ডায়ালসিলেট ডেস্ক::জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নৃশংস হত্যার নেপথ্যের কারিগরদের খুঁজে বের করতে কমিশন গঠন হতে যাচ্ছে শিগগিরই। ইতোমধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনাও হয়েছে। এর কাঠামো ও কার্যপরিধি চূড়ান্তের বিষয় নিয়ে চলছে পর্যালোচনা। সমাজের বিভিন্ন অঙ্গনের গণ্যমান্য ও দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সমন্বয়ে ‘নিরপেক্ষ’ এই কমিশন করা হবে। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের ঘটনার পৃষ্ঠপোষক, কাদের মদদ ছিল এবং ঘটনার ক্ষেত্র প্রস্তুতকারীদের চিহ্নিত করবেন এর সদস্যরা। পাশাপাশি এই ষড়যন্ত্রে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্পৃক্ততার স্বরূপ উন্মোচনের লক্ষ্য সামনে রেখেও কাজ করবেন তারা। করোনা মহামারি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই বহুলপ্রত্যাশিত এই কমিশনের রূপরেখা প্রকাশ করা হবে বলে জানা গেছে। প্রসঙ্গটি নিয়ে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে রোববার বিকালে কথা হয়। তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার নেপথ্যের ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজে বের করতে কমিশন গঠন হচ্ছে। এটা আমি আগেই বলেছি। এ নিয়ে প্রাথমিক আলোচনাও হয়েছে, কাজও চলছে। তবে করোনাভাইরাসের কারণে একটু দেরি হচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই এর রূপরেখা সবার সামনে প্রকাশ করা হবে বলেও জানান তিনি। কমিশনের রূপরেখা ও কার্যপরিধি সম্পর্কে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, এই কমিশন অবশ্যই নিরপেক্ষ হবে। দেশের গণ্যমান্য, গুরুত্বপূর্ণ ও দায়িত্বশীল ব্যক্তিরাই এতে থাকবেন। এর বেশি এখনই বলা যাচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড সাধারণ হত্যাকাণ্ড নয়। এর নেপথ্যে একটা ষড়যন্ত্র ছিল। এই কমিশনের মাধ্যমে সেই ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত করা হবে। তাদের কার কী ভূমিকা ছিল, তা জাতির সামনে প্রকাশ করা হবে। রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, এই কমিশনের কাজ হবে একটা ইতিহাসকে পরিপূর্ণরূপে জাতির সামনে তুলে ধরা। সেই গুরুদায়িত্ব কাদের দেওয়া হবে, সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। কমিশনে দলীয় লোক থাকলে তাদের কাজ সর্বজনস্বীকৃত না-ও হতে পারে। সেক্ষেত্রে দেশের সাধারণ মানুষ এখন পর্যন্ত এই কমিশনের পক্ষে যেভাবে অবস্থান নিয়েছেন, সেটা ব্যাহত হবে। প্রশ্ন উঠবে গোটা প্রক্রিয়া নিয়েও। এসব বিষয়ও মাথায় রাখেই নিরপেক্ষ কমিশন গঠনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে সংশ্লিষ্টদের। জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. জোবাইদা নাসরীন বলেন, এটা ইতিহাসের বিষয় এবং প্রায় ৪৫-৪৬ বছর আগের ঘটনা। কমিশন হলে এবং এর সঙ্গে যারা থাকবেন, তাদের ৪৫-৪৬ বছর আগের ঘটনা সামনে নিয়ে আসতে হবে। যদিও আমরা জানি, এটা জনগণের ম্যান্ডেট; কিন্তু এটা একটা পলিটিক্যাল ইস্যুও বটে। তিনি আরও বলেন, কমিশনে দলের লোক থাকলে সেখানে একপেশে ইতিহাস হতে পারে। আবার নিরপেক্ষ কেউ থাকলে সেটা তারা মানবেন কি না, সেটা নিয়েও সংশয় থেকে যাবে। সেই প্রেক্ষাপটে এটা ক্ষমতাসীনদের জন্য কঠিন কাজ ও বড় চ্যালেঞ্জ। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে হত্যা করা হয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। সেসময় শুধু তার দুই মেয়ে দেশের বাইরে থাকায় তারা প্রাণে বেঁচে যান। এই ঘটনার প্রায় ৩৫ বছর পর ২০১০ সালে সেই হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত ছয় খুনির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। বিদেশে পলাতক ছয় ঘাতকের মধ্যে আজিজ পাশা মারা গেছে। বাকিরা বিভিন্ন দেশে পালিয়ে আছে। এদিকে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হলেও এ নিয়ে আলোচনা শেষ হয়নি। আদালতের রায়েও হত্যাকাণ্ডের পেছনের রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের কথা উল্লেখ ছিল; কিন্তু বিস্তারিত কিছু উঠে আসেনি। এদিকে আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের দাবি-এত বড় হত্যাকাণ্ডের পেছনে আরও অনেকের পরোক্ষ-প্রত্যক্ষ ভূমিকা বা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ছিল। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রও ছিল। এছাড়া অনেকেই এই ঘটনার ক্ষেত্র প্রস্তুতেও সহযোগিতা করেছেন। তদন্ত কমিশন গঠন করে এদের সবার মুখোশ উন্মোচন করা উচিত বলেও মনে করেন তারা। জাতীয় শোক দিবসের এক আলোচনায় এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যায় মঞ্চের কুশীলবদের বিচার করে ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। এর বাইরে যারা ষড়যন্ত্রকারী ছিল, তদন্ত কমিশন করে তাদেরও খুঁজে বের করে বিচারের আওতায় আনা হবে। নেপথ্যের কুশীলবদেরও তদন্তের আওতায় আনতে হবে। নতুন প্রজন্মকে কোনো কিছুতেই অন্ধকারে রাখা যাবে না। সেজন্য তাদের স্বরূপ উন্মোচন করা উচিত। এ বিষয়ে ইতিহাসবিদ ও গবেষক ড. মুনতাসীর মামুন বলেন, নির্মূল কমিটি থেকে সর্বপ্রথম আমরা এটার দাবি জানিয়েছিলাম। ব্যক্তিগতভাবে আমি ও শাহরিয়ার কবির এটা নিয়ে অনেক কথা বলেছি। আজ অনেকেই এ বিষয়ে কথা বলছেন। এটা ইতিবাচক বিষয়। তিনি আরও বলেন, আইনমন্ত্রী এটা নিয়ে আশার কথা শোনাচ্ছেন। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, এই কমিটি করতেই যদি ৬০-৭০ বছর চলে যায়, তাহলে কেমন হবে। তবে আইনমন্ত্রী যখন বলছেন, তখন আমরা অবশ্যই আশা রাখতে পারি।
ডায়ালসিলেট এম/