ডায়ালসিলেট ডেস্ক:প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেটের অধিকাংশ তরুণদের স্বপ্ন পূরণের অন্যতম পন্থা প্রবাস যাত্রা। সেক্ষেত্রে ইউরোপের আধিক্য বেশী দেখা যায়। আর এমন স্বপ্নের ইউরোপ যেতে ঝুঁকি নিচ্ছেন সিলেটের অনেক বেকার তরুণ। সেই ঝুঁিকতে প্রাণ হারাচ্ছেন অনেকে, হচ্ছেন নিখোঁজ। অনেকের পরিবার আজো জানেনা তারা কোথায় রয়েছেন।
এরকমই ঘটনা দীর্ঘ দশ মাস মুখ বুজে চেপে যাচ্ছেন সিলেটের ১৬ তরুণের পরিবার। গত বছরের ২২ ডিসেম্বর থেকে তারা নিখোঁজ রয়েছেন। নিখোঁজরা ইউরোপের জেলে রয়েছেন দালালের এমন আশ্বাসে দীর্ঘ ১০ মাস থেকে চুপ রয়েছে তাদের পরিবার।
জালালাবাদের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এসকল তরুণের পরিবারের আকুতি। অনেকে কথা বলতে না চাইলেও স্বীকার করেছেন । এতো তরুন একসাথে নিখোঁজের ঘটনা বিয়ানীবাজারে প্রথম। এর আগে বিচ্ছিন্নভাবে বিয়ানীবাজারের চার তরুণ প্রাণ হারায়। দীর্ঘ অনুসন্ধানে ১৬ তরুন নিখোঁজের খবর বের করা হয়েছে নিখোঁজ হওয়া তরুনদের মধ্যে যাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে তাদের মধ্যে, বিয়ানীবাজার উপজেলার লাউতা ইউনিয়নের উত্তর গাংপার গ্রামের মো: আব্দুল লতিফের পুত্র মো: আলতাফ হোসেন, কুড়ারবাজার ইউনিয়নের খশির চাতল গ্রামের মো: মিছবাউল হকের পুত্র মো: সুলতান মাহমুদ পলাশ, একই ইউনিয়নের আব্দুল্লাপুর গ্রামের মো: আছার উদ্দিনের পুত্র মোহাম্মদ জুবেল আহমদ, খশির গ্রামের ছয়দুর রহমানের পুত্র আবু তাহের, খশির নয়াবাড়ী গ্রামের সাইদুল হকের পুত্র মো: ওবায়দুল হক, মুড়িয়া ইউনিয়নের পশ্চিম ঘুঙ্গাদিয়া গ্রামের মিনাজ উদ্দিনের পুত্র মো: আবু সুফিয়ান, জকিগঞ্জ উপজেলার গড়র গ্রামের এমাদ উদ্দিনের পুত্র তোফায়েল আহমদ ও কানাইঘাট উপজেলার দাওয়াদারি গ্রামের ইমদাদ আহমদের পুত্র মোহাম্মদ জাকারিয়া আহমদ।

অনুসন্ধানে জানা যায়, গত বছরের বিভিন্ন সময় এইসব তরুণ ইউরোপের উদ্দেশে লিবিয়ায় পাড়ি জমান। ২০১৮ সালের ২২ ডিসেম্বর লিবিয়া থেকে ইতালির উদ্দ্যেশ্যে তারা নৌকায় উঠছেন বলে পরিবারকে ফোন দিয়ে জানান। এরপর থেকেই নিখোঁজ রয়েছেন সেসব তরুণ।এ ব্যাপারে নিখোঁজ যুবক আলতাফ হোসেনের পিতা লাউতা ইউপির সাবেক সদস্য আব্দুল লতিফের সাথে কথা বললে তিনি জানান, গত বছর জুলাই মাসে তার ছেলে ঢাকায় একটি কোম্পানির ট্রেনিংয়ে যাচ্ছে বলে বাড়ি থেকে বের হয়। ঢাকা থেকে সে পরিবারকে না বলেই মুড়িয়া ইউনিয়নের ঘুঙ্গাদিয়া নয়াগাও এলাকার স্থানীয় দালাল মুতি’র মাধ্যমে লিবিয়ায় পাড়ি জমায়। লিবিয়ায় প্রায় দুই মাস জিম্মি থাকে সে। তিনি ধার দেনা করে সাড়ে ৪ লক্ষ টাকার মাধ্যমে তাকে মুক্ত করেন। পরে সে লিবিয়ায় প্রায় তিন মাস অবস্থান করে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসের ২২ তারিখ বিয়ানীবাজারের আরো ১৪ তরুণের সাথে সে সাগরপথে ইতালী যাওয়ার জন্য নৌকায় উঠে। এরপর থেকে তারা নিখোঁজ রয়েছে।
তিনি জানান, তার ছেলেসহ আরো ১৬ তরুণ নিখোঁজের পর লিবিয়ায় থাকা বাংলাদেশী দালালও তাদের খোঁজ দিতে পারছে না। এখন পর্যন্ত কোনো খোঁজ না পাওয়ায় তারা শংকার মধ্যে রয়েছেন।
নিখোঁজ তরুন পলাশ মাহমুদের বাড়িতে গেলে প্রথমে প্রতিবেদকের সাথে তার পরিবার কথা বলতে না চাইলেও পরে তারা কথা বলেন। পলাশের বাবা-মা জানান, তাদের ছেলে গত বছর ২২ ডিসেম্বর শেষ কথা বলেছে, আর কোনো যোগাযোগ হয়নি। দালাল বলেছে তারা জীবিত, আফ্রিকার কোনো এক দেশে জেলে রয়েছে। তার কথার উপর বিশ্বাস করে এখোনো আমরা অপেক্ষায় রয়েছি। পলাশের মা জানান, উল্লেখিত সময়ে কোনো সংবাদ মাধ্যমে নৌকাডুবির কথা তারা শুনেননি। এ কারণেই তারা কাউকে না জানিয়েই দালালের কথা বিশ্বাস করেছেন। তারা তাদের সন্তানদের ফিরে পেতে লিবিয়াস্থ বাংলাদেশ দুতাবাসের সহযোগিতা চেয়েছেন।
প্রতিবেদকের সাথে কথা বলেন আরেক নিখোঁজ তরুন নয়াগাও এলাকার সুফির পিতা-মাতা। তারা বলেন, তাদের মতো প্রত্যেক পরিবার সহায়-সম্বল বিক্রি ও ঋণ নিয়ে ১৪ লক্ষ টাকা করে দালালদের দিয়েছে। এখন টাকাও নাই, পুত্রও নাই। একারণে অনেক কষ্ট নিয়ে দালালের কথা বিশ্বাস করে এখোনো পুত্রের অপেক্ষায়।
ভুক্তভোগী পরিবারদের কাছ থেকে দালালের ফোন নাম্বার সংগ্রহ করে ফোন করলে বন্ধ পাওয়া যায়।একসাথে এতো তরুণ নিখোঁজের ঘটনার ব্যাপারে কুড়ারবাজার ইউপির ৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মাছুম আহমদ বলেন, নিখোঁজের ঘটনা সত্য, আমরা এ ব্যাপারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করি।
এ ব্যাপারে কুড়ারবাজার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এএফএম আবু তাহের জানান, বিষয়টি আমরা অনেক আগে থেকে শুনছি। তবে এ ব্যাপারে কেউ আমাদের লিখিত অভিযোগ করেনি। ১০নং মুড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান আবুল খয়ের জানান, এ ব্যাপারে কেউ তাকে অবগত করেনি।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *