আন্তর্জাতিক ডেস্ক::যুক্তরাজ্যে নজিরবিহীন তেল সংকট দেখা দিয়েছে। আর এ সংকট মোকাবেলা করতে বরিস জনসন সেনাবাহিনী প্রস্তুত রেখেছেন, যে কোন সময় তা মোতায়েন করা হতে পারে। এর ফলে রীতিমত আতংক ছড়িয়ে পড়েছে মানুষের মধ্যে।
সম্প্রতি একটি বড় তেল কোম্পানি শেল তাদের কিছু পেট্রোল স্টেশন বন্ধ করে দিতে বাধ্য হওয়ার পর পরই লন্ডন এবং দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ডের অনেক পেট্রোল স্টেশনই তাদের ঢোকার পথে ‍“নো ফুয়েল” লেখা সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেয়। আর তখনই অন্যান্য পেট্রোল স্টেশনের দিকে গাড়ি নিয়ে ছুটতে শুরু করে মানুষ। কিন্তু খুব দ্রুতই বাকী পেট্রোল স্টেশনগুলোও তেল শূন্য হয়ে যায়। এমতাবস্থায় শত শত গাড়ি পেট্রোল স্টেশনগুলোর সামনে জ্বালানি তেলের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। গাড়িতে তেল নেওয়ার জন্য অনেকেই কয়েক ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করছেন। পেট্রোল স্টেশনগুলোর সামনে দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষায় থাকা ড্রাইভারদের মধ্যে রীতিমত বচসা চলছে, এমন দৃশ্য দেখা যায় টেলিভিশনের খবরে। কেউ কেউ তেল মজুদ রাখার জন্য পলিথিনের ব্যাগের মধ্যে তা সংরক্ষন করতেও দেখা যায়।
নতুন জ্বালানির সরবরাহ না আসায় ইতোমধ্যেই অনেক পেট্রোল স্টেশন এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। আর গাড়িতে যথেষ্ট তেল না থাকায় অনেকে তাদের কর্মস্থলে বা জরুরি কাজে পর্যন্ত যেতে পারছেন না । সাথে সাথে হাসপাতাল, জরুরি সেবা কর্মী এবং ট্যাক্সিচালকরা তাদের গাড়ির জন্য জ্বালানি সংগ্রহ করতে গিয়ে মারাত্মকভাবে হিমশিম খাচ্ছেন।
তবে এ সংকট তেল ঘাটতির কারনে নয়। শুধুমাত্র সরবরাহ সমস্যার কারণে। আর মূল কারণ ট্রাক চালকের অভাব। দীর্ঘদিন ধরেই বৃটেনে পণ্য বহনকারী ভারি ট্রাক চালকের সংকট চলছে। ব্রেক্সিটের কারণে ইউরোপের অনেক চালক বৃটেন থেকে চলে গেছেন। করোনা মহামারির কারণে চালক সংকট আরও তীব্র হয়েছে। এই মুহূর্তে বৃটেনে প্রায় এক লাখ ট্রাক চালকের ঘাটতি আছে বলে ধারনা করা হচ্ছে। তবে ট্রাক চালকের সংকটের কারণে অন্যান্য পণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রেই সমস্যা হলেও এর সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে জ্বালানি তেল সরবরাহের ক্ষেত্রে।
এদিকে সরকারের পক্ষ থেকে বার বার জানানো হচ্ছে যে, মানুষ যেন আতংকিত হয়ে গাড়ির ট্যাংক ভর্তি করে জ্বালানি কেনার জন্য ভিড় না করে। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হচ্ছে না। যে যেভাবে পারছে সেভাবে তেল মজুদ রাখার প্রচেষ্ঠা চালাচ্ছে।
সম্প্রতি এ ব্যাপারে সরকারের একজন মন্ত্রী স্বীকার করেছেন যে, সরকার নতুন ট্রাক চালকদের প্রশিক্ষণ দিতে প্রতিরক্ষা বাহিনীর সাহায্য নিচ্ছে। তবে পেট্রোলবাহী ট্যাংকার চালানোর জন্য এখনো সেনাবাহিনী ডাকার পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন পরিবেশ মন্ত্রী জর্জ ইউস্টিস। সাথে সাথে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের একজন মুখপাত্র বলেছেন, এই কাজে সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া জরুরি ভিত্তিতে ইউরোপ থেকে পাঁচ হাজার ট্রাক চালককে বৃটেনে আসার ভিসা দেয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তবে এতে কতটা কাজ হবে, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন অনেকে।

ডায়ালসিলেট এম/

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *