ডায়ালসিলেট ডেস্ক:কনসাস কনজ্যুমারস সোসাইটির সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক পলাশ মাহমুদ। ছবি: যুগান্তর

পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির কারণে ভোক্তার ক্ষতি হয়েছে ৩ হাজার ১৭৯ কোটি ৩৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা। গত চার মাসে দফায় দফায় দাম বাড়িয়ে এ অর্থ পকেটে তুলেছে সিন্ডিকেট। এ সময়ের মধ্যে ২৪ বার দাম ওঠানামা করেছে। ২ জুলাই থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত হিসাব করে এ তথ্য প্রকাশ করেছে কনসাস কনজ্যুমারস সোসাইটি। সংস্থাটির মতে, যে টাকা ভোক্তার পকেট থেকে কাটা গেছে তা দিয়ে আর একটি বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ সম্ভব। রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য দেয় কনসাস কনজ্যুমারস সোসাইটি।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, চার মাসের মধ্যে শুধু জুলাই মাসে ৩৯৭ কোটি ৬৭ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সিন্ডিকেট। আগস্টে ৪৯১ কোটি ৪৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা, সেপ্টেম্বরে ৮২৫ কোটি ২৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা, অক্টোবরে ১৪০০ কোটি ৯৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। গত চার মাসে মূল্য বেড়েছে ৪০০ গুণ। এতে ভোক্তার ক্ষতি হয়েছে ৩ হাজার ১৭৯ কোটি ৩৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ক্যাসিনোর মতো মূল্য সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে দ্রুত অভিযান পরিচালনাসহ চার দফা দাবি উপস্থাপন করা হয়।

সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক পলাশ মাহমুদ বলেন, ১ জুলাই পেঁয়াজের দাম ছিল ৩০ টাকা। ঈদুল আজহা সামনে রেখে মাত্র একদিনের (২ জুলাই) ব্যবধানে কেজিপ্রতি বেড়ে যায় ১৫ টাকা। এরপর থেকে নানা অজুহাতে বাড়তে থাকে দাম। বিক্রেতাদের অজুহাতের মধ্যে ছিল আমদানি খরচ বৃদ্ধি ও সরবরাহ কম। গত চার মাসে মোট ২৪ বার পেঁয়াজের দাম ওঠানামা করেছে। দেশের ১৮ কোটি ভোক্তা কিছু সিন্ডিকেটের কাছে বন্দি। ইতিমধ্যে চট্টগ্রামে ১৩ সদস্যের একটি সিন্ডিকেট শনাক্ত করা হয়েছে। চার মাসে বাণিজ্যমন্ত্রী অন্তত পাঁচবার স্বীকার করেছেন, সিন্ডিকেটের কারণে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু মন্ত্রী এটা স্বীকার করলেও সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। যা ভোক্তাদের হতাশ, ব্যথিত ও ক্ষুব্ধ করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কনসাস কনজ্যুমারস সোসাইটির দফতর সম্পাদক মো. শফিকুল ইসলাম এবং আউটরিপ ও কমিউনিকেশন প্রধান জয়কৃষ্ণ জয়।

তারা বলেন, পেঁয়াজের এ সিন্ডিকেটের কারণে শুধু ভোক্তারা নয়, সরকারও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সরকারের নানাবিধ উন্নয়ন প্রকল্প, দুর্নীতিবিরোধী অভিযান, চলমান ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের বিষয়ে যে সুনাম তৈরি হয়েছে এ সিন্ডিকেটের কারণে তা ম্লান হচ্ছে। বিভিন্ন দেশ থেকে গড়ে প্রতিদিন ৫০০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আসছে। যার ক্রয়মূল্য কেজিপ্রতি ২৬ থেকে ৪২ টাকা, গড়ে ৩৪ টাকা। সে হিসেবে বিদেশি পেঁয়াজের বিক্রয় মূল্য ৫০ টাকার বেশি হওয়া অস্বাভাবিক। কিন্তু খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি ১২০ থেকে ১৫০-১৬০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। দেশের ইতিহাসে এটাই সর্বোচ্চ দাম। এ কারণে নিত্যপণ্যটি এখন মানুষের ক্রয় ক্ষমতায় বাইরে চলে গেছে আর দরিদ্র মানুষের কাছে এটি দুর্লভ বস্তুতে পরিণত হয়েছে।

এ সময় সিন্ডিকেট থেকে ভোক্তাকে রক্ষায় ৪টি দাবি জানানো হয়। এগুলো হচ্ছে- ক্যাসিনোর মতো মূল্য সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে দ্রুত অভিযান পরিচালনা করা। এ ছাড়া অল্প সময়ের মধ্যে পেঁয়াজের মূল্য নির্ধারণ করা। যে কোনো পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি হলে সরকারের পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সর্বোচ্চ মূল্য ঘোষণা করা এবং ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে অংশীজনদের নিয়ে ভোক্তা অধিদফতরে একটি সেল গঠন ও সার্বক্ষণিক তদারকি করা।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *