ডায়ালসিলেট ডেস্ক::

সিলেটের ওসমানীনগরের ব্রাহ্মণগ্রাম গ্রামের হতদরিদ্র আব্দুল লতিফের মেয়ে দুই সন্তানের জননী সুহেনা বেগমকে (৩৫) স্বামীর বাড়ি থেকে শিকল দিয়ে বাঁধা অবস্থায় উদ্ধারের ৪ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনও আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। সুহেনা দক্ষিণ সুরমার শাহ সিকন্দর গ্রামে যৌতুকের জন্য স্বামী, সতিন এবং ননদের অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হন।

গত বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল) বিকেল ৩টায় সুহেনাকে স্বামীর বাড়ি থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। ওইদিন দুপুরে তার দুই হাত পেছনে বেঁধে গোপনাঙ্গে বৈদ্যুতিক শক দেওয়া হয় ও মাথার চুল ন্যাড়া করে মাথায় আলকাতরা ঢেলে লোহার শিকল দিয়ে তাকে বেঁধে রাখা হয়।

জানা যায়, ২০১৩ সালের ২৬ জুন দক্ষিণ সুরমা উপজেলার লালাবাজার ইউনিয়নের শাহ সিকন্দর গ্রামের মৃত মনির আলীর ছেলে শাহিন মিয়ার (৪০) সঙ্গে সুহেনা বেগমের বিয়ে হয়। বিয়ের পর তাদের সংসারে দু’টি সন্তানের জন্ম হয়। গত কয়েকবছর ধরে যৌতুকের জন্য সুহেনার ওপর চরম নির্যাতন নেমে আসে। ২০১৭ সালে সাবিনা বেগম (২৫) নামের আরেক মেয়েকে বিয়ে করেন শাহিন। দ্বিতীয় বিয়ের পর ২০১৮ সালে শাহিন মধ্যপ্রাচ্যে যেতে সুহেনাকে তার বাবার কাছ থেকে টাকা এনে দিতে চাপ দেন। সুহেনা টাকা এনে দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তার ওপর নির্যাতন শুরু হয়। এরপর দুই সন্তানের কথা ভেবে অভাবগ্রস্ত পিতার কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা নিয়ে এসে স্বামীর হাতে তুলে দেন সুহেনা। মধ্যপ্রাচ্যে একাধিক কারণে জেল খেটে চলতি বছরের জানুয়ারিতে শাহিন বাড়িতে চলে আসেন। এরপর শাহীন আবারও সুহেনাকে ৫০ হাজার টাকা এনে দেওয়ার জন্য চাপ দিতে শুরু করেন। অভাবগ্রস্ত পিতা টাকা দিতে অক্ষমতা জানালে সুহেনাকে দেহব্যবসায় নামার প্রস্তাব দেন শাহীন। সুহেনা এতে অসম্মতি জানালে গত বৃহস্পতিবার ভোরে (সেহরির পর) সুহেনার ওপর শুরু হয় স্বামী আর সতিনের চরম নির্যাতন। সুহেনার হাত বেঁধে বেধড়ক মারধর করে একটি কক্ষে আটকে রাখা হয়। সকালে তার শরীরের গোপন স্থানে দেওয়া হয় বৈদ্যুতিক শক। এরপর স্বামী ও সতিন মিলে মাথার চুল ন্যাড়া করে মাথায় গরম আলকাতরা ঢেলে গলায় জুতার মালা পরিয়ে শিকল দিয়ে বারান্দায় বেঁধে রাখেন সুহেনাকে। এ খবর পেয়ে ইউপি চেয়ারম্যান পীর ইকবাল পুলিশ প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে সুহেনাকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে তার পিতা আব্দুল লতিফের হাতে তুলে দেন। পরে সুহেনাকে বালাগঞ্জ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা প্রদান করা হয়।

পরদিন শুক্রবার (২৩ এপ্রিল) সুহেনা বেগম বাদী হয়ে স্বামী শাহিন, সতিন সাবিনা এবং ননদ পলি বেগমের বিরুদ্ধে দক্ষিণ সুরমা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ ওইদিনই অভিযোগটি মামলা আকারে নথিভুক্ত করে।

নির্যাতিত সুহেনা বেগম বলেন, ‘মারধরে আমি খুব অসুস্থ, কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে। আমার স্বামী বেশ আগে ২০ হাজার টাকা দাবি করলে আমি আমার অভাবী বাবার কাছ থেকে টাকা এনে দেই। এবার আবার ৫০ হাজার টাকা দাবি করলে আমি অসম্মতি জানালে আমায় দেহব্যবসার প্রস্তাব দেন আমার স্বামী। আমি এতে অপারগতা প্রকাশ করলে আমার সতিন আর স্বামী মিলে আমায় মেরে শরীরের গোপনাঙ্গে বৈদ্যুতিক শক দিয়েছেন। মাথার চুল কেটে গরম আলকাতরা মাথায় দিয়েছেন।’

সুহেনার বাবা আব্দুল লতিফ বলেন, ‘আমি অভাবগ্রস্ত লোক। ৬ মেয়ে ও ১ ছেলেসহ ৭ জনের সংসার আমার। টাকা দিতে না পারায় আমার মেয়ের ওপর চরম নির্যাতন করা হয়েছে। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।’

এ ব্যাপারে দক্ষিণ সুরমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘একটি অসহায় নারীকে স্বামী-সতিন কর্তৃক মারধর ও শিকল দিয়ে বেঁধে রাখার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে উদ্ধার করেছে। নির্যাতিত নারী বাদী হয়ে থানায় স্বামী, সতিন ও ননদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। আসামিরা পলাতক থাকায় তাদের ধরা এখনও সম্ভব হয়নি। তবে তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’

 

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *