ডায়াল সিলেট ডেস্ক:-

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

‘কবি রজনীকান্ত সেনের কালজয়ী কবিতার সেই গর্বিত চড়ুই পাখির দিন আর নেই। আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকা ’পরে, তুমি কত কষ্ট পাও রোদ, বৃষ্টি, ঝড়ে’। সময়ের সঙ্গে পাল্টে গেছে সেই গর্বিত চড়ুই পাখির জীবনযাপন। এক সময় অট্টালিকার কার্নিশ, খড়ের চাল, মাটির দেয়ালে ছিল তাদের আনন্দের বাসা। তাদের সেই ‘মহাসুখের’ দিন আজ যেন শুধুই কবিতার পঙ্‌ক্তিতে বন্দি। এখন তাদের ঠাঁই হয়েছে বৈদ্যুতিক খুঁটি আর তারে। পাখিপ্রেমীরা বলছেন, নগরায়ণ ও গাছপালা কমে যাওয়ায় আশ্রয় হারিয়ে এসব পাখি এখন তারে ঠাঁই নিয়েছে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় চড়ুই সংরক্ষণে সচেতনতা জরুরি।

মৌলভীবাজার শহরের চৌমুহনা চত্বরে বৈদ্যুতিক খুঁটি আর তার এখন হাজারও চড়ুই পাখির আশ্রয়স্থল। সন্ধ্যা নামলেই ঝাঁকে ঝাঁকে এসে বসে তারা। তাদের কিচিরমিচির শব্দে পুরো এলাকা মুখরিত হয়ে ওঠে। ঘরমুখী মানুষ যখন ক্লান্ত, ঠিক তখনই ঝাঁক ঝাঁক পাখির এদিক-সেদিকে ওড়াউড়ি দেখে থেমে যান পথচারীরা। তাদের চোখ আটকে যায় শব্দমুখর সেই বৈদ্যুতিক খুঁটিতে। এমন দৃশ্য এক পলক দেখার লোভ সামলাতে পারেন না তারা।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এসব পাখি কোথা থেকে এসেছে কেউ জানেন না। প্রতিদিন সন্ধ্যায় পাখিগুলো দল বেঁধে বৈদ্যুতিক খুঁটিতে এসে বসে। আবার পরদিন ভোর হতেই চলে যায়।

শুক্রবার (৩ অক্টোবর) ছোট ছেলেকে নিয়ে চড়ুই পাখি দেখতে এসেছেন পূর্ব গির্জাপাড়ার বাসিন্দা মো. আরিফ। তিনি বলেন, ‘গত বুধবার সন্ধ্যায় এই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় এখানে কিচিরমিচির শব্দ শুনে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলাম। ছেলে পাখি খুব পছন্দ করে। তাই তাকে পাখি দেখানোর জন্য নিয়ে এসেছি।’

পাখিপ্রেমী শিমুল ভট্টাচার্য বলেন, এখানে এত এত চড়ুই একসঙ্গে কোলাহল করছে দেখতে ও শুনতে বেশ ভালো লাগছে।
ক্যামেরায় চড়ুই পাখির দৃশ্য ধারণ করছিলেন স্থানীয় কনটেন্ট ক্রিয়েটর আমির মিয়া। তিনি বলেন, ‘যত দিন যাচ্ছে চড়ুই পাখির সংখ্যা তত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাদের দেখার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে পাখিপ্রেমীরা সন্ধ্যার পর এখানে আসছেন। কয়েক দিন ধরে আমি চড়ুই পাখির নানান দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করছি।’

গভীর রাতে ওদের কিচিরমিচির ডাক আর এক তার থেকে অন্য তারে যাওয়ার দৃশ্য দেখতে খুবই ভালো লাগে বলে জানান নৈশপ্রহরী ফয়েজ মিয়া। তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘পাখিগুলো ভোরে আজানের পর খাবারের সন্ধানে বেরিয়ে যায়। আবার বিকেলে ফিরে আসতে শুরু করে। তখন পুরো এলাকা গুঞ্জন-কলরবে মুখর করে তোলে। এরা আমাদের অতিথি। তাই এদের কেউ বিরক্ত বা ঢিল মারতে চাইলে নিষেধ করি।’

স্থানীয় ব্যবসায়ী রিংকু মালাকার বলেন, তিন-চার মাস ধরে এখানে চড়ুইপাখিগুলো আসা শুরু করেছে। প্রতিদিন সন্ধ্যায় পাখিগুলো এখানে আসে, কিচিরমিচির শব্দ করে। খুব ভালো লাগে। মানুষজন আসেন পাখি দেখতে ও ছবি তুলতে। পাখিগুলোকে কেউ যেন বিরক্ত না করে, সেদিকে আমরা খেয়াল রাখি।

পরিবেশকর্মী আবদুর রব বলেন, নগরায়ণ, কীটনাশকের ব্যবহার, গাছপালা কমে যাওয়া, সব মিলিয়ে এই নিরীহ পাখিগুলো আজ আশ্রয়হীন। তাই চড়ুই পাখি বাধ্য হয়ে বৈদ্যুতিক তারে ঠাঁই নেয়। চড়ুই শুধু পাখি নয়, এটি আমাদের জীববৈচিত্র্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আমাদের প্রত্যেকের নিজেদের অবস্থান থেকে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) মৌলভীবাজার জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক শিব প্রসন্ন ভট্টাচার্য বলেন, চড়ুই পরিবেশবান্ধব। প্রকৃতিতে চড়ুইয়ের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। অসচেতনতার কারণে সেটা বুঝতে পারি না। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় প্রকৃতি থেকে চড়ুইয়ের বিলুপ্তি ঠেকাতে হবে। এরা বিভিন্ন ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে এবং ফুলের পরাগায়ন ঘটিয়ে আমাদের প্রকৃতির উপকার করে। এগুলোকে যেন বিরক্ত না করা হয়- এ বিষয়ে সচেষ্ট থাকতে হবে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *