নুসরাত জাহান :: আজ (২৫ জানুয়ারি ২০২০) অর্থনীতিবিদ, কূটনীতিক, ভাষা সৈনিক ও মুক্তিযোদ্ধা ও সদ্য সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ৮৭তম জন্মদিন ।
১৯৩৪ সালের ২৫ জানুয়ারি সিলেটের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। আবুল মাল আবদুল মুহিতের বাবার নাম আবু আহমদ আবদুল হাফিজ। মা সৈয়দা শাহার বানু চৌধুরীও রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। আবুল মাল আবদুল মুহিতের স্ত্রী সৈয়দা সাবিয়া মুহিত একজন ডিজাইনার। তিনি দুই ছেলে ও এক মেয়ের জনক।
দীর্ঘ ১০ বছর তিনি বাংলাদেশ সরকারের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। এসময় আর্থিকখাতে অসামান্য উন্নতি সাধন হয়। বর্তমানে তিনি অবসর জীবন যাপন করলেও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
মুহিত ছাত্রজীবনে অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। তিনি সিলেট এমসি কলেজ থেকে ১৯৫১ সালে আইএ পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেন। ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে বিএ (অনার্স) পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম এবং একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৫ সালে কৃতিত্বের সঙ্গে এমএ পাশ করেন।
তিনি সলিমুল্ল্যাহ মুসলিম হল সংসদের নির্বাচিত সহসভাপতি ছিলেন। ভাষা আন্দোলনে জেল খেটেছেন। চাকরিরত অবস্থায় তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নসহ হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমপিএ ডিগ্রি লাভ করেন।
ওয়াশিংটন দূতাবাসের তিনি প্রথম কূটনীতিক, যিনি ১৯৭১ সালের জুনে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করেন এবং যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
১৯৭২ সালে ১ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে আসেন মুহিত। আসার আগেই তার নিয়োগ হয়েছিল পরিকল্পনা সচিব হিসেবে। ১৯৭৭ সালে অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বহির্সম্পদ বিভাগে সচিব পদে নিযুক্ত হন। ১৯৮১ সালে চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অবসরে গিয়ে ‘অর্থনীতি ও উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ হিসেবে’ কাজ শুরু করেন ফোর্ড ফাউন্ডেশন ও আইএফএডি-তে।
১৯৭২ সালে এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ মিশনে চলে যান। আমেরিকা বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিলে বাংলাদেশ মিশন হয়ে গেল বাংলাদেশ দূতাবাস। মুহিত সেখানে অর্থনৈতিক মিনিস্টার থাকেন দুই বছরের মত। এই সময়ে ১৯৭২ সালে বেশ কিছুদিন তিনি ছিলেন চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার।
১৯৭৩ সালে সেপ্টেম্বরে সপরিবারে ঢাকায় ফিরে আসেন। পরিবারের জন্য এই ছিল স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম পদার্পণ।
১৯৮২-৮৩ সালে তখনকার এইচ এম এরশাদ সরকারের সময়ে প্রথমবারের মতো অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রীর দায়িত্বে আসেন মুহিত। দীর্ঘদিন বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পরামর্শক হিসেবে কাজ করার পর দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হন তিনি।
মুহিত ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি বাংলাদেশ সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান। বর্তমান সরকারেরও অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন বিশিষ্ট এই অর্থনীতিবিদ। মোট ১১ বার ও টানা নয়বার বাংলাদেশের বাজেট ঘোষণা করার রেকর্ড রয়েছে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মুহিতের।
আবুল মাল আবদুল মুহিত লেখক হিসেবেও সমান পারদর্শী। মুক্তিযুদ্ধ, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, ইতিহাস, জনপ্রশাসন এবং রাজনীতি নিয়ে ৩০টির অধিক বই লিখেছেন মুহিত।
তিনি ২০১৬ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে অনন্য ভূমিকা রাখার স্বীকৃতি হিসেবে ‘স্বাধীনতা পদক’ পান।
তিনি বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি) ও জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থায় কাজ করেছেন।
স্ত্রী সৈয়দ সাবিয়া মুহিত একজন ডিজাইনার। তাদের তিন সন্তানের মধ্যে প্রথম কন্যা সামিনা মুহিত ব্যাংকার ও আর্থিক খাতের বিশেষজ্ঞ। বড় ছেলে সাহেদ মুহিত বাস্তুকলাবিদ এবং ছোট ছেলে সামির মুহিত শিক্ষকতা করেন।