ডায়ালসিলেট ডেস্ক::দেশের মেধাবী ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বাঁচাতে মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে গোলাপগঞ্জ মডেল থানা পুলিশ৷ গত দুইমাসে উপজেলায় প্রায় ১ কোটি টাকার মাদক জব্দ ও চোরাই পণ্য জব্দসহ ১৪ জন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে গোলাপগঞ্জ মডেল থানা পুলিশ।

গোলাপগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বদলী হলে গত ২৫ জুন গোলাপগঞ্জ মডেল থানায় নতুন ওসি হিসেবে যোগদান করেন মোহাম্মদ হারুনুর রশীদ চৌধুরী। হারুনুর রশিদ চৌধুরী যোগদানের পরই তিনি গোলাপগঞ্জ উপজেলাকে মাদকমুক্ত করে জিরো টলারেন্সে নিয়ে আসার কথা ঘোষণা করেন।

তিনি আরোও বলেন আমাদের ভবিষ্যৎ মেধাকে রক্ষা করতে মাদক দমন করতেই হবে। মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশ সর্বত্র অভিযান পরিচালনা করছে এবং এটা সবসময় চলবে। জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের মতো মাদক ব্যবসায়ী এবং তাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে একসঙ্গে কাজ করার কথাও জানান তিনি।

গোলাপগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে শুরু করেন মাদক বিরোধী অভিযানে পরামর্শ ও সহযোগিতার করেন সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, গোলাপগঞ্জ সার্কেল রাশেদুল হক চৌধুরী।

তিনি বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধিতে সর্বত্র প্রচারণাসহ যা যা করা দরকার সবকিছু করা হবে। পাশাপাশি অভিযান চলবে। জনগণকে সম্পৃক্ত করে যে কোনো মূল্যে মাদকের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াব।

পুলিশ সূত্রে জানাযায়, গত ১আগস্ট রাতে ভারত থেকে অবৈধ ভাবে নিয়ে আসা বড় একটি মোবাইলের চালান জব্দ করে পুলিশ। এদিন রাতে একটি চক্র সিলেটের সীমান্তবর্তী তামাবিল থেকে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে ভারত থেকে মোবাইল ফোনের একটি বড় চালান নিয়ে উপজেলার বাঘা ইউনিয়নে প্রবেশ করে।

এসময় এলাকাবাসীর সন্দেহ হলে চোরাকারবারিদের গাড়িটি বাঘার আব্দুল আহাদ উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের সামনে আটকিয়ে রাখা হয়। এসময় ৪ চোরাকারবারির সদস্য পালিয়ে যায়। পরে এলাকাবাসী গোলাপগঞ্জ থানা পুলিশকে অবগত করলে পুলিশ নোহা গাড়ি ও ৩১৬টি মোবাইল জব্দ করে থানায় নিয়ে আসে।

পুলিশের জব্দকৃত নোহা গাড়ির মূল্য প্রায় সাড়ে ৭লক্ষ টাকা ও ভারত থেকে অবৈধ ভাবে আনা ৩১৬ টি মোবাইলের মূল্য প্রায় ৬১লক্ষ ৪০হাজার টাকা বলে জানায় পুলিশ। এ ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে পুলিশ একটি মামলা দায়ের করে। মামলা নং-০৪/০৩-০৮-২০২০ইংরেজি।

এছাড়াও উপজেলার কোনাচর বাজার ও ধারাবহর থেকে পৃথক দুটি অভিযান চালিয়ে জুয়া খেলার টাকা ও সরঞ্জাম সহ ১৩ জুয়াড়িকে আটক করা হয়।

এদিকে, গত দুই মাসে গোলাপগঞ্জ উপজেলায় মাদকবিরোধী অভিযান চালিয়ে পুলিশ ৪৫১ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট ও ২ কেজি ৩শ গ্রাম গাঁজা, ৫ বোতল বিদেশি মদ, আমদানি নিষিদ্ধ ভারতীয় ২১ হাজার শলাকা বিড়ি জব্দ করা হয়। এসব অভিযানে ১৪জন মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়।

জানা যায়, গত ৩ জুলাই রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গোলাপগঞ্জ মডেল থানার এসআই (নিরস্ত্র) জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে একদল পুলিশ পৌর এলাকার টিকরবাড়ি গ্রামে অভিযান চালিয়ে ৫০০গ্রাম গাজাসহ পৌরসভার টিকরবাড়ী এলাকার মৃত আব্দুস ছাত্তারের ছেলে সুলেমান মিয়া (৫০) নামে এক মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা (মামলা নং-০৩/ ০৪/০৭/২০২০ইং) দায়ের করে।

গত ৮ জুলাই বিকেলে পুলিশ জানতে পারে যে জকিগঞ্জ থেকে সিলেটগামী রাস্তার দিয়ে সিএনজি করে একজন ব্যক্তি ইয়াবা ট্যাবলেট নিয়ে যাবার সময় গোলাপগঞ্জ মডেল থানার এসআই মোঃ জুনেদ আহমদের নেতৃত্বে একদল পুলিশ কদমতলীস্থ সিলেট -জকিগঞ্জ সড়কে চেকপোষ্ট করাকালীন উপজেলার ফুলবাড়ি ইউনিয়নের রফিপুর গ্রামের আব্দুল হান্নানের পুত্র ফারুক আহমদ (৩৫) কে ২০১ পিস ইয়াবাসহ আটক করেন।। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্র আইনে একটি মামলা (মামলা নং-০৭-তারিখ-০৮/০৭/২০২০ইং) দায়ের করেছে।

গত ১২জুলাই দুপুর আড়াইটার দিকে গোলাপগঞ্জ থানার এস আই আশীষ চন্দ্র তালুকদারের নেতৃত্বে উপজেলার লক্ষীপাশা ইউনিয়নের পুরকায়স্থ বাজার থেকে আমদানি নিষিদ্ধ ভারতীয় ২১ হাজার শলাকা নাসির বিড়ি ও নগদ ৪০ হাজার ১ শত টাকা সহ আবজাল হুসেন (৩৮) নামের এক মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করে পুলিশ।

গত ১৩ জুলাই রাত সাড়ে ১১টায় উপজেলার ফুলবাড়ি ইউনিয়নের টিকরপাড়া গ্রামে গোলাপগঞ্জ মডেল থানার এসআই জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে একদ পুলিশ অভিযান চালিয়ে ইয়াবা বিক্রির সময় দুজন মাদক ব্যবসায়ীকে হাতে নাতে আটক করা হয়। এ সময় তাদের দেহ তল্লাশি করে ১০৫ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।

আটককৃতরা হলেন- উপজেলার ফুলবাড়ি ইউনিয়নের টিকরপাড়া গ্রামের মৃত কুতুব আলীর পুত্র ইসলাম উদ্দিন (৫০), ময়মনসিংহের গৌরিপুর থানার ছিনচাপুর গ্রামের মো. আব্দুস সালামের পুত্র মো.নজরুল ইসলাম(৩৮), বর্তমানে সে পৌর এলাকার দাঁড়িপাতন গ্রামে বসবাস করছে। তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন আইনে একটি মামলা (মামলা নং-১৬, তারিখ-১৪-০৭-২০২০ইংরেজি) দায়ের করা হয়।

গত ১৭ জুলাই রাতে গোলাপগঞ্জ মডেল থানার এসআই ফয়জুল করিমের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ফুলবাড়ি ইউনিয়নের হাজীপুর এওলাটিকর গ্রামের নুর উদ্দিন’র কলোনীর সামনের পাকা রাস্তার থেকে মাদক ব্যবসায়ী গোলাপগঞ্জ পৌরসভার দাড়িপাতন গ্রামের মৃত সোয়াব আলীর পুত্র মোঃ জসিম উদ্দিন (৩১) কে আটক করা হয়। এসময় তার শরীর তল্লায় করে ৩০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়। তার বিরুদ্ধে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন আইনে একটি মামলা (মামলা নং-২০, তারিখ-১৭/০৭/২০২০ খ্রিঃ) দায়ের করা হয়েছে।

গত ১৮জুলাই রাতে উপজেলার ঢাকাদক্ষিণ ইউনিয়নের দত্তরাইল পুরাতন সরকারি হাসপাতালের কাছ থেকে ৫শ’গ্রাম গাঁজাসহ উপজেলার দত্তরাইল গ্রামের মৃত মখদ্দছ আলীর ছেলে কছন আলী (৫৭) নামের এক মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করে পুলিশ। তার বিরুদ্ধেও পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করে।

গত ২১ জুলাই রাত ৯টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গোলাপগঞ্জ মডেল থানার উপ-পরিদর্শক খান জালাল উদ্দিনের নেতৃত্বে পৌর এলাকার রনকেলী উত্তর গ্রামের মৃত হারুনুর রশিদের ছেলে মাদক সম্রাট জামিল আহমদ (৪২) কে গ্রেপ্তার করে । এসময় তার কাছ থেকে ৫১পিছ ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়। তার বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন আইনে একটি মামলা (নং-২৭/২১.০৭.২০২০) দায়ের করে।

গত ২৩ জুলাই বৃহস্পতিবার রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গোলাপগঞ্জ মডেল থানার এসআই একলাছ মিয়ার নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে উপজেলার ফুলবাড়ি ইউনিয়নের এওলাটিকর জামে মসজিদের পাশে সিলেট-জকিগঞ্জ সড়ক থেকে উপজেলার মোল্লাগ্রাম এলাকার মৃত হারিছ আলীর পুত্র আইনুদ্দীন নামের এক মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়। এসময় তার কাছ থেকে ১০৪ পিস ইয়াবাসহ ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়। তার বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন আইনে একটি মামলা (মামলা নং-২৯, তারিখ-২৩-০৭-২০২০ইং) দায়ের করেছে।

২৪ জুলাই গোলাপগঞ্জ মডেল থানার উপ-পরিদর্শক ফয়জুল করিম এর নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনা করে উপজেলার হেতিমগঞ্জ পূর্বপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুর রহিমের ছেলে মাদক ব্যবসায়ী দিলোয়ার হোসেন (৪২) কে গ্রেফতার করা হয়। এসময় তার কাছ থেকে ৫০০ (পাঁচশত) গ্রাম গাঁজা উদ্ধার করা হয়। পরে তার বিরুদ্ধে গোলাপগঞ্জ মডেল থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা (নং৩১/২৪.০৭.২০২০) দায়ের কর পুলিশ।

২৬ জুলাই রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এসআই জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনা করে উপজেলার চন্দরপুর গ্রামের মৃত জমির উদ্দিনের ছেলে মাদক ব্যবসায়ী শরফ উদ্দিন (৪৫) কে আটক করা হয় । এসময় তার কাছ থেকে ৩০০ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার করে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন আইনে একটি মামলা (নং-৩৪, তারিখ-২৬/০৭/২০২০) দায়ের করা হয়েছে।

২৭ জুলাই রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বাদেপাশা ইউনিয়নে অভিযান চালিয়ে ৫ বোতল ভারতীয় মদসহ ২জনকে আটক করে গোলাপগঞ্জ মডেল থানা পুলিশ। আটককৃতরা হল, উপজেলার বাদেপাশা ইউনিয়নের বাগলা ছালিকোনা গ্রামের মৃত আব্দুল লতিফের ছেলে রাজু মিয়া (৪৫) ও একই ইউনিয়নের মোল্লারচক গ্রামের ললাই মিয়ার ছেলে আল আমিন (১৯)। আটককৃতদের বিরুদ্ধে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা (মামলা নং-৩৫, তারিখ-২৮/০৭/২০২০ খ্রিঃ) দায়ের করা হয়।

১০ আগস্ট রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ বাঘায় অভিযান চালিয়ে নিজ বাড়ি থেকে বাঘা ইউনিয়নের খালপার গ্রামের শওকত আলীর স্ত্রী রোকসানা বেগম (১৮) কে ৫শ গ্রাম গাঁজাসহ আটক করে। তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা (মামলা নং- ১৩, তারিখ- ১০/০৮/২০২০) দায়ের করা হয়েছে।

গোলাপগঞ্জ মডেল থানার অফিসার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ হারুনুর রশীদ চৌধুরী বলেন, গত দুইমাসের সাফল্যে ধরে রাখতে গোলাপগঞ্জ উপজেলাকে মাদকমুক্ত করতে পুলিশের এ অভিযান অব্যাহত রাখা হবে।

এ ব্যাপারে সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, গোলাপগঞ্জ সার্কেল রাশেদুল হক চৌধুরী বলেন, মাদকের খুচরা বিক্রেতা থেকে শুরু করে ডিলার সে যেই হোক, তাকে এ পেশা ছাড়তে হবে। এতে সচেতনমহলসহ জনপ্রতিনিধি ও উপজেলাবাসীর সহযোগিতা কামনা করেন।

এ/১১

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *