ডায়ালসিলেট ডেস্ক:খুলছে আমিরাতের বন্ধ দুয়ার। আগামী ফেব্রুয়ারি থেকে দেশটিতে ভিজিট ভিসা চালু হচ্ছে। সেই সঙ্গে বন্ধ থাকা কর্মসংস্থান বা ওয়ার্ক ভিসা চালুরও ইঙ্গিত মিলেছে। সোমবার রাতে দুবাইতে সাংবাদিক কাম রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারীর এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ঢাকায় নিযুক্ত আমিরাতের রাষ্ট্রদূত আব্দুল্লাহ হামুদি দ্রুত ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ইঙ্গিত দেন।

জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের ঢেউ আমিরাতে সড়কে আঁচড়ে পড়ার প্রেক্ষিতে দেশটির বিক্ষোভকারী ৫৭ জন প্রবাসী বাংলাদেশির বিরুদ্ধে দেশটির অভ্যন্তরীণ আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ আনার পরদিন বাংলাদেশিদের জন্য সাময়িকভাবে ভিসা দেয়া বন্ধ করে দেয় মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)। পররাষ্ট্র এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা এটা নিশ্চিত করেছেন যে, ৩৬ জুলাই খ্যাত ৫ই আগস্ট বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর নতুন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অনুরোধে জেল-জরিমানার শিকার বাংলাদেশি প্রবাসীরা মুক্তি পেয়েছেন। কিন্তু অফিসিয়াল ভিসা ছাড়া দেশটির সব রকম ভিসা ইস্যু এখনো বন্ধ রয়েছে। ভিসা খোলার আলাপে আমিরাতে অ্যামনেস্টি চালু থাকার বিষয়টিকে সামনে রাখা হয় জানিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, নতুন বছরে ধীরে ধীরে সব ভিসাই উন্মুক্ত হবে বলে আমরা আশা করছি। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র্র মন্ত্রণালয়ের নতুন মুখপাত্র মোহাম্মদ রফিকুল আলম আগেই বলেন, আমিরাত সরকার ১লা জুলাই থেকে ৩১শে ডিসেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছেন। এ সময়ে দেশটিতে অনিয়মিত কিংবা অবৈধ হয়ে পড়া কর্মীরা নতুন কাজে নিয়োগ লাভের সুযোগ দিয়ে বৈধ হওয়ার ব্যবস্থা করেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের কর্তৃপক্ষের থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ইতিমধ্যে ৫০ হাজারের বেশি বাংলাদেশি এ সাধারণ ক্ষমার সুযোগ গ্রহণ করে উপকৃত হয়েছে। আমরা আশা করছি, চলমান সাধারণ ক্ষমার মেয়াদ শেষ হলে সংযুক্ত আরব আমিরাতের কর্তৃপক্ষ নতুন ভিসা উন্মুক্ত করার বিষয়টি পুনর্মূল্যায়ন করবে।

দুবাইয়ে মুশফিক আনসারীর সংবর্ধনায় রাষ্ট্রদূত আব্দুল্লাহ হামুদি যা বললেন: এদিকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে গমনেচ্ছু বাংলাদেশীদের জন্য দ্রুত ভিসা উন্মুক্ত হওয়ার কথা জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত আব্দুল্লাহ হামুদি। সোমবার  রাতে দুবাইয়ে বাংলাদেশ কমিউনিটির পক্ষ থেকে সিনিয়র সচিব পদমর্যাদায় নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারীকে  সংবর্ধনা দেয়া হয়। সেখানে উপস্থিত হয়ে  রাষ্ট্রদূত এ কথা বলেন। সংবর্ধিত অতিথি রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী অনুৃষ্ঠানে বলেন, জুলাই বিপ্লবে কিছু প্রবাসী নিজের ভাইয়ের, সন্তানের মৃত্যু ও গণহত্যা সহ্য করতে না পেরে নিজের ক্ষতি হবে জেনেও আমিরাতে বিক্ষোভ করেছেন। তাদের আত্মত্যাগকে কীভাবে শ্রদ্ধা জানাবো তা আমার জানা নেই। মনে রাখতে হবে নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে নিয়ম মেনে চলার বিষয়ে আমাদেরকে আরও স্বতঃস্ফূর্ত হতে হবে। তিনি আরও বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতের সকল উন্নয়নে বাংলাদেশিদের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশের রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা আর উঁচু উঁচু দালান সবকিছুতেই বাংলাদেশি শ্রমিকদের ঘাম লেগে আছে। তাই আমরা আশা করতে চাই, সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকার বিভিন্ন পেশায় দক্ষ জনবল নিয়োগে আরও বেশি আন্তরিক হবেন। বাংলাদেশ থেকে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইটি প্রফেশনাল এবং অদক্ষ শ্রমিকদের ভিসার বিষয়টি আরও গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করার আহ্বান জানান রাষ্ট্রদূত আনসারী। মুশফিকুল ফজল আনসারী আরও বলেন, ড. ইউনূস এমন এক ব্যক্তি, পৃথিবীব্যাপী তার প্রতি মানুষের সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধ আকাশচুম্বী। পৃথিবীর যে কোনো রাষ্ট্রপ্রধান তার অনুরোধ ফেলতে পারেন না। আমিরাতের রাষ্ট্রপ্রধানও তার অনুরোধ ফেলতে পারেননি। বাংলাদেশের মানুষ আমিরাতের রাষ্ট্রপ্রধানের প্রতি এজন্য আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবে। আমিরাতের সঙ্গে অচিরেই ভিসা জটিলতা কেটে যাবে। এদেশের সঙ্গে আমাদের যে সুদৃঢ় বন্ধুত্ব রয়েছে, তাতে কখনো চিড় ধরার সম্ভাবনা নেই। সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভিসা নিয়ে সুখবর দেন বাংলাদেশের নিযুক্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) রাষ্ট্রদূত, আব্দুল্লাহ আলী আব্দুল্লাহ খাসিফ আল হামুদি। তিনি বলেন, আগামী জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশিদের জন্য আমিরাতের ভিসা জটিলতা দূর হবে। চালু হবে ভ্রমণ ভিসাসহ সব ধরনের ভিসা। ইউএই রাষ্ট্রদূত আল হামুদি বলেন, বাংলাদেশসহ অসংখ্য দেশের জন্য আমিরাতে ভিসা বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। কয়েক বছর পূর্বে যেখানে আমিরাতে বাংলাদেশির সংখ্যা মাত্র সাত থেকে আট লাখের মধ্যে ছিল, সেখানে বর্তমানে বাংলাদেশির সংখ্যা ১২ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। যেটা অন্যান্য দেশের তুলনায় সর্বোচ্চ। এসময় কর্ম জীবন শেষে বাংলাদেশকে সেকেন্ড হোম হিসেবে বেছে নেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে তিনি বলেন, রাষ্ট্রদূত মুশফিক আমার বন্ধু। বাংলাদেশের মানুষের জন্য তার লড়াই ও সংগ্রাম আমাকে উৎসাহিত করে। তার সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পেরে আমি আনন্দিত।  ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জাকির হোসেন, ড. রেজা খান, ইঞ্জিনিয়ার এম এ সালাম খান, দুবাইয়ের ভারপ্রাপ্ত কনসাল জেনারেল আশফাক হোসেন প্রমুখ।

 

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *