ডাযালসিলেট::

সারাদেশের মতো সিলেটেও শুরু হয়েছে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী গণটিকা কার্যক্রম। রবিবার (৭ ফেব্রুয়ারি) প্রথম দিন সিলেট বিভাগে ২ হাজার ৩৯৬ জন টিকা নিয়েছেন। এরমধ্যে সিলেট জেলায় ৯৪৮ জন, সুনামগঞ্জে ৬৭৯ জন, হবিগঞ্জে ৩৪২ জন ও মৌলভীবাজারে ৪২৭ জন টিকা নিয়েছেন। সিলেট নগরে প্রথম টিকা গ্রহণ করেন বিভাগীয় কমিশনার মশিউর রহমান এনডিসি। টিকা গ্রহণকারী সবাই সুস্থ আছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

রবিবার সকাল ১০টা ৫৫ মিনিটে ওসমানী হাসপাতালের টিকাদান কেন্দ্রের ১১ নম্বর বুথে প্রথম টিকা নেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মশিউর রহমান এনডিসি। এরপর ক্রমান্বয়ে টিকা নেন, সিলেটের জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলাম, সিলেট সিটি করপোরেশনের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ তৌফিক বকস, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ইলিয়াছুর রহমান ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আল আজাদ। এছাড়া বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালের বুথে করোনার টিকা নেন জেলা পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন পিপিএম। রবিবার করোনার সম্মুখযোদ্ধা ছাড়াও অনেক সাধারণ মানুষ টিকা নিতে আসেন। টিকা নেওয়ার পর এখন পর্যন্ত কারো শরীরে প¦ার্শ প্রতিক্রিয়া হয়নি বলে জানা গেছে।

টিকা নিয়ে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মো. মশিউর রহমান এনডিসি বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এখনও টিকা পৌঁছেনি। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এগিয়ে আছে। বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর ১১ মাসের মাথায় টিকা এসেছে। এটি আমাদের জন্য গর্বের। আমি টিকা নিয়েছি, কোনো সমস্যাই হচ্ছে না। তাই কোনো অপপ্রচারে কান দেওয়া যাবে না। টিকা নেওয়াটাই হচ্ছে একজন সচেতন ব্যক্তির কর্তব্য।’

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জেলায় ৪১টি বুথে টিকা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে নগরে ছিল ১৩টি কেন্দ্র। এসব কেন্দ্রের মধ্যে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১২টি বুথ এবং বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালে একটি বুথ রয়েছে। বাকি ১২টি উপজেলায় দুইটি করে ২৪ টি এবং সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচে) চারটি বুথে টিকা দেওয়া হয়। রবিবার সকাল থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ওসমানী হাসপাতালের ১২টি বুথে ৪৮৯ জন এবং পুলিশ হাসপাতালে ৪০ জন টিকা নিয়েছেন। আর পুরো জেলায় টিকা নিয়েছেন ৯৪৮ জন।

সিসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম সিলেট মিররকে বলেন, ‘নগরের দুটি কেন্দ্রে রবিবার ৫২৯ জন টিকা নিয়েছেন। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত টিকা দেওয়া হবে।’

সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. প্রেমানন্দ মন্ডল গতকাল সন্ধ্যায় সিলেট মিররকে বলেন, ‘প্রথম দিন সিলেটে ৯৪৮ জন টিকা নিয়েছেন। জেলার ৪১টি বুথে এসব টিকা দেওয়া হয়। তবে এখন পর্যন্ত কারো শরীরে প¦ার্শ প্রতিক্রিয়ার খবর পাইনি। সবাই সুস্থ রয়েছেন।’

সিলেট জেলায় প্রথম ধাপে ২২ হাজার ৮০০ ভায়াল টিকা এসেছে। এসব ভায়ালের মধ্যে ২ লাখ ২৮ হাজার ডোজ টিকা রয়েছে। এর মধ্যে সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকার জন্য দেওয়া হয়েছে ২৮ হাজার ডোজ। জেলায় মোট ১৫৩টি টিকাদান বুথ রয়েছে। এর মধ্যে ২৫টি সিটি করপোরেশনের এবং বাকি ১২৮টি সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তত্ত¡াবধানে। তবে প্রাথমিক অবস্থায় ১২টি উপজেলায় ২টি করে বুথ ও সিটি করপোরেশনে ১৩টি বুথে এবং সিএমএইচের চারটি বুথে টিকা দেওয়া হবে।

রবিবার সকালে সুনামগঞ্জের জনপ্রতিনিধি, চিকিৎসক, সাংবাদিকসহ সম্মুখসারীর করোনা যোদ্ধারা ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছেন। রবিবার জেলায় ৬৭৯ জন টিকা গ্রহণ করেছেন।

রবিবার সকাল ১০টায় সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জন কার্যালয়ে টেলিকনফারেন্সে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ভ্যাকসিন কর্মসূচি দেখেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনের কর্মকর্তা, ডাক্তার, পুলিশসসহ বিভিন্ন পেশাজীবীর মানুষ। ভ্যাকসিন গ্রহণ উপলক্ষে সদর হাসপাতালকে সজ্জিত করা হয়। পাঁচটি বুথে সিনিয়র নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীকে ভ্যাকসিন প্রয়োগের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ১ নম্বর বুথে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নূরুল হুদা মুকুট, ২ নম্বর বুথে সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ, ৫ নম্বর বুথে সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক একই সময়ে আলাদাভাবে ভ্যাকসিন গ্রহণ করেন। এরপর পৌর মেয়র নাদের বখত ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান খায়রুল হুদা চপল ভ্যাকসিন গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে সাংবাদিক, চিকিৎসক, নার্সসহ বেশ কয়েকজন ভ্যাকসিন নেন।

জনপ্রতিনিধিদের পর গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে ভ্যাকসিন গ্রহণ করেন সুনামগঞ্জ খবরের সম্পাদক ও প্রকাশক পঙ্কজ দে, দৈনিক প্রথম আলোর স্টাফ রিপোর্টার খলিল রহমান, দৈনিক কালের কণ্ঠের প্রতিনিধি শামস শামীম, দৈনিক আমাদের সময়ের প্রতিনিধি বিন্দু তালুকদার, ঢাকা পোস্টের প্রতিনিধি আসাদ মনি ও সুনামগঞ্জের খবরের স্টাফ রিপোর্টার পুলকরাজ। এছাড়া সদর হাসপাতালের আরএমও ডা. রফিকুল ইসলাম, ডা. সৈকত দাসসহ চিকিৎসক ও নার্সরা ভ্যাকসিন গ্রহণ করেন।

সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ অ্যাডভোকেট পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ বলেন, ‘আমি আমার নির্বাচনী এলাকার মানুষদের সচেতন করতে সবার আগে ভ্যাকসিন নিয়েছি, যাতে মানুষ আমাকে দেখে উৎসাহিত হয়।’ ভ্যাকসিনে কোনো খারাপ প্রতিক্রিয়া হয়নি বলে জানান তিনি।

হবিগঞ্জে রবিবার সকাল ১১টায় জেলা সদরের আধুনিক হাসপাতালে করোনাভাইরাসের টিকা প্রদান কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথম দিন টিকা নেন ৩৪২ জন। প্রথমে হবিগঞ্জ-লাখাই আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবু জাহির করোনার টিকা গ্রহণ করেন। এরপর জেলা প্রশাসক মো. কামরুল ও সিভিল সার্জন মোস্তাফিজুর রহমান টিকা গ্রহণ করেন। এরপর চিকিৎসক, মুক্তিযোদ্ধা, পুলিশসহ নিবন্ধন করা ব্যক্তিরা টিকা গ্রহণ করেন।

হবিগঞ্জ জেলায় রবিবার পর্যন্ত মোট নিবন্ধন করেছেন ২ হাজার ৩৪৬ জন। এর মধ্যে প্রথম দিন ৩৪২ জনকে টিকা দেওয়া হয়। এর মধ্যে হবিগঞ্জ সদরে ১০২ জন, আজমিরীগঞ্জে ২৫ জন, বাহুবলে ৩৯ জন, বানিয়াচংয়ে ৮ জন, চুনারুঘাটে ৪০ জন, লাখাইয়ে ৪০ জন, মাধবপুরে ৪০ জন ও নবীগঞ্জে ৪৮ জন ভ্যাকসিন গ্রহণ করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হবিগঞ্জর ডেপুটি সিভিল সার্জন মুখলিছুর রহমান উজ্জ্বল।

রবিবার সকাল ১১টায় আনুষ্ঠানিকভাবে টিকা প্রদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রথম টিকা গ্রহণ করেন মৌলভীবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি নেছার আহমদ। রবিবার জেলায় মোট ৪২৭ জন টিকা নিয়েছেন।

টিকা নিয়েছেন, জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান, সিভিল সার্জন ডা. চৌধুরী জালাল উদ্দিন মোর্শেদ, মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র ফজলুর রহমান, মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালের তত্ত¡াবধায়ক ডা. পার্থ সারথী দত্ত কাননগো, মৌলভীবাজার প্রেসক্লাব সভাপতি এম এ সালাম, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মোহিত টুটু, সিনিয়র স্টাফ নার্স কৃষ্ণা রাণী দত্তসহ চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী এবং পঞ্চাশোর্ধ ব্যক্তিরা। এরপর ধারাবাহিকভাবে নিবন্ধন করা বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ টিকা নেন।

সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এ পর্যন্ত মৌলভীবাজার জেলায় করোনার টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন ৫ হাজার ৭৫৪ জন। রবিবার জেলায় ৪২৭ জন টিকা নিয়েছেন। এর মধ্যে পুরুষ ১১০ জন এবং নারী ৯৪ জন। টিকা গ্রহণকারীদের মধ্যে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে ২০৪ জন, রাজনগরে ৩০ জন, কুলাউড়ায় ২০ জন, বড়লেখায় ৬৪ জন, কমলগঞ্জে ২০ জন, শ্রীমঙ্গলে ৭৯ জন এবং জড়ী উপজেলায় ১০ জন রয়েছেন।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *