ডায়াল সিলেট ডেস্ক;-
লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালির উদ্দেশ্যে যাওয়া হবিগঞ্জের ৩৮ তরুণের সন্ধান না পাওয়ায় তাদের পরিবার ও স্বজনদের মধ্যে উৎকণ্ঠা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। দুই সপ্তাহ অতিক্রান্ত হলেও নিখোঁজদের কোনো খবর মেলেনি, যা তাদের পরিবারে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করেছে।
নিখোঁজদের ‘আদম বেপারি’ হিসেবে পরিচিত হাসান মোল্লা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একের পর এক পরস্পরবিরোধী তথ্য ও বক্তব্য দিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছেন। সম্প্রতি তিনি নিখোঁজদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগও বন্ধ করে দিয়েছেন। গত মঙ্গলবার রাতে কথা বলতে গিয়ে তিনি দাবি করেন, ভূমধ্যসাগরে নেটওয়ার্ক থেকে কিছু সময় বেরিয়ে থাকার পর ৩৫ জন তরুণ নিরাপদ আশ্রয়ে রয়েছেন। কিন্তু তার দেওয়া তথ্যগুলো একেবারেই স্পষ্ট নয়।
হাসান তার ফেসবুক আইডি থেকে জানান, চারটি নৌকার মধ্যে একটি মাঝপথে ডুবে গেছে এবং ওই নৌকার কিছু যাত্রী হাসপাতালে, অনেকে জেলে আছেন, তবে সে ঠিক জানে না কে কোথায়। অন্যদিকে, তার দেওয়া তথ্যের মধ্যে বড় রকমের অসামঞ্জস্য দেখা যাচ্ছে।
স্থানীয়রা বলছেন, গত ছয় মাসে ৭৫০ জনকে লিবিয়া থেকে ইতালি পাঠানোর দাবি করেন হাসান মোল্লা, তবে বিভিন্ন পত্রিকায় তিনি সংখ্যাটি ৩০০ উল্লেখ করেছেন। দুর্ঘটনার পর তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানিয়েছেন তার যোগাযোগের সব নম্বর হ্যাক হয়ে গেছে এবং কেউ যেন তার সঙ্গে যোগাযোগ বা লেনদেন না করে।
নিখোঁজদের পরিবারের সাথে যোগাযোগের সুযোগ না পাওয়ায় তারা চরম উদ্বেগ ও হতাশায় আছেন। হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ের এক ইতালি প্রবাসী জানান, “পরিবারের অনেকেই উৎকণ্ঠায় রয়েছেন, কিন্তু নিখোঁজদের নিরাপদ থাকার নিশ্চয়তা না দিয়ে হাসান তাদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ দিচ্ছেন না।”
৩০ সেপ্টেম্বর ত্রিপলির উপকূল থেকে চারটি নৌকা ছেড়ে যায়, যার মধ্যে ৩৮ জনসহ প্রায় ৯০ জন যাত্রী ছিল একটি নৌকায়। সেই নৌকাটির কোনো সন্ধান মেলেনি। নিখোঁজদের মধ্যে ১৪ জনের নাম পাওয়া গেছে, যাদের মধ্যে হবিগঞ্জ শহর ও বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দারা রয়েছেন।
স্থানীয় অভিবাসী নেতারা বলছেন, এই ধরনের মানবপাচারকারী চক্র যুবকদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিতে অক্ষম। যুবকদের কাছ থেকে প্রচুর অর্থ আদায় করার পরই তাদের বিপজ্জনক পথে পাঠানো হয়। তারা সবাইকে বৈধ পথে বিদেশ যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন।
এ ব্যাপারে হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক (ডিসি) ড. মো. ফরিদুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) এএনএম সাজেদুর রহমান বলেন, “আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে এমন ঘটনার খবর পাই। এই ঘটনাটিও জানতে পেরেছি। তবে কেউ অভিযোগ না করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব নয়। তারপরও পুলিশের সংশ্লিষ্ট ইউনিটকে জানিয়েছি। আপনারা যদি যথাযথ তথ্য-প্রমাণ দেন, আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। এ ধরনের অপরাধ প্রতিরোধে সচেতনতার বিকল্প নেই। ”
নিখোঁজদের পরিবার ও এলাকাবাসী এখন প্রশাসনের কাছ থেকে সুষ্ঠু তদন্ত ও নিখোঁজদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তনের জন্য জোর দাবি জানিয়েছেন।

