বাংলা ট্রিবিউন ও ঢাকা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি আরিফুল ইসলাম রিগানকে মোবাইল কোর্টে সাজা দেওয়ার দায়িত্ব এখন কেউ নিচ্ছে না। কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন দাবি করেছেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কথামতো মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক আবু জাফর বলছেন, তারা কোনও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেননি। এদিকে ঘটনার সময় থেকেই পুলিশ জানিয়েছে, তারা কোনও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেনি। বরং নিরাপত্তা সাহায্যের জন্য আরিফের ফোন পেয়ে কুড়িগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) উৎপল রায় ও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজার রহমান দ্রুত তার বাড়িতে যান। পরে বিষয়টি র‌্যাবকেও জানান তারা।

জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কুড়িগ্রাম মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের অনুরোধে আমার কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমার নেতৃত্বে পুলিশের ছয় জন, আনসারের পাঁচ জন এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের তিনজন সদস্য মিলে সাংবাদিক আরিফুল ইসলামের বাসায় মোবাইল কোর্টের অভিযানে গেছে। ওই সাংবাদিককে (আরিফ)নিয়ে মোবাইল কোর্ট করার আমার কোনও ঠেকা পড়েনি।’

এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম সদর সার্কেলের দায়িত্বে থাকা সহকারী পুলিশ সুপার উৎপল রায় বলেন, ‘আরিফুল ইসলাম রিগানের মোবাইল কল পেয়ে আমরা দ্রুত তার বাড়িতে ছুটে যাই। আমরা গিয়ে দেখি, বাড়ির গেট ও বাসার গেট ভেঙে ঢুকে তাকে তুলে নিয়ে গেছে। তাকে ট্রেস করার জন্য চারদিকে পুলিশের মোবাইল টিমকে আমরা বলি। রংপুর র‌্যাব-১৩ ও লালমনিরহাট পুলিশকে অবহিত করা হয়। কারণ বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত ছিল। আমাদের আশঙ্কাও ছিল। আমরা খুঁজতে খুঁজতে গিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সামনে দুটি গাড়ি দেখতে পেয়ে সেখানে যাই। তিনজন ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে দেখা হয়। কথা বলে জানতে পারি, আরিফুল ইসলামকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তার অপরাধ কী জানতে চাইলে, তারা জানায়, দেড়শ গ্রাম গাঁজা ও অর্ধেক বোতল মদ পাওয়া গেছে। পরে আমরা সেখান থেকে চলে আসি।’

এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘কুড়িগ্রাম সদর থানায় আরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে কোনও জিডি, অভিযোগ কিংবা কোনও মামলা নেই। ব্যক্তিগতভাবে তাকে আমরা একজন ভালো মানুষ হিসেবে চিনি ও জানি। কিন্তু কেন এমন হয়েছে, তা আমরা বুঝতে পারছি না।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে এএসপি উৎপল রায় বলেন, ‘ডিসি অফিস মোবাইল টিম বা টাস্কফোর্স করার জন্য চিঠি দিয়ে থাকে। সেই আলোকে আমরা নিয়মিত পুলিশ দিয়ে থাকি। কিন্তু এই ঘটনা সম্পর্কে আমাদের সিনিয়র কেউই কোনও কিছু জানতেন না। আপনারা ভালো করে খোঁজখবর নিয়ে দেখতে পারেন।’

এদিকে, শনিবার সন্ধ্যার পর ওই বাড়িতে খোঁজখবর নিতে যান কুড়িগ্রাম পৌর মেয়র আবদুল জলিল। এ সময় তিনি জানান, নিয়মানুযায়ী মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে মেয়রের অনুমতির প্রয়োজন হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে তাকে কিছু অবহিত করা হয়নি। সাংবাদিক আরিফ তার জানা মতে কোনও অনৈতিক কাজের সঙ্গে জড়িত নয় বলে জানান তিনি।

উল্লেখ্য, শুক্রবার (১৩ মার্চ) মধ্যরাতে বাড়িতে হানা দিয়ে ধরে নিয়ে সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে এক বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন জেলা প্রশাসনের মোবাইল কোর্ট। এ সময় তার বিরুদ্ধে আধা বোতল মদ ও দেড়শ’ গ্রাম গাঁজা পাওয়া গেছে বলে অভিযোগ তোলা হয়, যদিও আরিফ অধূমপায়ী। আরিফের স্ত্রী জানান, মধ্যরাতে কিছু আগন্তুক তাদের বাসায় এসে দরজা ধাক্কাতে থাকেন ও দরজা খুলতে বলেন। আরিফ তাদের পরিচয় জানতে চাইলে তারা পরিচয় দেননি। এরপর আরিফ কুড়িগ্রাম থানায় যোগাযোগ করলে থানা কর্তৃপক্ষ তার বাসায় কোনও অভিযান চালানো হয়নি বলে নিশ্চিত করে। এরমধ্যেই আগন্তুকরা দরজা ভেঙে তার বাসায় প্রবেশ করে। তবে তারা কোনও তল্লাশি অভিযান চালায়নি। তারা বাসায় ঢুকেই কোনও কারণ না জানিয়ে আরিফকে মারতে মারতে তুলে নিয়ে যায়। এ সময় কয়েকবার গুলি করার হুমকিও দেয় আগন্তুকরা। এর এক ঘণ্টা পর থানা পুলিশ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে তাকে খুঁজে পায়।

:: বাংলা ট্রিবিউন ::

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *