ডায়াল সিলেট রিপোর্ট :: সিলেটে যুক্তরাজ্য প্রবাসী এক নারীর নির্যাতন-হয়রানির শিকার হচ্ছেন তারই মা, ভাই ও বোনসহ পরিবারের সকল সদস্য। পৈত্রিক সম্পত্তি পুরোটাই জবরদখলের উদ্দেশে তিনি পরিবারের লোকজনের সঙ্গে এমন অন্যায় আচরণ করছেন বলে সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ তুলেছেন ওই প্রবাসী নারীর দুলাভাই এনামুল হক চৌধুরী।
বুধবার দুপুরে সিলেট মহানগরের জেলরোডস্থ একটি রেস্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে আম্বরখানা বড়বাজার এলাকার ৫/এ বাসার মৃত আব্দুল খালিক চৌধুরীর ছেলে এনামুল হক চৌধুরী সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন- মহানগরের দর্শনদেউড়ি এলাকার পায়রা ৩৭/৩৮ নং বাসার মৃত আব্দুল মুকিত চৌধুরীর মেয়ে যুক্তরাজ্য প্রবাসী ইয়াসমীন চৌধুরী তার চাচাতো বোন ও শ্যালিকা। ইয়াসমিনরা ৪ বোন ও এক ভাই। মা জীবিত থাকলেও বাবা মৃত। ২০১২ সালে ইয়াসমিন ‘আমকারিজা ফাউন্ডেশন’ ও ‘লাভদেশ’ নামক দুটি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে সমাজসেবা এবং ব্যবসা শুরু করেন। এর সুবাধে তিনি ঘন ঘন দেশে আসা-যাওয়া করেন। ইয়াসমিন বেশিরভাগ সময় দেশে থাকছেন দেখে তার বড় বোন (এনামুল হক চৌধুরীর স্ত্রী) নাজমিন চৌধুরী তাকে পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া পায়রা ৩৭/৩৮ নং বাসা ও বিয়ানীবাজারের আলীনগর ইউনিয়নের ব্রাহ্মণগ্রামের বাড়ির জায়গা-সম্পত্তি দেখভালের দায়িত্ব দেন। কিন্তু ইয়াসমিন দেখভালের সুযোগ পেয়ে ২০১২ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত এই ৪ বছরে এসব জায়গায় থাকা দোকান ও বাসার ভাড়া বাবদ ৩৫ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেন। বিষয়টি জানতে পেরে ২০১৫ সালে ইয়াসমিনের মা রওশন আরা চৌধুরী দেশে এসে তার কাছে টাকার হিসাব চান। এসময় ইয়াসমিন কোনো হিসাব না দিয়ে মায়ের সঙ্গে চরম উদ্ব্যত্বপূর্ণ আচরণ করেন। এমনকি পুলিশ ডেনে এনে নিজের মাকে গ্রেফতার করানোর চেষ্টা করেন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি বুঝতে পেরে উল্টো ইয়াসমিনকে গ্রেফতার করতে প্রস্তুত হয়। তবে এসময় ইয়াসমিন ভয় পেয়ে অনেক কাকুতি-মিনতি করে আটক হওয়া থেকে রেহাই পান। পরে আইনিভাবে ফেঁসে যাওয়ার ভয়ে ২০১৫ সালের জুলাইয়ে যুক্তরাজ্য ফিরে যান ইয়াসমিন। তবে সেখানে গিয়ে তার অপকর্ম থেমে থাকেনি। ভিডিও ক্লিপের মাধ্যমে অনলাইনে বিভিন্ন মাধ্যমে পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাতে থাকেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে এনামুল হক চৌধুরী আরও বলেন- তার মরহুম শ্বশুরের রেখে যাওয়া কথা অনুযায়ী- তার (শ্বশুরের) সম্পত্তির মধ্যে থাকা দোকান ও বাসাভাড়ার এক তৃতীয়াংশ টাকা সহায়তা সংস্থায় (চ্যারিটি) প্রদান করতে হবে। কিন্তু কয়েক মাস আগে ইয়াসমিন দেশে আসে এবং দেশে অবস্থান করে পরিবারের সকলের জায়গা-সম্পত্তি জবরদখলের চেষ্টা এবং দোকান ও বাসা থেকে প্রাপ্ত সব ভাড়ার টাকা আত্মসাৎ শুরু করেন।
প্রবাসী এই নারী ‘অতি ন্যায়-নীতিহীন’ একজন নারী উল্লেখ করে এনামুল হক চৌধুরী বলেন- ইয়াসমিন যুক্তরাজ্যে নিজেকে পঙ্গু দাবি করে সম্পূর্ণ প্রতারণার মাধ্যমে সে দেশের সরকারের কাছ থেকে আলাদা সুবিধা নিচ্ছেন। এছাড়াও চ্যারিটি সংস্থা গড়ে তুলে গরিবদের সাহায্য করার নাম করে প্রচুর টাকা-পায়সা আত্মসাতে লিপ্ত আছেন। অপরদিকে, পৈত্রিক জায়গায় থাকা দোকান ও বাসাবাড়ির ভাড়াটেদের সঙ্গে ইয়াসমিন চরম উদ্ব্যত্বপূর্ণ আচরণ করেন সমসময়। অনেক সময় তার হাতে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন ভাড়াটেরা। এমনকি ঘরের কাজের মানুষেরাও তার নির্যাতনের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না। তার এমন আচরণের প্রতিবাদে বাসা ও দোকানের ভাড়াটেরা ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে মানববন্ধন এবং থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। সে অভিযোগের ভিত্তিতে ইয়াসমিনের সহযোগী রাহিনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
ইয়াসমিনের বড় বোনের স্বামী এনামুল হক চৌধুরী সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন- শ্যালিকার এমন কর্মকাণ্ডে তিনি প্রতিবাদী হলে গত ৪ ডিসেম্বর এনামুল হক চৌধুরীর বাসার সামনে গিয়ে ইয়াসমিন হট্টগোল করেন এবং তাকে হেয়প্রতিপন্ন করার চেষ্টা চালান। এ ঘটনা বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে লাইভ করিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করে এনামুল হকের মানহানির চেষ্টা করেন ইয়াসমিন।
বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন এনামুল হক চৌধুরী। এছাড়াও শীঘ্রই ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে পরিবারের সবাই সম্মিলিতভাবে আইনি পদক্ষেপ নিবেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান এনাম।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!
0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *