ডায়ালসিলেট ডেস্কঃঃ ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় দুই সন্তানের জননীর মৃত্যুর অভিযোগ এনে সিলেট নগরীর মাদার কেয়ার ক্লিনিকে বিশৃংখলার ঘটনা ঘটেছে। মৃতের বিক্ষুব্ধ স্বজনরা উপস্থিত হয়ে ক্লিনিক ঘেরাওয়ের চেষ্টা করেন। পরেসিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও ডা. সৈয়দা তৈয়বা বেগমের ‘ভুল চিকিৎসায়’ দুই সন্তানের জননীর মৃত্যু হয়েছে দাবি স্বামী আজির উদ্দিনের। মারা যাওয়া রোগীর নাম সুলতানা বেগম (২৮)। তিনি দক্ষিণ সুরমা উপজেলার সিলাম তেলিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা।
নিহতের স্বামী আজির উদ্দিন জানান, তার দু’টি ছেলে সন্তান রয়েছে। একজনের বয়স ১৩ ও অপরজনের ৮ বছর। তৃতীয় সন্তান নেয়ার প্রথম থেকেই গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. সৈয়দা তৈয়বা বেগমের তত্বাবধানে তার স্ত্রীর
চিকিৎসা করাচ্ছিলেন। বর্তমানে তার স্ত্রীর গর্ভের সন্তানের বয়স হয়েছিল ৬ মাস। এই অবস্থায় আজির উদ্দিন স্ত্রীর শারীরিক অবস্থার বিষয়ে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছিলেন ডাক্তার তৈয়বার সাথে।
এক মাস আগে ডা. তৈয়বা তার স্ত্রীকে চিকিৎসার জন্য সিলেট মাদার কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করান। সেখানে ৩ দিন থেকে ১২ হাজার টাকা বিল পরিশোধ করেন তিনি। পরবর্তীতে গত বুধবার তার স্ত্রীর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে ডা. তৈয়বার সাথে যোগাযোগ করেন। তখন তিনি মাদার কেয়ার হাসপাতালে পুনরায় ভর্তি হওয়ার জন্য বলেন। ভর্তি হওয়ার পরে ডাক্তার তৈয়বা বেশ কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষার পর বলেন, গর্ভের বাচ্চা সুস্থ আছে। কোনো সমস্যা হবে না বলে তিনি ইনজেকশন ও ওষুধ প্রদান করে সেবিকা (নার্স)-এর কাছে রোগী রেখে বাসায় চলে যান। এর কিছুক্ষণ পর রোগীর শারীরিক অবস্থার আরো অবনতি হয়। তখন রোগীর স্বামী ও দুই শিশু কান্নাকাটি করে নার্স ও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষকে ডাক্তার আনার জন্য বলার অনেকক্ষণ পর দায়িত্বরত নার্স ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ডা. তৈয়বাকে ফোন করেন। ডা. তৈয়বা আসেন তারও ঘণ্টাখানেক পরে।
তিনি এসে রোগীর স্বামী আজির উদ্দিনকে বলেন, বাচ্চা ভেতরে নষ্ট হয়ে গেছে এবং রোগীর প্রচুর রক্তপাত হচ্ছে। তাই দ্রুত ১২ থেকে ১৫ ব্যাগ রক্ত দিতে হবে। তাৎক্ষণিক রোগীর স্বামীসহ স্বজনরা ৫ ব্যাগ রক্ত প্রদান করেন। এর কিছুক্ষণ পর ডা. তৈয়বা বলেন, রোগীকে বাচাঁতে হলে ডিএনসি করতে হবে। আর তাতে প্রচুর টাকা লাগবে। রাত ৩ টার দিকে ডাক্তার তৈয়বা বলেন, রোগীর অবস্থা ভালো না। তার বাঁচার সম্ভাবনা ৪০ ভাগ। তাড়াতাড়ি অন্য কোনো হাসপাতালের আইসিইউতে নিতে হবে। তখন ডাক্তার তৈয়বা রক্তমাখা কাপড়ে রোগীকে নিয়ে নগরীর পার্ক ভিউ হাসপাতালে যান।
আজির উদ্দিন আরো জানান, পার্ক ভিউ হাসপাতালে যখন রোগীকে প্রেরণ করা হয়। তখন ডা. তৈয়বা চিকিৎসার কোনো কাগজ প্রদান করেননি। তিনি শুধু মাদার কেয়ার হাসপাতালের প্যাডে
কী লিখে দিয়েছিলেন। ফলে পার্কভিউ হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসকরা বার বার চিকিৎসার ফাইল খুঁজলে তা দেয়া সম্ভব হয়নি। তাছাড়া তার স্ত্রী মৃত্যুর পর বার বার চিকিৎসার কাগজপত্র চাইলেও ডা. তৈয়বা বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তা প্রদান করেননি।
শুক্রবার মৃতের স্বজনরা মাদার কেয়ার হাসপাতালে গিয়ে সুলতানা বেগমকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। এসময় বিশৃংখল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পরে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ঘটনাস্থলে পৌঁছে বিষয়টি উভয়পক্ষ বসে দেখার আশ্বাস দিলে স্বজনরা ফিরে যান।
এ বিষয়ে ডা. সৈয়দা তৈয়বা বেগমের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি। একপর্যায়ে মাদার কেয়ার ক্লিনিকের ম্যানেজারের মাধ্যমে তার সাথে যোগাযোগ করা হলে ফোন ওয়েটিংয়ে পেলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!
0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *