ইসলামে মানুষের জীবন ও মর্যাদা অপরিসীম। মুসলিম হয়ে অন্য মুসলিমের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ পোষণ করা, সীমালঙ্ঘন ও বাড়াবাড়ি করা নিষিদ্ধ। বিদায় হজের ভাষণের আগে সাহাবিদের রাসুল (সা) বলেন, ‘তোমরা মানুষকে নীরব হতে বলো।’ কারণ একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলা হবে। অতঃপর রাসুল (সা.) ধীরে ধীরে দাঁড়িয়ে বলিষ্ঠ কণ্ঠে বললেন, ‘আমার মৃত্যুর পর তোমরা অমুসলিম হয়ো না—যে তোমরা একে অপরকে অন্যায়ভাবে হত্যা করবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১২১)

রাসুল (সা.) আরো বলেন, ‘মুমিন ব্যক্তি দ্বিনের অবকাশ পাবে যতক্ষণ না সে কাউকে অবৈধভাবে হত্যা করে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৭৬২)

মানুষ একে অন্যকে নানা অপবাদ দেয়। অপবাদ ও অভিযোগ প্রমাণিত না হলেও শাস্তি সাব্যস্ত করে ফেলে। কিন্তু এখানে বিবেচ্য বিষয় হলো, যথাযথ প্রমাণ নিশ্চিত করা না গেলে কখনো শাস্তি সাব্যস্ত করা যায় না। শুধু অভিযোগের কারণে রাসুল (সা.) কারো শাস্তির বিধান করেননি; বরং রাসুল (সা.) সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করে বলেছেন, ‘মানুষ যেন এই কথা বলতে না পারে যে, মুহাম্মদ তাঁর সাহাবাদের হত্যা করে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৫১৮)

রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে অনেকে অমানবিক আচরণ করেছে। কিন্তু তাদের সঙ্গে রাসুল (সা.) অসৌজন্যমূলক আচরণ করেননি। এক লোক এসে রাসুল (সা.)-এর বণ্টন নিয়ে বলে, ‘শপথ! আল্লাহর বিধান মতে তা সম্পন্ন হয়নি। তখন রাসুল (সা.) বললেন, ‘মহান আল্লাহ মুসা (আ.)-এর ওপর রহম করুন। তিনি এর চেয়ে অনেক বেশি কষ্ট ভোগ করে ধৈর্য ধরেছেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩১৫০)

একদিন রাসুল (সা.) এক সাহাবিকে বললেন, ‘তোমরা কি আমার প্রতি আস্থাবান নও? অথচ আমি আসমানবাসীর কাছে আস্থাবান। সকাল-সন্ধ্যা আমার কাছে আসমান থেকে সব খবর আসে।’ তখন এক লোক দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসুল, আল্লাহকে ভয় করুন। রাসুল (সা.) বললেন, ‘কী বললে? আমি কি বিশ্ববাসীর মধ্যে আল্লাহকে ভয় করতে সবচেয়ে উপযুক্ত ব্যক্তি নই?’ ওই মুহূর্তে খালিদ বিন ওয়ালিদ (রা.) বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আমি কি এই লোককে হত্যা করব না?’ তিনি বললেন, ‘না, হতে পারে সে নামাজ পড়ে।’ খালিদ (রা.) বললেন, ‘কত নামাজি তো এমন কথা বলে, যা তার অন্তরে নেই।’ তখন রাসুল (সা.) বললেন, ‘আমাকে মানুষের অন্তর ফেঁড়ে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়নি। মানুষের পেট ফুটো করে দেখা তো আমার কাজ নয়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৪৩৫১)

ওমর (রা.) বলতেন, ‘রাসুল (সা.)-এর যুগে অপরাধীরা ওহির মাধ্যমে ধরা পড়ত। এখন ওহি বন্ধ হয়ে গেছে। এখন মানুষকে বাহ্যিক কাজের মাধ্যমে অভিযুক্ত করা হবে। তাই কেউ বাহ্যিকভাবে ভালো কাজ করলে আমাদের পক্ষ থেকে তাকে নিরাপত্তা দেওয়া হবে। তার অভ্যন্তরীণ গোপন বিষয় আমাদের বিবেচ্য বিষয় নয়। আল্লাহ তার কাজ দেখবেন। আর কেউ বাহ্যিকভাবে মন্দ কাজ করলে তাকে আমাদের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা দেওয়া হবে না। এমনকি তার অভ্যন্তরীণ বিষয় ভালো হলেও তা শোনা হবে না।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৬৪১)

সুতরাং সবার আল্লাহকে ভয় করা উচিত। মানুষের নামে মিথ্যা অভিযোগ দেওয়া, অপবাদ দেওয়া, গালমন্দ করা, সম্মানহানিমূলক কাজ পরিহার করা সবার কর্তব্য।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *