নিজস্ব প্রতিবেদক ::  সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের একজন চিকিৎসক সহকারী অধ্যাপক ২বার করোনায় পজেটিভ হওয়া সত্বেও নিয়মিত রোগী দেখছেন এবং অপারেশন কার্জক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে আক্রান্ত হচ্ছেন চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের আত্নীয়-স্বজনরা।

ওসমানি মেডিকেল কলেজের সার্জারী বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন ঐ চিকিৎসক। চলতি মাসে দু’বার করোনায় পজেটিভ ধরা পড়ে তার সিলেট ওসমানি কলেজের পিসিআর ল্যাবে এ। বর্তমানে ঐ চিকিৎসক প্রতিদিনই বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিক গুলোতে গিয়ে নিয়মিত রোগীদের দেখছেন এবং অপারেশন করছেন।

ফলে আক্রান্ত হচ্ছেন চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের আতœীয় স্বজনরা। এতে করে অনেক রোগীদের অজান্তে বাড়ছে করোনা সংক্রমণের ঝুকিঁ সেই সাথে ছড়িয়ে পড়ছে আক্রান্তের সংখ্যাও। তবে সে বিষয়ে রোগী ও তাদের আতœীয় স্বজনদের মধ্যে ঐ চিকিৎসকের করোনা পজেটিভের বিষয়টি তাদের কাছে অজানা।

এমনকি সে সকল প্রাইভেট প্রতিষ্টানগুলোর কেউই জানেন না এই চিকিৎসক করোনা পজেটিভ। তবু প্রাইভেট প্রতিষ্টানগুলোতে তিনি চালিয়ে যাচ্ছেন রোগী দেখা এবং অপারেশনের কার্যক্রম। সিলেট নগরীর নামকরা বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে বেশ কয়েকদিন যাবত রোগীদের (অপারেশন ) চিকিৎসা করে যাচ্ছেন এই ডাক্তার।

তিনি সিলেট এমএজি ওসমানি মেডিকেল কলেজের সার্জারী বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা.সমীরন চন্দ্র নাথ। তার গত ৭ই সেপ্টেম্বর সোমবার সিলেট ওসমানি মেডিকেল কলেজ ল্যাবে প্রথম করোনা পজেটিভ ধরা পড়ে। এর কয়েকদিন পরই আবারো করোনা টেস্ট করান তিনি। দ্বিতীয় বারের মত গত ১৬ই সেপ্টেম্বর বুধবার আবারো করোনা পজেটিভ ধরা পড়ে তার শরীরে। তারপরও তিনি নিয়মিত রোগীদের চিকিৎসা/অপারেশন করে যাচ্ছেন।

এতে রোগীদের মধ্যে করোনা সংক্রমণের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাওয়ায় ছড়িয়ে পড়তে পারে সিলেট নগরজুড়ে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। যার কারণ হয়তো অনেকেই জানেন না ঐ চিকিৎসকের কাছ থেকেই চিকিৎসা সেবা নেয়ার মাধ্যমে সংক্রমিত হচ্ছেন তারা। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ রূপ আকার ধারণ করবে।
তবে রোগীরদের চিকিৎসা/অপারেশনের বিষয়টি সকল তথ্য/ ডকুমেন্ট ডায়াল সিলেটের হাতে এসে পৌছেছে।

এব্যাপারে সিলেট নগরীর দরগা গেইটস্থ (আলিয়া মাঠের পাশ্ববর্তী) একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে রোগীর আত্নীয় পরিচয়ে মোবাইল ফোনে অপারেশনের সিরিয়াল নিতে চাইলে সেখানে কর্তব্যরত ম্যানেজার জানান, গত কয়েকদিন ধরে ডা.সমীরণ চন্দ্র স্যার রোগীদের অপারেশন করছেন এবং রোগী দেখছেন। আপনার রোগীকে দেখে অপারেশনের প্রয়োজন হলে স্যার অপারেশন করবেন।

এদিকে সিলেট ওসমানি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক হিমাংশু লাল রায় এর সাথে কথা বললে তিনি ডায়ালসিলেটকে জানান, ডা. সমীরন চন্দ্র নাথের করোনা পজেটিভ এসেছে তা জানি। তবে তিনি আমাদের মেডিকেল হাসপাতালের কোন স্টাফ না তিনি ওসমানি মেডিকেল কলেজের স্টাফ তো এ বিষয়ে আমি কোন মন্তব্য দিতে চাইনা। সে বিষয়ে মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলতে পারেন।

তবে করোনা পজেটিভ থাকা অবস্থায় প্রাইভেট প্রতিষ্টানে রোগী দেখা বা অপারেশন করার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা ঠিক নাতবে করোনা পজেটিভ থাকাকালীন সময়ে তিনি যদি রোগী দেখে থাকেন তাহলে যেসব রোগীদের চিকিৎসা/অপারেশন করা হয়েছে সেই রোগীদের একটি লিষ্ট নিয়ে তাদের করোনা পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহ করা প্রয়োজন। তা না হলে রোগী বা তাদের আতœীয়-স্বজন বিপদের সম্মুখীন হবেন।

এব্যাপারে সিলেট ওসমানি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা.মইনুল হক ডায়ালসিলেটকে বলেন, গতকাল রবিবার বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকেও ফোন এসেছে এবং আরো কয়েকটি জায়গা থেকে ফোন আসে ডা.সমীরনের পজেটিভ থাকা অবস্থায় রোগী দেখছেন এবং অপারেশন করেছেন। পরে তার সাথে কথা বলি সেগুলো তিনি স্বীকারও করেছেন। তাকে বাসায় কোয়ারেন্টাইনে থাকার কথাও বলেছি। তারপরও যদি পরিবর্তে পজেটিভ থাকা অবস্থায় কোন প্রতিষ্টানে গিয়ে রোগী দেখেন বা অপারেশন করেন তাহলে আমরা তার উপর প্রশাসনিকভাবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।

সে বিষয়ে সার্জারী বিভাগের প্রধান ডিএ হাসানকে জানানো হয়েছে তিনি সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবেন বলেও আমাকে জানান। মহামারী করোনা ভাইরাসের বিষয়টি আমাদের সকলকে খুবই সতর্ক অবস্থায় চলতে হবে। আমি আশাকরি ডা.সমীরন চন্দ্র নাথ তার ভ‚ল সংশোধন করবেন। এরপরও যদি তিনি একাজ করেন তাহলে কর্তৃপক্ষ কঠোর ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে।

এব্যাপারে ডা.সমীরণ চন্দ্র নাথ এর সাথে মোবাইলে(০১৭….১৭২) একাধিকবার যোগাযোগ করলে প্রথমদিকে তিনি ফোন রিসিভ করে পরিচয় দিয়ে কথা বলতে চাইলে সিরিয়াল নাম্বার বলে সন্ধ্যা ৬ থেকে রাত ৮টার মধ্যে ফোন করতে বলেন। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় একাধিকবার ফোন করলে তিনি কলটি কেটে দেন।

এদিকে আবারো সিলেট মহানগর ক্লিনিকের কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বললে তারা ডায়ালসিলেটকে জানান, ডা.সমীরন চন্দ্র নাথ করোনা যে পজেটিভ তা আমরা জানতাম না। তবে রাতে উনার পজেটিভের বিষয়টি জানতে পেরে আমরা উনার পরিবর্তে অন্য আরেকজন ডাক্তার নিযুক্ত করেছি।

এ অবস্থায় ওসমানি মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন স্থানীয় জনসাধারণ।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *