মো মনির হোসেন
সাংবাদিক ও কলামিস্ট
রাষ্ট্রের বিভিন্ন স্তরের মানুষ তাদের যেকোনো দাবি নিয়েই ছুটছে যমুনায়। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু সিদ্ধান্ত প্রমাণ করে যমুনায় মার্চ করলেই দাবি মেনে নেয় সরকার। নিকট অতীতে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেয়া। কিন্তু কোনো কোনো দাবির পক্ষে আন্দোলনরতদের ঠাণ্ডা পানি আর কোনো কোনো দাবির পক্ষে গরম পানি দেয়ায় প্রশ্ন ওঠেছে সরকারের পক্ষপাতদুষ্টতা নিয়ে। সবশেষ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগ নিয়ে সৃষ্ট আলোচনায় সামগ্রিক সংকট নিরসনে জাতীয় সরকার নিয়েও আলোচনা চলছে- এমনটাই বলাবলি আছে। দেশ আসলে কোন পথে এগুচ্ছে সামনের দিনগুলোতে আর কি কি হবে বলা মুশকিল।
নির্বাচন নিয়ে সুস্পষ্ট রোডম্যাপ না আসা, সংস্কারের নামে কালক্ষেপণ, মানবিক করিডোর, বন্দর নিয়ে সরকারের ঘোলাটে অবস্থান, মব ভায়োলেন্স অব্যাহত থাকা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা। সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার বলেছেন, ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন হওয়া উচিত। মানবিক করিডোর, বন্দরের মতো স্পর্শকাতর ইস্যুগুলোর সিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয়ে নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকারের নেয়ার বিষয়ে তিনি মত দিয়েছেন। মব ভায়োলেন্স নিয়ে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। বিএনপি ইতিমধ্যেই নির্বাচন বিলম্বের প্রশ্ন তুলেছেন। দৃশ্যত, বিএনপি ও নতুন দল এনসিপি’র মধ্যে চলছে ঠাণ্ডা যুদ্ধ। দু’পক্ষই বেশক’জন উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করেছে।
বিএনপি, সরকারে থাকা দুজন ছাত্র উপদেষ্টার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। অন্যদিকে এনসিপি তিনজন উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করেছে। বাইরে তীব্র সমালোচনা, অন্তর্বর্তী সরকারের এখতিয়ার নেই এমন অনেক কাজে হাত দিয়েছেন বর্তমান উপদেষ্টা পর্ষদ। অথচ মূল কাজ হচ্ছে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন। সে বিষয়ে ‘রা’ নেই। যত দিন যাচ্ছে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছে ড. ইউনূসের। একমাত্র এনসিপি ছাড়া কারও সঙ্গেই পরিস্থিতি নিয়ে তিনি মুখোমুখি হননি। বিএনপি একাধিক বার প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাৎ চেয়েও পায়নি। অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামীও সর্বদলীয় বৈঠকের তাগিদ দিয়ে আসছে।
৫ই আগস্ট ২০২৪ পর থেকে এখনো পর্যন্ত সর্বত্র অস্থিরতা। যে কাক্সিক্ষত পরিবর্তন সূচিত হওয়ার কথা ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে তা হয়নি।
এখনো ‘মব ভায়োলেন্স’ অব্যাহত আছে। সবশেষ ধানমণ্ডিতে একজন প্রকাশককে হেনস্তা করতে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে তর্কাতর্কি হয় এবং পুলিশের দৃঢ় অবস্থানের কারণে জুলাই আন্দোলনে আহতরা সুচিকিৎসা পায়নি। তাদের পরিবার পরিজন রাস্তায় ঘুরছে ন্যায়বিচারের আশায়। সংস্কার নিয়ে সিরিজ বৈঠক চলছে। ঐকমত্য কমিশন এখনো স্পষ্ট করেনি কবে শেষ হবে এই প্রক্রিয়া। রাজনৈতিক মহল থেকে বলা হচ্ছে, দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ।
দেশ আসলে কোন পথে এগুচ্ছে সামনের দিনগুলোতেই তা নির্ধারিত হয়ে যাবে। নেতিবাচকতার বাইরে দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতার প্রশ্নই আগে। পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হলে কারও জন্যই মঙ্গল বয়ে আনবে না।
monirece.siu@gmail.com

