
শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে পরিবার–পরিজন নিয়ে কোথাও বেরিয়ে পড়ার পরিকল্পনা করেন অনেকে। তবে সঙ্গে যদি ছোট শিশু বা নবজাতক থাকে, তাহলে যাত্রা শুরুর আগেই কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তুতি নিতে হবে। কারণ ঠান্ডার মৌসুমে শিশুদের রোগ–ব্যাধির ঝুঁকি তুলনামূলক বেশি থাকে।
শিশুকে নিয়ে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা ভালো–মন্দ অনেকটাই নির্ভর করে পরিকল্পনার ওপর। ভ্রমণের সময়, যাতায়াতের মাধ্যম, পথে কোথায় কোথায় বিরতি নেওয়া হবে—সবই শিশুর সুবিধা বিবেচনায় ঠিক করা উচিত। শিশুর ঘুম, খাওয়াদাওয়া ও দৈনন্দিন রুটিন যাতে অযথা ব্যাহত না হয়, সে দিকে খেয়াল রাখলে যাত্রা অনেক সহজ হয়।
শিশুরা পরিচিত পরিবেশ ও নিয়ম থেকে দ্রুত সরে যেতে চায় না। তাই তাদের পছন্দের খেলনা, ব্যবহার্য সামগ্রী বা আরামদায়ক পোশাক সঙ্গে রাখলে যাত্রাপথে তারা শান্ত থাকে। শীতের ভ্রমণে শিশুকে আরামদায়ক ও উপযোগী পোশাকে রাখতে হবে, যাতে ঠান্ডা লাগা বা অস্বস্তি না হয়।
শিশুর জন্য প্যাকিং করতে হবে আলাদা গুরুত্ব দিয়ে। ডায়াপার, ওয়াইপ, অতিরিক্ত পোশাক, খাওয়ানোর সরঞ্জাম—এসব অবশ্যই ব্যাগে রাখতে হবে। পাশাপাশি শিশু খেতে পারে এমন নিরাপদ ফল বা স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস রাখলে হঠাৎ ক্ষুধা লাগলেও সমস্যা হয় না।
শীতকালে সর্দি–কাশি, জ্বর, নিউমোনিয়া, ত্বকের শুষ্কতা—এ ধরনের সমস্যায় শিশুরা বেশি ভোগে। ঠান্ডা বাতাস, ধুলাবালু ও জনসমাগম থেকে শিশুকে যতটা সম্ভব দূরে রাখা উচিত। একই সঙ্গে মাস্ক পরানোর অভ্যাস করানো ভালো।
শিশুর গামছা, রুমাল, তোয়ালে আলাদা ব্যবহার করা জরুরি। আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি–কাশির সময় শিশু যেন দূরে থাকে সেটাও নিশ্চিত করতে হবে। ঘরোয়া যত্নে আদা–লেবু চা, কুসুম গরম পানিতে গড়গড়া, মধু বা তুলসীপাতার রস উপকারী হলেও সমস্যার তীব্রতা বাড়লে চিকিৎসকের পরামর্শই নিরাপদ।
বেশির ভাগ শিশু উলের কাপড়ে স্বস্তি পায়, তবে কারও কারও ত্বকে অ্যালার্জি হতে পারে। তাই সুতি পোশাকের ওপর উলের স্তর পরানো ভালো। খুব বেশি মোটা গরম পোশাক না দিয়ে ভারসাম্য রাখতে হবে, কারণ অতিরিক্ত গরমে ঘেমে শিশুর ঠান্ডা লেগে যেতে পারে।
শিশুর ত্বক সংবেদনশীল হওয়ায় শীতে তা দ্রুত রুক্ষ হয়ে পড়ে। তাই নিয়মিত বেবি লোশন, তেল বা গ্লিসারিন ব্যবহার করলে ত্বক নরম থাকে।
যত প্রস্তুতিই থাকুক, শিশুকে নিয়ে ভ্রমণে কিছু না কিছু চ্যালেঞ্জ আসবেই। কিন্তু সেই ছোটখাটো ঝামেলার মাঝেই তৈরি হয় স্মৃতি—যা সারাজীবন থেকে যায়। তাই কিছুটা বাড়তি সতর্কতা আর ধৈর্য থাকলে শীতকালীন ভ্রমণ হয়ে উঠবে আনন্দময় ও স্মরণীয়।