ডায়ালসিলেট ডেস্ক::

করোনা পজিটিভ চিকিৎসককে দিয়ে রোগীকে চিকিৎসাসেবা দেওয়ালেন সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. এস এম শাহরিয়ার। বিষয়টি নিয়ে হাসপাতাল পাড়ায় চলছে সমালোচনা। গতকাল শুক্রবার (২৫ জুন) বিকেলে ও রাতে করোনায় আক্রান্ত ওই চিকিৎসক বালাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেন। হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে ধারণকৃত এ সংক্রান্ত ৬ মিনিট ৬ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফুটেজ সাংবাদিকদের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।

জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার ওসমানীনগর উপজেলার বুরুঙ্গা উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার ডা. শাফায়েত হোসেনের করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসে। শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে সাংবাদিকরা হাসপাতালে গিয়ে দেখতে পান ডা. শাফায়াত বালাগঞ্জ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন। রাত ৮টার দিকে সংবাদিকরা ফের হাসপাতালের জরুরি বিভাগে যান। তখন জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত একজন চিকিৎসক বলেন, ‘টিএইচও স্যারের নির্দেশে ডা. শাফায়াত রাত ৮টা পর্যন্ত ডিউটি করেছেন। পরে আমরা তাকে ডিউটি না করার জন্য বলেছি।’

রাত ৮টায় ডা. সাফায়াত জরুরি বিভাগেই ছিলেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘বৃহস্পতিবার আমার করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসে। বিকেল ৫টা পর্যন্ত আমি ডিউটি করেছি। পরে টিএইচও স্যারকে বলেছি আমার শরীরটা ভালো নয়, আমি রাতে ডিউটি করতে পারব না।’

করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসার বিষয়টি কি টিএইচও জানতেন- এ প্রশ্নের জবাবে ডা. শাফায়েত বলেন, ‘স্যার জানতেন এবং স্যারের নির্দেশেই আমি ডিউটি করেছি।’

শুক্রবার বিকেল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত জরুরি বিভাগে ডা. সাফায়াতের কাছ থেকে চিকিৎসাসেবা নেওয়া রোগীরা করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন বলে তাদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এসব রোগী ও তাদের স্বজনরা টিএইচও’র প্রতি ক্ষোভ ঝেড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা পোস্ট করেছেন। এসব পোস্ট ভাইরাল হওয়ার পর আজ শনিবার (২৬ জুন) সকাল থেকে রোগীরা করোনার ভয়ে হাসপাতালমুখী হচ্ছেন না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বালাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. এস এম শাহরিয়ার শনিবার দুপুরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘ডা. সাফায়েত করোনা পজেটিভ হওয়ায় আইসোলেশনে রাখতে তাকে হাসপাতালে এনেছিলাম। জরুরি বিভাগে তিনি ডিউটি করেননি। আমাদের নির্দেশ অমান্য করে অযথা ঘোরাঘুরি করেছেন।’

যদিও শুক্রবার রাতে আরেকজন সংবাদকর্মীকে টিএইচও বলেছিলেন, চিকিৎসক সংকটের কারণে হাসপাতাল বন্ধ করার উপক্রম হওয়ায় ডা. সাফায়াতকে দিয়ে জরুরি বিভাগে ডিউটি করানো হয়েছে।

এ বিষয়ে সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. প্রেমানন্দ মন্ডলের কাছে জানতে চাইলে তিনি অনেকটা দায়সারা জবাব দিয়ে বলেন, ‘ওই বিষয়টা আমি জানি আর এটা নিয়ে ভাবনার তেমন কিছু নেই। ডা. সাফায়েতের করোনা পজিটিভ রিপোর্টের ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। ফের পরীক্ষা করিয়ে রেজাল্ট পজিটিভ এলে তাকে ডিউটিতে না রেখে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।’

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বালাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকরা সিলেট শহরে বসবাস করেন। শহর থেকে এসে হাসপাতালে ডিউটি করেন তারা। অনেকে আবার নিয়মিত হাসপাতালে আসেন না, ডিউটিও করেন না। এক্ষেত্রে তাদের দাবি হলো, হাসপাতালে আবাসনের সুব্যবস্থা নেই বলে তারা শহরে থাকেন। চিকিৎসকদের হাসপাতালে ডিউটি ফাঁকি দেওয়ার কৌশল হিসেবে টিএইচও’র নির্দেশে বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগর উপজেলার বিভিন্ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎসক দিয়ে বালাগঞ্জ হাসপাতালে রাতে ও সকালে দায়িত্বপালন করানো হচ্ছে। জনবল সংকটের দোহাই দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে এমনটি করা হচ্ছে। উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎসকরা হাসপাতালে গিয়ে রাত থেকে পরদিন দুপুর পর্যন্ত দায়িত্বপালন করার কারণে তাজপুর উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রসহ বিভিন্ন উপ-স্বাস্থ্য এলাকার রোগীরা চিকিৎসাসেবা বঞ্চিত হচ্ছেন বলে স্থানীয়রা অভিযোগ তোলেছেন।

এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎসকরা বলছেন, চাপ প্রয়োগ করে তাদেরকে দিয়ে হাসপাতালে দায়িত্বপালন করানো হচ্ছে। দায়িত্বপালন না করলে টিএইচও তাদেরকে শোকজ এবং নানাভাবে হয়রানি করেন।

এম/

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *