ডায়াল সিলেট ডেস্ক :: আজ বৃহস্পতিবার সিরামিসি গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের (৩১ আগস্ট) এই দিনে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার মীরপুর ইউনিয়নের সিরামিসি গ্রামে পাকহানাদার বাহিনী শান্তি কমিটি গঠনের লক্ষ্যে এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি পেশার লোকজনকে সিরামিসি বাজারে জড়ো করে।
Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!
পরে গ্রামের নিরীহ ১২৬ জন মানুষকে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করে। এদের মধ্যে বেশির ভাগ লোক ছিলেন সাধারণ শান্তিপ্রিয়। নারকীয় এ হত্যাকান্ডের পরপরই পাকসেনারা সিরামিসি গ্রামের প্রায় ২৫০টি ঘরবাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দেয়। দেশ স্বাধীন হলে প্রতিবছর এই দিনটিকে জগন্নাথপুর উপজেলা প্রশাসন ও সিরামিসি গ্রামবাসী শহীদদের স্মরণে আঞ্চলিক শোকদিবস হিসাবে পালন করা হয়।
এর ধারাবাহিকতায় আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় শ্রীরামসি গ্রামে শোক দিবসের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এমপি।
জানা যায়, ১৯৭১ সালের ৩১ আগস্ট সকাল আনুমানিক ১০টার দিকে পাকহানাদার বাহিনী ৭-৮টি নৌকাযোগে সিরামিসি বাজারে আসে। ওই সময় সিরামিসি হাইস্কুল মাঠে শান্তি কমিটির এক সভা আহবান করা হয়।
সভায় সকলকে উপস্থিত থাকার জন্য স্থানীয় রাজাকারদের দিয়ে গ্রামবাসীকে তলব করা হয়। শান্তি ও প্রাণহানী ঠেকানোর আশায় নিরীহ গ্রামবাসীরা সেদিন স্কুল মাঠে সমবেত হন। সভায় যারা আসতে বিলম্ব করেন তাদেরকে পরবর্তীতে ডেকে আনা হয়। এরপর পাকসেনারা ১০ থেকে ১২ জন করে এক সাথে বিদ্যালয়ের নিকট জড়ো করে হাত-পা বেঁধে লাইন ধরিয়ে গুলি করে হত্যা করে। নিহতদের মধ্যে ছিলেন ছাত্র, শিক্ষক, সরকারি কর্মচারী, যুবক, সাধারণ গ্রামবাসী ও গ্রামে বেড়াতে আসা স্বজনরা।
নারকীয় এ হত্যাকান্ডের পরপরই পাকসেনারা সিরামিসি গ্রামের প্রায় ২৫০টি ঘরবাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দেয়। ভীত-সন্ত্রস্ত মানুষ গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে গেলে দাফনের অভাবে পড়ে থাকা লাশগুলোকে শেয়াল- কুকুর টানা হেঁচড়া করে। ঘটনার ৪ থেকে ৫ দিন পর কয়েকজন লোক গ্রামে ফিরে এসে লাশগুলো দাফনের ব্যবস্থা করেন। সেদিন পাকহানাদার বাহিনী ১২৬ জন মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করে।
সিরামিসি হত্যাকাণ্ডের বর্বর কাহিনীকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে স্মরণীয় করে রাখতে ১৯৭৩ সালে তৎকালীন সরকারের পক্ষ থেকে শহীদের নাম সংবলিত স্মৃতিফলক নির্মাণ করা হয় এবং ১৯৮৭ সালে এলাকাবাসীর উদ্যোগে শহীদ স্মৃতি সংসদ নামে একটি সংগঠন গঠন করা হয়।
প্রতিবছরের ন্যায় এবারো স্মৃতি সংসদের পক্ষ থেকে আঞ্চলিক শোক দিবস পালন করতে শহীদগণের স্মরণে শ্রদ্ধাঞ্জলী নিবেদন, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল, আলোচনা সভা, শিক্ষার্থীরদন মধ্যে শহীদ স্মৃতি মেধা সনদ, পুরস্কার বিতরণী সহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
এছাড়া প্রতিবছরের ন্যায় ৭১ সালে সিরামিসি গণহত্যা দিবস উপলক্ষে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শহীদগণের স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হয়।

