ডায়ালসিলেট ডেস্ক:যারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে পরিশোধ করেন না, জালিয়াতির আশ্রয় নেন। যাদের কারণে ব্যাংকিং সেক্টর ধ্বংসের পথে। প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকার খেলাপি ঋণের বোঝা জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসে আছে, তাদের সুযোগ-সুবিধা দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক তথা সরকার খুব ব্যতিব্যস্ত। অথচ যেসব ভালো গ্রাহক বছরের পর বছর নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করে যাচ্ছেন, নানা প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করে দেশ ও জনগণের স্বার্থে একের পর এক শিল্প গড়ছেন- তাদের জন্য সরকারের যেন কোনো দায় নেই। রোববার যুগান্তরের কাছে এমন প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন কয়েকজন বিশ্লেষক।

তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট এবং ১০ বছরের জন্য পুনঃতফসিলের সুবিধা দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকারন্তরে ঋণখেলাপিদের পাশে দাঁড়িয়েছে। শুধু তাই নয়, তাদের ঋণের সুদ হার নির্ধারণ করা হয়েছে ৯ শতাংশ। কিন্তু যারা ভালো গ্রাহক তাদের সুদ গুনতে হয় ১২ থেকে ১৪ শতাংশ। এছাড়া প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা না দিয়ে উল্টো তাদের পদে পদে হেনস্তা করা হয়। তারা মনে করেন, বাস্তবে হওয়া দরকার, ঋণখেলাপিদের সম্পদ ক্রোক করে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা। বিপরীতে ভালো গ্রাহকদের ঋণের সুদ হার ৯ শতাংশ নির্ধারণ করাসহ ঋণ পরিশোধে নানামুখী প্যাকেজ সুবিধা প্রদান করা। তারা বলেন, কিন্তু এভাবে দ্বৈতনীতি চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে ভালো গ্রাহকরাও ঋণের কিস্তি পরিশোধে আগ্রহী হবেন না। তারাও খেলাপিদের সুবিধা পেতে চাইবেন। বাস্তবে সেটি ঘটলে পুরো ব্যাংকিং খাত আরও বিপদে পড়বে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ যুগান্তরকে জানান, সরকার এবং বাংলাদেশ ব্যাংক কেউ ভালো গ্রাহকদের প্রতি নজর দিচ্ছে না। সহজ করে বলা যায়, ভালো গ্রাহকদের পাশে নেই সরকার। তিনি বলেন, তাদের সব আয়োজন ঋণখেলাপিদের ঘিরে। যে কারণে খেলাপিদের বারবার সুবিধা দেয়া হচ্ছে। ইব্রাহিম খালেদ বলেন, বিশ্বের কোথাও এভাবে ঋণখেলাপিদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়া হয় না। চীন সরকার ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর। এতে তারা ভালো ফলও পাচ্ছে। তার মতে, একের পর এক এভাবে ঋণখেলাপিদের সুবিধা দিতে থাকলে একটা সময় পুরো ব্যাংকিং খাত খেলাপিনির্ভর হয়ে যাবে।

এ প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন যুগান্তরকে বলেন, ব্যাংকিং খাতে দুষ্টের দমন আর শিষ্টের লালন করতে হলে অবশ্যই ভালো গ্রাহকদের মূল্যায়ন করা উচিত। বিশেষ করে যারা নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করেন, ঋণখেলাপির খাতায় নাম নেই- এসব প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিকে সম্মান প্রদর্শন করতে হবে। প্রয়োজনে এ ধরনের সম্মানিত ব্যক্তিরা ব্যাংকে যাবেন না, ব্যাংক কর্মকর্তারা এদের বাসায় চলে আসবেন। সহজে ঋণ পাওয়ার ব্যবস্থা করবেন। এক কথায় ব্যাংকিং সেবা পেতে সব ধরনের জটিলতার ঊর্ধ্বে থাকবেন ভালো গ্রাহক। তা না হলে কোনো ভালো ঋণগ্রহীতা আর ভালো থাকবেন না। কারণ তাদের মাথায় তখন এ চিন্তা কাজ করবে যে, ঋণখেলাপিরা যদি পদে পদে সুবিধা পান, সম্মানিত হন, তাহলে আমিও ঋণখেলাপি হব।

সরকারের পরামর্শে ১৬ মে ঋণ পুনঃতফসিল ও এককালীন ঋণ শোধসংক্রান্ত বিশেষ নীতিমালা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাতে খেলাপি ঋণের মাত্র ২ শতাংশ জমা দিয়ে ১০ বছরের জন্য পুনঃতফসিলের সুবিধা দেয়া হয়। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সুদ হার ঠিক করে দেয়া হয় ৯ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের এ সংক্রান্ত সার্কুলার চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দাখিল করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। এ বিষয়ে দীর্ঘ শুনানি শেষে রোববার আদালত বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারকে বৈধ বলে আদেশ দেন। একইসঙ্গে সার্কুলারের মেয়াদ ৯০ দিন বাড়ানোর কথা বলা হয়।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *