স্পোর্টস ডেস্ক::করোনাভাইরাস মহামারির কারণে থমকে আছে দেশের ক্রীড়াঙ্গন। এর মধ্যেই গত শুক্রবার রাজধানীর পল্টন ময়দানে মা-ছেলের ক্রিকেট খেলার একটি দৃশ্য নজর কাড়ে সবার। ছবিটি দ্রুতই ভাইরাল হয় নেট দুনিয়ায়। ভাইরাল হওয়া ছবিতে দেখা যায়, পাঞ্জাবি-পায়জামা পরিহিত ইয়ামিন সিনান বল নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। অপর প্রান্তে ব্যাট করছেন তার মা। ছবিটি সবার নজরে আসার কারণ সিনানের মা ঝর্ণা আক্তার ছেলের সঙ্গে খেলছিলেন বোরকা পরেই। মাদ্রাসার ছাত্র শেখ সিনান ক্রিকেটভক্ত হওয়ায় নিয়মিত সে প্রশিক্ষণ নিতে আসে কবি নজরুল ক্রিকেট একাডেমিতে। বরাবরের মতো সেদিন সিনানকে ক্রিকেট প্রশিক্ষণের ক্লাসে নিয়ে এসেছিলেন মা ঝর্ণা আক্তার। শুরুর দিকে বন্ধুরা, প্রশিক্ষক আসেননি বলে এভাবেই সময় কাটানোর মনস্থির করেন মা-ছেলে। বোরকা পরিহিত ঝর্ণা আক্তারকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে কিছুক্ষণ বোলিং করে ইয়ামিন সিনান। ছোট্ট সিনানের ছুঁড়ে দেয়া বলের ঘূর্ণিতে ব্যাটসম্যান ঝর্ণা আক্তার পরাস্ত হলে, সাকিব আল হাসানের মতোই উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে শিশুটি। রাতারাতি ভাইরাল হওয়া সিনান হয়তো জানতো না, তার জন্য অপেক্ষা করছে নতুন চমক। সিনানকে বিস্ময় উপহার দিয়েছেন জাতীয় দলের উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহীম। খুদে এই ক্রিকেটার ও তার মায়ের সঙ্গে দেখা করেছেন মুশফিক, উপহার দিয়েছেন একটি জার্সিও। সংবাদমাধ্যমে মুশফিক জানতে পারেন, সিনানের প্রিয় ক্রিকেটার তিনি। তখনই সিদ্ধান্ত নেন দেখা করবেন সিনানের সঙ্গে। গতকাল রাজধানীর বনানীতে গিয়ে সিনানের সঙ্গে দেখা করে মুশফিক বলেন, ‘আমার খুবই ইচ্ছা ছিল ওর সঙ্গে দেখা করার। এটা ভেবে ভালো লাগে যে; সিনানের মতো অনেকে আমাদের অনুসরণ করে।’ বোরকা পরে ব্যাট হাতে ছেলের সঙ্গে ক্রিকেট খেলায় ‘কটু কথা’ শুনতে হয়েছে সিনানের মা ঝর্ণা আক্তারকে। শত বাধা-বিপত্তি এড়িয়ে ঝর্ণা আক্তারের এই প্রচেষ্টায় মুগ্ধ মুশফিক, ‘আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে, সিনানের মা এতো প্রতিবন্ধকতার পরেও ছেলের স্বপ্ন পূরণের আপ্রাণ চেষ্টা করছেন।’ ইয়ামিনের সঙ্গে মুশফিকুর রহীমকে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলতেও দেখা গেছে। সেখানে ইয়ামিন জানতে চায়, ‘আপনার মতো ক্রিকেটার হতে হলে কি করতে হবে?’ মুশফিক ইয়ামিনের চোখে এঁকে দিয়েছেন বড় ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন, যুগিয়েছেন উৎসাহ, ‘আমার মতো নয়; তুমি আমার চেয়ে বড় ক্রিকেটার হবে। বড় ক্রিকেটার হতে হলে তুমি এখন যে পরিশ্রম করে যাচ্ছো সেটা চালিয়ে যাও। অবশ্যই তোমার মধ্যে বড় ক্রিকেটার হওয়ার ইচ্ছা থাকতে হবে। তোমার মতো বয়সে আমি এত ভালো খেলতাম না।’ স্বপ্নের ক্রিকেটারের সাক্ষাৎ পেয়ে আপ্লুত সিনানও, ‘আমার স্বপ্ন ছিল মুশফিক ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করার। আল্লাহ্‌ আমার এই স্বপ্ন পূরণ করেছেন।’ এ সময়ে সিনানের মা ও বোন উপস্থিত ছিলেন। মুশফিকের কাছ থেকে এমন উপহার পেয়ে উচ্ছ্বসিত সিনানের মা ঝর্ণা আক্তার বলেন, ‘মুশফিকুর রহীম ভাই নিজের আগ্রহে আমাদের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছেন। এটা অন্য রকম অনুভূতি। তিনি এতো বড় একজন খেলোয়াড়। আমার ছেলে তাকে খুব পছন্দ করে ও অনুসরণ করে। তিনি এক জোড়া গ্লাভস, অটোগ্রাফসহ ব্যাট দিয়েছেন। উনার একটি জার্সিও দিয়েছেন। খুব ভালো লাগছে, আমার ছেলে খুব খুশি। কখনো কল্পনা করিনি আমার ছেলে মুশফিক ভাইকে এতো কাছ থেকে দেখবে।’ আরামবাগের এক মাদ্রাসায় চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে সিনান। ছেলেকে বড় ক্রিকেটার বানানোর স্বপ্ন দেখেন মা ঝর্ণা আক্তার, ‘ছেলেকে নিয়ে দু’টো স্বপ্ন দেখি। প্রথম স্বপ্ন, আমার ছেলে কোরআনে হাফেজ হবে। দ্বিতীয়, আমার ছেলে আন্তর্জাতিক খেলোয়াড় হবে, একদিন বাংলাদেশ দলের হয়ে খেলবে।’ পরিবার থেকেই খেলাধুলার প্রতি আগ্রহের সৃষ্টি হয় সিনানের। বিষয়টি বিস্তারিত জানিয়ে ঝর্ণা বেগম বলেন, আমাদের পরিবার ক্রীড়াপ্রেমী। ফুটবলার কাঞ্চন (জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার রোকনুজ্জামান কাঞ্চন) হচ্ছেন আমার ভাই। ফ্যামিলিটাই ক্রীড়া জগৎ। আমিও খেলোয়াড় ছিলাম। আমি অ্যাথলেটিক্স খেলতাম। ধানমন্ডি ক্রীড়াতে আমার ইভেন্ট ছিল জ্যাভলিন থ্রো, হাই জাম্প, লং জাম্প। ডিস্ট্রিক্ট চ্যাম্পিয়নও হয়েছিলাম। তাই আমি চাই, আমার ছেলে বড় খেলোয়াড় হোক।’ মা-ছেলের ক্রিকেট খেলা নিয়ে অনেকে সমালোচনা করলেও এসব আমলে নিচ্ছেন না ঝর্ণা আক্তার। তিনি বলেন, ‘একজন নারী যে সব পারে এ ছবিই সেটি প্রমাণ করে।’

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!
0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *