সোহেল আহমদ ::  হলি আর্টিজান হামলা মামলার আসামির মাথায় থাকা আইএসের পতাকা সংবলিত টুপি রহস্যের কোনো কিনারা হয়নি। যেন ব্যর্থ হয়েছে বর্তমান ক্ষমতায় থাকা সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

কারাগারের কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে আসামির কাছে কীভাবে-কার মাধ্যমে পৌঁছালো এ টুপি? এমন প্রশ্ন দেখা দেয় দেশজুড়ে। অতি ষ্পর্শকাতর এই মামলায় আইএস টুপি প্রদর্শনে সুযোগ করে দেয়াকে ষড়যন্ত্র হিসেবেও দেখছেন অনেকে। ঘটনা তদন্তে গঠন করা কারা কর্তৃপক্ষের তদন্ত কমিটি রিপোর্ট জমা দিয়েছে। প্রতিবেদনটি জমা পড়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে কারাগার থেকে টুপি পায়নি জঙ্গিরা। অন্যদিকে গোয়েন্দা পুলিশের তদন্ত কমিটি রিপোর্ট না দিলেও শুরুতে বলা হয় কারাগার থেকেই টুপি নিয়ে আসে জঙ্গিরা। দুই কমিটি সূত্রের ভিন্ন বক্তব্য নিয়েও রহস্য দেখা দিয়েছে।

 

গত ২৭শে নভেম্বর চাঞ্চল্যকর হলি আর্টিজান মামলার রায়ের দিনে আদালত চত্বরে জঙ্গি রাকিবুল হাসান রিগ্যানের মাথায় দেখা যায় আইএস’র পতাকা সম্বলিত টুপি। একই টুপি দেখা যায় আরেক আসামি জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধীর মাথায়।

 

প্রশ্ন দেখা দেয় নিরাপত্তা নিয়ে। কারাগার থেকে আদালতে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে জঙ্গি আসামিদের  কিভাবে তাদের মাথায় আইএস টুপি এলো। ওই দিনই কারা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক কর্নেল আবরার হোসেনের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, ৩১শে জনের সাক্ষ্য সংবলিত ২০ পৃষ্ঠার ওই তদন্ত প্রতিবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে গতকাল জমা দেয়া হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, কারা অধিদপ্তরের ভিডিও ফুটেজ, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও কারারক্ষিদের বক্তব্য পর্যালোচনা করে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে আইএস’র পতাকা সম্বলিত টুপিটি কারাগার থেকে সংগৃহিত হয়নি।

 

এদিকে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কেরানীগঞ্জ থেকে কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক রোকন উদ্দীন মোল্লার নেতৃত্বে রায়ের দিন একটি দল ওই মামলার আট আসামিকে আদালতে হাজির করেন। সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে আট আসামিকে কারাগারের প্রধান ফটকে আনা হয়। ওই সময় তাদের তল্লাশি করে প্রিজন ভ্যানে উঠানো হয়। আসামিদের চার জনকে হ্যান্ডকাপ পড়ায় পুলিশ। তবে আসামিদের কাউকেই বুলেট প্রুফ জ্যাকেট পড়ানো হয়নি। আদালতে রায় ঘোষণার পর বেলা ১টা ২০ মিনিটে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে আসামিদের বুঝিয়ে দেয়া হয়।

 

একই ঘটনায় ভিন্ন বক্তব্য পুলিশের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের যুগ্ম কমিশনার মাহবুবুল আলম সাংবাদিকদের জানান, কারাগার থেকেই পকেটে করে টুপিটি এনেছিলো রাকিবুল। সিসি টিভির ফুটেজ দেখে ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, পরবর্তীতে আদালতের হাজতখানা থেকে মাথায় টুপি পরে বের হয় এই জঙ্গি। সেই টুপিই এজলাস থেকে বের হওয়ার সময় সে উল্টিয়ে পড়েছিলো। রায় শেষে জঙ্গি রাকিবুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে পুলিশকে জানিয়েছে, টুপিটি কারাগার থেকে এনেছে।

 

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ১লা জুলাই হলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে। বাংলাদেশের ইতিহাসে  প্রথম এরকম কোন হামলার ঘটনা ঘটে। চাঞ্চল্যকর এই জঙ্গি হামলা মামলার রায় ঘোষণা করা হয় গত ২৭শে নভেম্বর। রায়ে সাত জঙ্গির মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন আদালত।

 

হলি আর্টিজান মামলায় দুই আসামির মাথায় আইএসের চিহ্ন সম্বলিত টুপি কীভাবে এল আইনজীবীর এমন বক্তব্যে হাইকোর্ট বিষ্ময় প্রকাশ করে বলেন, সর্ষের ভেতরে ভূত। গতকাল আইন ও সালিশ কেন্দ্রের এক মামলার শুনানিতে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বিষয়টি নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে এমন মন্তব্য করেন।

 

কিন্তু আইএস জঙ্গিরা কোথা থেকে এই টুপিটি পেল তা রহস্যই রয়ে গেল। এ সম্পর্কে র্র্যাব , আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতা নাকি সরকারের ব্যর্থতা প্রকাশ পায়। এতবড় ঘটনার যেন নেই কারো কাছে উত্তর।

 

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *