ডায়ালসিলেট ডেস্ক :: রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় লকডাউন চলছে। তবে এসব এলাকার রাস্তা-বাজারে অবাধে মানুষ চলাচল করছে। অনেকের মুখে মাস্ক নেই। কোথাও কোথাও হুড়োহুড়ি করে মানুষ চলাচল করছে।

লকডাউন বাস্তবায়নকারী পুলিশ কিংবা অন্য সংস্থার সদস্যরা এক্ষেত্রে নিরুপায়। পরিস্থিতি সম্পর্কে ফোনে এক পুলিশ এবং এক ট্রাফিক সদস্যের কাছে জানতে চাইলে উত্তর পাওয়া যায়- কী করব ভাই। রাস্তা, বাজার, মার্কেট ছাড়তে চাচ্ছে না মানুষ।

লকডাউনে ঢাকার সঙ্গে অন্যান্য এলাকায় দূরপাল্লার গণপরিবহণ বন্ধ রয়েছে। তারপরও নানা কৌশলে মানুষের চলাচল অব্যাহত রয়েছে।

হেঁটে, রিকশায়, পিকআপ, ট্রাক, মোটরবাইক, সিএনজিচালিত অটোরিকশার মাধ্যমে ভেঙে ভেঙে চলাচল করছে মানুষ। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই থাকছে না।

করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকারের উদ্যোগ স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টদের কাছে প্রশংসিত হলেও কর্মজীবী ও দিনমজুররা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। গণপরিবহণ বন্ধের ৪র্থ দিনে সদরঘাটে ছিল সুনশান নীরবতা।

ট্রেন বন্ধ থাকলেও অগ্রিম বিক্রীত টিকিটের টাকা ফেরত আনতে কমলাপুর যাচ্ছেন মানুষ। ফেরত টাকার জন্য সেখানে জটলা লেগে যাচ্ছে। দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে সীমাহীন ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন অগ্রিম টিকিট কাটা যাত্রীরা।

শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, রাস্তা-বাজারে মানুষের উপচে পড়া ভিড়। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে দূরপাল্লার গণপরিবহণ বন্ধ করার পরেও ঠেকানো যাচ্ছে না চলাচল। মানুষ নানা কায়দায় ঢাকা ছেড়ে যাচ্ছেন। আবার অনেকে ঢাকায় প্রবেশ করেছেন।

রাজধানীর কমলাপুর এলাকা থেকে বিভিন্ন যানে রাজধানী ছাড়তে দেখা গেছে অনেককে। প্রাইভেটকার, মিনি ট্রাক ভাড়া করে বিভিন্ন জেলায় ছুটছেন।

অধিকাংশ ট্রেনের যাত্রী। ট্রেন বন্ধ থাকায় বিকল্প পন্থায় গ্রামে ফিরছেন তারা। ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে রিতা নামের এক নারী তার মা ও শিশু সন্তান নিয়ে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় এসেছেন।

৩ দিন বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরে চিকিৎসা করিয়ে ফিরে গেছেন শুক্রবার। দূরপাল্লার কোনো যান না থাকায় একটি প্রাইভেটকার ভাড়া করে বাড়ি ফিরছেন। তিনি জানান, রাজধানীতে তো মানুষ আর মানুষ।

বাজারতো মানুষে ভরা। তাহলে এ ধরনের লকডাউন দিয়ে কি লাভ? এতে কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না। মাঝ থেকে মানুষের হয়রানি।

উত্তরা-আব্দুল্লাহপুর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কর্মব্যস্ত, অসুস্থ এবং বয়স্ক মানুষের অসহনীয় দুর্ভোগ। সকালে আব্দুল্লাহপুরে হাজার হাজার মানুষকে হেঁটে চলাচল করতে দেখা গেছে।

দাউদকান্দি থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে ঢাকামুখী গণপরিবহণ- দুর্ভোগে যাত্রীরা : দাউদকান্দি প্রতিনিধি জানান, ঢাকার আশপাশের ৭ জেলায় লকডাউনে চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকামুখী যানবাহনগুলো দাউদকান্দির পশ্চিম মাইজপাড়া এলাকায় আটকে দেওয়া হচ্ছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়ছেন যাত্রীরা।

জরুরি প্রয়োজনে অনেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়ে দাউদকান্দি অংশে আটকে পড়ে বাধ্য হয়ে ঢাকা অভিমুখে হাঁটতে শুরু করেন। ইউনুস মিয়া ফেনী থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন। সঙ্গে রয়েছে ষাটোর্ধ্ব মা ফাতেমা বেগম, স্ত্রী খাদিজা ও তিন ছেলেমেয়ে।

তিনি জানান, ফেনী থেকে বাসে ও সিএনজি করে চার ঘণ্টায় কয়েক গুণ বেশি ভাড়ায় পশ্চিম মাইজপাড়া এসেছি। এখন ছেলেমেয়ে ও বৃদ্ধ মাকে নিয়ে কীভাবে দোহারে যাব চিন্তায় আছি।

বিকল্প পথে দৌলতদিয়া ঘাটে আসছে মানুষ : গোয়ালন্দ প্রতিনিধি জানান, সড়ক-মহাসড়কে প্রশাসনের কঠোর নজরদারির কারণে বিকল্প বিভিন্ন গ্রামীণ সড়ক দিয়ে মানুষ দৌলতদিয়া ঘাটে পৌঁছছেন।

রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে তারা ছুটে চলেছেন গন্তব্যে। এক্ষেত্রে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি কিংবা বিধিনিষেধ কোনো কিছুই তাদের আটকাতে পারছে না।

বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক ফিরোজ শেখ বলেন, আমাদের নির্দেশনা আছে পণ্যবাহী ট্রাক, জরুরি সেবার যানবাহন ও ছোট গাড়ি পারাপার হতে পারবে। এরপরও ফেরি ঘাটে ভেড়ার সুযোগে যাত্রীরা উঠে পড়ছেন। আমাদের কিছু করার থাকছে না।

ফেরিতে শিমুলিয়ার যাত্রী জানান, শাটডাউন ঘোষণা হতে পারে এ আশঙ্কায় মানুষ ফিরছে গ্রামের দিকে। শুক্রবার সকাল থেকে ফেরিতে শিমুলিয়া থেকে দক্ষিণাঞ্চলমুখী যাত্রীদের চাপ ছিল। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীদের ভিড় আরও বৃদ্ধি পায়।

তবে বাংলাবাজার হয়ে ঢাকামুখী যাত্রীদের ভিড় রয়েছে সহনীয় পর্যায়ে। বিআইডব্লিউটিসি বাংলাবাজার ঘাট ম্যানেজার সালাহউদ্দিন মিয়া জানান, মিডিয়ায় শাটডাউনের খবরে ঘাটে যাত্রীদের চাপ বেড়ে গেছে। তবে সব ফেরি চলাচল করানো সম্ভব হচ্ছে না।

ডায়ালসিলেট/এম/এ/

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *