আর্ন্তজাতিক ডেস্ক ::   করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে একটা ভুল ধারণা তৈরি হয়ে গিয়েছিল। সেটাকে নভেল করোনাভাইরাসের উপযোগী করে তুলতে খুব সময় লাগেনি। তাই অক্সফোর্ডে তৈরি কোভিড প্রতিরোধে প্রস্তাবিত প্রতিষেধকটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পাশ করার দৌড়ে অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে। স্বাভাবিক নিয়মেই ট্রায়াল পর্ব পার করে তা হয়তো বাজারেও আসবে অন্যদের চেয়ে ঢের আগে। তাতে আশার আলোই দেখছেন চিকিৎসকমহল। কলকাতার একটা বড় অংশের চিকিৎসক অবশ্য তাকিয়ে ভারতের নিজস্ব প্রতিষেধকের দিকেই।

আইসিএমআরের সঙ্গে মিলে ভারত বায়োটেক তৈরি করছে সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তির ভ্যাকসিন। সপ্তাহ দু’য়েক হল কোভ্যাক্সিন নামের সেই প্রস্তাবিত প্রতিষেধকের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের ঘোর অত্যুৎসাহের পরেও দু’পর্বের ট্রায়াল উতরে বছরখানেকের আগে সেটির বাজারে আসার সম্ভাবনা অবশ্য ক্ষীণ। কিন্তু যেহেতু সেই প্রতিষেধক তৈরির চেষ্টাটা হচ্ছে নভেল করোনাভাইরাসের ভারতে হামলাকারী স্ট্রেনগুলি থেকে, তাই কোভ্যাক্সিনের উপযোগিতা ও কার্যকারিতা নিয়ে বেশি আশাবাদী এখানকার চিকিৎসকেরা।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানান, অক্সফোর্ডে যে প্রতিষেধকটি তৈরির কাজ চলছে, সারা গিলবার্টের হাত ধরে তার শুরুটা হয়েছিল অনেক আগেই। মিডল ইস্ট রেসপিরেটরি সিন্ড্রোম বা মার্স মহামারীর জীবাণুও আদতে করোনাভাইরাস। তার উত্তরসূরি নভেল করোনাভাইরাস এখন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে দুনিয়াজুড়ে। গিলবার্ট মার্সের প্রতিষেধক তৈরির কাজ প্রায় সেরে ফেলেছিলেন চ্যাডক্স জীবাণু ব্যবহার করে। এই জীবাণুটি যে অ্যান্টিবডি তৈরি করে মানবশরীরে, তা সুরক্ষা দেয় মার্সে। সেই প্রতিষেধকে সামান্য অদল-বদল করে চ্যাডক্স-১ জীবাণুর সাহায্যেই তৈরি করা হয়েছে কোভিডের ভ্যাকসিনটি।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক উচ্ছ্বলকুমার ভদ্র বলেন, দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি বলে কোভ্যাক্সিনের দাম ও জোগান যে অক্সফোর্ডের তৈরি প্রতিষেধকের চেয়ে ভারতীয় জনতার জন্য বেশি উপযোগী হবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তা ছাড়া, সেটির কার্যকারিতাও আরও ভালো হবে বলে বিশ্বাস। চিত্তরঞ্জন শিশুসদনের পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের প্রধান চিকিৎসক সুমন সরকারের গলাতেও এক সুর।

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের শিক্ষক-চিকিৎসক সৌগত ঘোষ বলেন, অক্সফোর্ডের তৈরি প্রতিষেধকটি পরোক্ষ পদ্ধতিতে সুরক্ষা দেবে। চ্যাডক্সকে জিনগত ভাবে বদলে এমন একটা জীবাণু তৈরি করা হয়েছে যা শরীরে ঢোকার পর যে অ্যান্টিবডি তৈরি করে, তা করোনাকেও আটকায়। কিন্তু ভারতীয় কোভ্যাক্সিন নভেল করোনাভাইরাস ব্যবহার করেই তৈরি। শুধু তা-ই নয়, চিন কিংবা ইউরোপ-আমেরিকায় দাপিয়ে বেড়ানো নভেল করোনাভাইরাস এ ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়নি।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *