ক পেটান। আধা ঘণ্টা পর ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আহত পুলিশ সদস্যদের হাসপাতালে নেওয়া হয়। সুমন কুমার ঘরামী নামের পুলিশের একজন কনস্টেবল মারা গেছেন। পুলিশের ২০-২৫ জন সদস্য গুরুতর আহত হন। সংঘর্ষে দুই পক্ষের ৫০ জনের বেশি আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জুমার নামাজের পর গণমিছিলে অংশ নিতে হবিগঞ্জে শহরের কোর্ট মসজিদের সামনে অবস্থান নেন বিক্ষোভকারীরা। তাঁরা সেখানে আধা ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করেন। টাউন হল পৌর মিলনায়তনের সামনে অবস্থান নেন ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা। একপর্যায়ে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি রাজীব আহম্মেদ ও সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমানের নেতৃত্বে নেতা-কর্মীরা শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে যোগ দিয়ে সংহতি জানান।
পরে মিছিল নিয়ে বিক্ষোভকারীরা তিনকোনা পুকুরপাড় এলাকার দিকে যেতে থাকেন। তখন ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মী ও বিক্ষোভকারীরা পাল্টাপাল্টি স্লোগান দেন। একপর্যায়ে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হলে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা পিছু হটেন।
তখন বিক্ষোভকারীদের একটি অংশ আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করেন। আরেকটি অংশ সংসদ সদস্য আবু জাহিরের বাসা লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় বাসার সামনে থাকা চার-পাঁচটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
পরে ঘটনাস্থলের দিকে পুলিশ এগিয়ে এলে তিনকোনা পুকুরপাড় এলাকায় অবস্থান নেওয়া বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর সন্ধ্যা ছয়টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ।
পুলিশ-বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে মোস্তাক মিয়া (২৪) নামের ১জন নিহত হন। জানা যায় মোস্তাক এখানে জুতা কিনতে এসেছিলেন। এসে সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে যান। গুলিতে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। আজ শনিবার সকাল সাতটা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়েছে।

