ডায়াল সিলেটর ডেস্ক:-
সিলেটবাসী মৌলিক নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী। তিনি বলেন, “সিলেটের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ খাতের ন্যায্য প্রাপ্যতা এখনও নিশ্চিত হয়নি।”
রোববার (১২ অক্টোবর) নগরীর কোর্ট পয়েন্টে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কসহ যোগাযোগ ব্যবস্থার দ্রুত উন্নয়নের দাবিতে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
তিনি বলেন:“সমগ্র সিলেটের সড়ক ব্যবস্থা বর্তমানে চরম হুমকির মুখে। সিলেট-ঢাকা এবং সিলেট-চট্টগ্রাম মহাসড়ক উন্নয়নের কাজ দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। শহরের অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোর অবস্থাও করুণ। এসব কারণে পর্যটন শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিশেষ করে বিমানবন্দর থেকে আম্বরখানা সড়কে তীব্র যানজট বহিরাগতদের কাছে সিলেটের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে।”
তিনি আরও বলেন, সিলেট অঞ্চলের বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রে যাতায়াতের রাস্তাগুলোর বেহাল দশাও পর্যটকদের আগ্রহ কমিয়ে দিয়েছে।
রেল যোগাযোগ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ বলেন:“১৮৬২ সালে ব্রিটিশ আমলে যাত্রা শুরু করা রেলওয়ে স্টেশন এখনও সেই পুরনো ধাঁচে চলছে। পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ঘন ঘন দুর্ঘটনা, ট্রেনের অনিয়মিত যাত্রা, দালালদের দৌরাত্ম্যে টিকিট না পাওয়া—এসব এখন নিত্যদিনের ঘটনা। সিলেট-ঢাকা রুটে নতুন ট্রেন চালুর ঘোষণা দিয়েও তা বাতিল করা হয়েছে।”
সিলেটে বিদ্যুৎ ও গ্যাস নিয়ে বৈষম্যের অভিযোগ তুলে তিনি বলেন,“সিলেটে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় প্রায় ২,৪৯৬ মেগাওয়াট, অথচ পুরো বিভাগে সরবরাহ হয় মাত্র ৭০০ মেগাওয়াট। ফলে প্রতিদিন লোডশেডিং হচ্ছে। অন্যদিকে, সিলেট গ্যাস উৎপাদনে বড় অবদান রাখলেও এখানকার মানুষই গ্যাস সংযোগ থেকে বঞ্চিত। আবাসিক ও অনাবাসিক গ্যাস সংযোগের জন্য মানুষ দ্বারে দ্বারে ঘুরছে।”
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন,“যেখানে খনিজসম্পদ উৎপাদিত হয়, সেই এলাকার জন্য বিশেষ বরাদ্দ থাকা উচিত। গ্যাস সংযোগ না দিলে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।”
বন্যা মোকাবিলায় পরিকল্পিত উদ্যোগ না থাকার অভিযোগ করে তিনি বলেন,২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যার পর সিলেটের জন্য একটি পরিকল্পনা পাঠানো হলেও তা বাস্তবায়ন করা হয়নি, অথচ অন্যান্য বন্যাকবলিত বিভাগে তা কার্যকর করা হয়েছে।
রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের হেনস্তার বিষয়টিও তুলে ধরেন আরিফুল হক বলেন,“দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা প্রবাসীরা দেশে এসে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। বিমানভাড়ার অতিরিক্ত চাপে যাত্রীরা নাজেহাল। সিলেট-ঢাকা, সিলেট-চট্টগ্রাম, সিলেট-কক্সবাজার রুটে বিমানের ফ্লাইট চালু করতে হবে।”
বাজেট বৈষম্যের অভিযোগ তুলে তিনি বলেন,“বিভিন্ন সিটি করপোরেশনের বরাদ্দ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সিলেট নগরীর প্রতি বাজেটে চরম বৈষম্য করা হচ্ছে। এর সুষ্ঠু সমাধান প্রয়োজন।”
সমাবেশ শেষে সিলেটের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বিভিন্ন দাবি সংবলিত স্মারকলিপি পেশ করেন আরিফুল হক চৌধুরীসহ নেতারা। এই প্রতিবাদ কর্মসূচিতে সিলেটের বিভিন্ন ধর্মীয়, সামাজিক, পেশাজীবী, ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করেন। দলমত নির্বিশেষে সিলেটবাসীর প্রতি বৈষম্যের প্রতিবাদে ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে ব্যাপক জনসমাগম ঘটে।