ডায়ালসিলেট  ডেস্ক::সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচনের শেষ মুহূর্তে এসে ‘রহস্যময়’ নীরবতা বিরাজ করছে ভোটের মাঠে। প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা দৌড়ঝাঁপ করলেও বেশির ভাগ ভোটাররা নড়ছেন না। তারা কেন্দ্রে যাবেন কি না- এ নিয়েও ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। অথচ; ২৮শে জুলাই স্থগিত হওয়া নির্বাচনের আগে এই ভোটের মাঠ সরব ছিল। আর এই ভোটের উপর ভিত্তি করেই নির্বাচনের আগে জোয়ারে ভেসেছিলেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিক। এ কারণে আতিক নির্বাচনের শেষ সময়ে এসে জানিয়েছেন, ‘কেন্দ্রে ভোটার যাওয়া নিয়ে শঙ্কা আছে। যদি ভোটার কেন্দ্রে যায় তাহলে ভোটের হিসাব তার পক্ষেই থাকবে।’ এ কারণে এখনো আতিক ৪ঠা সেপ্টেম্বরের উপনির্বাচনে নীরব ভোট বিপ্লবের আশা করছেন। সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচনে এবার ৪ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরা হলেন- নৌকার প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব, লাঙ্গলের প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিক, স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক এমপি শফি আহমদ চৌধুরী ও বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী জুনায়েদ মোহাম্মদ মিয়া। আওয়ামী লীগ প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব এবার ভোটের মাঠে সবচেয়ে বেশি পরিশ্রম করেছেন। প্রচারণায়ও এগিয়ে তিনি। এরপরও ভোটের মাঠে আশানুরূপ জোয়ার তুলতে পারেননি। উন্নয়নের প্রশ্নে এ আসনের একাংশের মানুষ নৌকার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ থাকলেও ভেতরে ভেতরে আওয়ামী লীগের বহু বলয় এখনো নীরব। এ আসনে নৌকার টিকিট চেয়েছিলেন প্রয়াত এমপি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর স্ত্রী ফারজানা সামাদ, আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, বিএমএ’র কেন্দ্রীয় মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী দুলালসহ অনেকেই। সবাইকে টপকে হাবিব নৌকার টিকিট নিয়ে আসেন। এরপরও থেকে দলীয় প্রার্থী হাবিবের সঙ্গে তৃণমূল ঐক্যবদ্ধ থাকলেও এ আসনের দলীয় বিভিন্ন বলয়ের ভোট এখনো নীরব রয়েছে। এরই মধ্যে কেন্দ্র ও সিলেটের নেতারা নৌকার পক্ষে আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ করতে কাজ করেন। কিন্তু তাদের এই প্রচেষ্টা কোথাও সফল হলেও তেমন কাজে আসছে না। শেষ সময়ে এসেও ওই ভোট ব্যাংকও রহস্যময় ভূমিকা পালন করছে। তবে- আওয়ামী লীগ প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব জানিয়েছেন, এই উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ রয়েছে। মানুষ নৌকার পক্ষে, উন্নয়নের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ। এ কারণে জয় হবে নৌকারই। এদিকে, হাবিবুর রহমান হাবিবের পক্ষে কেন্দ্র ও সিলেটের নেতারা ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নেমেছেন। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে এ আসনে জয় চায় আওয়ামী লীগ। কারণ, এ আসনটি নিয়ে সিলেটে হিসাব ভিন্ন। কারণ এককভাবে কোনো দলই এখনো এ আসনে আধিপত্য বিস্তার করতে পারেনি। ফলে এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়ী হলে আগামীতে এ জয় হবে দলের জন্য টার্নিং পয়েন্ট। তণমূলের নেতারা জানিয়েছেন, ২০০৮ সাল থেকে ভোটের মাঠে রয়েছেন হাবিবুর রহমান হাবিব। তিনি নৌকার টিকিটের জন্য লড়াই করার পাশাপাশি স্থানীয়ভাবেও কাজ করেছেন। সুতরাং তার পক্ষেই তৃণমূলের নেতারা রয়েছেন। অপরদিকে, এ আসনের বিএনপি ও শরীক দলের বিশাল ভোট ব্যাংক রয়েছে। জামায়াতে ইসলামী ও খেলাফত মজলিসের কর্মীদের রয়েছে শক্তিশালী অবস্থান। ফলে বিএনপি কিংবা জোটের পক্ষ থেকে প্রার্থী না থাকায় এই এলাকার ভোটাররা জাতীয় পার্টির প্রার্থীর সঙ্গে রয়েছেন। এতে নেপথ্যে রয়েছেন বিএনপিসহ শরীকদলের কয়েকজন নেতা। দুটি দলের নেতারা জানিয়েছেন, পরিবেশ থাকলে তারা ভোটে যাবেন। যদি পরিবেশ না থাকে তাহলে তারা কেন্দ্রে যাবেন না। আর ভোটে গেলেই নৌকার প্রতিপক্ষ হিসেবে আতিক কিংবা স্বতন্ত্র শফি চৌধুরীর বাক্সেই জমা পড়বে তাদের ভোট। স্থগিত হওয়ার আগে জাতীয় পার্টির প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিক তাদের ভোটের উপর ভরসা রেখেই জোয়ারে ভেসেছিলেন। আতিকুর রহমান আতিক জানিয়েছেন, ‘সিলেট-৩ আসনের মানুষ এবার লাঙলের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ রয়েছে। মানুষ পরিবর্তন চায়। আর এই পরিবর্তনের জন্য তার পক্ষে একাট্টা হয়েছে। এখন সমস্যা হচ্ছে ভোটের পরিবেশ। যদি ভোটারদের ভোট দিতে দেয়া হয় তাহলে তিনি হাসবেন শেষ হাসি।’ আতিকের পক্ষে প্রচারণা চালাতে ইতিমধ্যে সিলেট এসেছেন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতারা। লাঙলের পক্ষে মাঠে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করবেন বলে দলীয় নেতারা জানিয়েছেন। এ আসনে এবার নীরব প্রচারণা চালিয়েছেন সাবেক এমপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী শফি আহমদ চৌধুরী। একা একা চালিয়েছেন প্রচারণা। কারষ স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার কারণে বিএনপিসহ শরীক দলের নেতারা তার পক্ষে প্রকাশ্যে নেই। তবে- ভেতরে ভেতরে বিএনপি ও শরীক দলের একাংশের ভোট ব্যাংক শফি চৌধুরীর পক্ষে ঐক্যবদ্ধ রয়েছে। প্রথমদিকে তিনি কিছুটা বিচ্ছিন্ন থাকলেও এখন যেদিকে যাচ্ছেন সাড়া পাচ্ছেন। শফি আহমদ চৌধুরীও এ আসনে নীরব ভোট বিপ্লবের আশা করছেন। তিনি জানিয়েছেন, ‘যারা নীরব আছেন তারা তার পক্ষেই রয়েছেন। ভোটাররা চায় যোগ্য প্রার্থী। এ কারণে যোগ্যতার ভিত্তিতে সিলেট-৩ আসনের মানুষ তার পক্ষে মাঠে ঐক্যবদ্ধ রয়েছে।’ নির্বাচনের শেষ দিকে এসে ভোটের মাঠে তিনি প্রভাব বিস্তার করছেনও। তার গ্রাম কিংবা এলাকার মুরব্বিরা ঐক্যবদ্ধ রয়েছে। গত ১১ই মার্চ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিলেন সিলেট-৩ আসনের এমপি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী। এরপর এ আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এবার আসনের তিনটি উপজেলার সব ভোট কেন্দ্রেই ইভিএম এ ভোটগ্রহণ করা হবে। ভোটগ্রহণ করতে এরই মধ্যে প্রস্তুতি শুরু করেছে নির্বাচন কমিশনও। ভোটে যাতে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয় সে কারণে ৩-৪ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন সিলেটের নির্বাচনী কর্মকর্তারা।

ডায়ালসিলেট এম/

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *