ডায়াল সিলেট ডেস্ক;

সুনামগঞ্জের সীমান্ত নদী যাদুকাটায় পাঁচ দিনে পাড় কেটে বালু লুট হয়েছে ।   অন্তত ৫০ কোটি টাকার বালু লুট হয়েছে বলে ধারনা করা হয়।  নদীর আড়াই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে পাড়ের প্রস্থ বেড়েছে ৩০ ফুটেরও বেশি। স্থানীয়দের ভাষায়, “যাদুকাটার পাড়ই যেন এখন বালু ব্যবসায়ীদের খনি।”

গেল মঙ্গলবার রাত থেকে শনিবার পর্যন্ত পাঁচ দিন ধরে চলে এই বালু লুটের উৎসব। বিজিবির সীমান্ত ক্যাম্পের কাছেই রাতের আঁধারে দুই হাজারের বেশি বাল্কহেড নদীতে ঢোকে। একেকটিতে ছিল ১০-১৫ জন শ্রমিক। তারা পরিকল্পিতভাবে একসঙ্গে ঢুকে নদীর পাড় কেটে বালু তুলে নিয়ে যায়।

বিজিবি বলছে, এত সংখ্যক বাল্কহেড একসঙ্গে ঢোকার ঘটনায় তারা হতবাক। পরদিনই জেলা প্রশাসনকে বিষয়টি জানিয়ে চিঠি দিয়েছে সীমান্তরক্ষী বাহিনী ।

স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল হক বলেন, “আড়াই কিলোমিটার এলাকায় ৩০ ফুট প্রস্থের পাড় কেটে নিয়েছে তারা। একপক্ষ সরকারি জমি নিজের দাবি করে বিক্রি করেছে, আরেকপক্ষ ইজারার নামে রয়েলটি আদায় করেছে। কেবল জমি বিক্রির মাধ্যমেই চক্রটি ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকা হাতিয়েছে।”

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সাহিদাবাদ, লাউড়েরগড় ও পুরান লাউড়ের ৩০-৬০ জন ব্যক্তি নদীর পাড়ের সরকারি জমি নিজের বলে বিক্রি করেছেন। লাউড়েরগড়ের জাহিদ মিয়ার ছেলে শাহাজাহান–এর এমন বিক্রির দৃশ্যও মধ্যরাতে ফেসবুক লাইভে দেখা গেছে।

অভিযুক্তদের মধ্যে স্থানীয় কয়েকজনের নামও উঠে এসেছে— আব্দুল কাইয়ুম (খেলু মাস্টার), খাজা মাঈনুদ্দিন, ফিরুজ আলী প্রমুখ। তবে তারা অভিযোগ অস্বীকার করে বলছেন, “আমরা পাড় কাটার বিরোধিতা করেছি, এজন্য আমাদের নাম বলা হচ্ছে।”

ইজারাদারের দাবি, ‘বাধা দিতে চেষ্টা করছি’ নদীর ইজারাদার নাছির মিয়া বলেন, “পাড় কাটা বন্ধ রাখতে আমরা চেষ্টা করছি। মাইকিং, বাঁশের ব্যারিকেড দিচ্ছি। জড়িতদের ধরতে প্রশাসনকে সহযোগিতা করছি।” কিন্তু স্থানীয়দের দাবি, ইজারাদাররা বালু উত্তোলন ঠেকাতে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেননি।

সুনামগঞ্জ ২৮ ব্যাটালিয়ন বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্ণেল জাকারিয়া কাদির বলেন, “এক রাতে দুই হাজারের বেশি বাল্কহেড ঢুকেছে। আমাদের ক্যাম্পের পক্ষে এত মানুষ ঠেকানো সম্ভব নয়। চেষ্টা করেছি প্রাণপণ। জেলা প্রশাসনকে জানিয়েছি, এভাবে চলতে থাকলে পাড় কাটা বন্ধ হবে না।” তিনি আরও বলেন, “এটি ঠেকাতে হলে পুলিশ, আনসার ও বিজিবির যৌথ ক্যাম্প বসাতে হবে, সঙ্গে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটও থাকতে হবে। তাহিরপুর থেকে এসে এই দুর্বৃত্তায়ন ঠেকানো যাবে না।”

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, “যাদুকাটার পাড় কাটার ঘটনায় ইজারাদারকে শোকজ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এমন ঘটনা চললে ইজারা বাতিল করা হবে। টাস্কফোর্স গঠন করে অভিযান চলছে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।”

তিনি জানান, “নৌ-পুলিশ ও সাধারণ মানুষের সহযোগিতা পেলে এ ধরনের পরিবেশবিধ্বংসী কাজ বন্ধ করা সম্ভব।

যাদুকাটায় ড্রেজার ও সেইভ মেশিন ব্যবহার করে বালু উত্তোলন বহুদিন ধরেই চলছে। আদালত সনাতনি পদ্ধতিতে বালু উত্তোলনের নির্দেশ দিলেও বাস্তবে তার উল্টো চিত্র দেখা গেছে। নদীর দুই তীর ক্ষতবিক্ষত হয়ে পড়েছে।

এখনও পরিবেশ বিধ্বংসী সেই পদ্ধতিতেই চলছে উত্তোলন। সম্প্রতি আদালত পাড় না কাটার শর্তে যাদুকাটা-১ ও যাদুকাটা-২ বালু মহাল ইজারায় দেওয়ার অনুমতি দেয়। এবারের ইজারামূল্য দাঁড়ায় ১০৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, আগের মতো এবারও ইজারার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন আওয়ামী লীগ, বিএনপি উভয় দলের প্রভাবশালী নেতা ও ব্যবসায়ীরা।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *