ডায়ালসিলেট ডেস্ক :: ঢাকার ধামরাইয়ে দ্বিতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের প্রতীক বরাদ্দের দিনেই আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ এনেছে উপজেলার চার ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। হামলায় গুলি ছোড়া, মারধর ও পোস্টার ছেঁড়াসহ নানা অভিযোগ ওঠেছে তাদের বিরুদ্ধে।

বুধবার (২৭ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ধামরাইয়ের রোয়াইল, সোমভাগ, বালিয়া ও গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়নে এসব হামলার ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, রোয়াইল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমান স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুল কালাম সামসুদ্দিন মিন্টুর অফিসে হামলা চালায় ও গুলি ছুড়ে নৌকা প্রতীকের বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজিম উদ্দিন খানের সমর্থকরা।

অন্যদিকে সোমভাগ ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী আওলাদ হোসেনের ওপর হামলা চালিয়ে তাকেসহ মারধর করে আরও চার-পাঁচ জনকে আহত করে নৌকার প্রার্থী আজাহারের কর্মীরা।

এদিকে বালিয়া ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী নূরে আলম নান্নুর কর্মীদের ওপর হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মুজিবুর রহমানের সমর্থকদের বিরুদ্ধে।

এছাড়া গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়নের গান্ধুলিয়া গ্রামে পোস্টার লাগাতে গিয়ে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আব্দুল কাদের মোল্লার কর্মীদের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীদের মারধরের অভিযোগ উঠেছে।

রোয়াইল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমান স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুল কালাম সামসুদ্দিন মিন্টু বাংলানিউজকে জানান, বিকেলে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থীর কয়েকজন মোটরসাইকেল নিয়ে তার অফিসে হামলা চালায়। এসময় পিস্তল দিয়ে এক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে আতঙ্ক ছড়ায় পরে চলে যায়।

তিনি বলেন, আমার ইউনিয়নের খড়ারচর মাঠে ১০০-১৫০টি মোটরসাইকেল আসছে। প্রত্যেকটিতে ২-৩জন করে লোক ছিল। ওদের হাতে একটা করে লাঠি আর নৌকার প্রতীক লাগানো ছিল। ওরা মূলত চেয়েছিল আমরা প্রতিবাদ করি। আর প্রতিবাদ করলেই বড় ধরণের সংঘর্ষ হতো। তখন আমরা অফিসের ভিতরেই বসা ছিলাম। আমি ওসি সাহেব ও রিটার্নিং অফিসারকে ঘটনাটি জানিয়েছি। তারা বলছেন, লিখিত অভিযোগ দিতে। আমি অভিযোগ দেবো।

এ বিষয়ে রোয়াইল ইউনিয়নের নৌকা প্রতীকের আওয়ামী লীগের প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজিম উদ্দিন খান বলেন, বিষয়টা আমি জানিও না। আমার বিশ্বাস আমার সমর্থকরা এই ধরণের কাজ করবে না।

এদিকে সোমভাগ ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী আওলাদ হোসেন বলেন, বানেশ্বর পশ্চিমপাড়া এলাকায় সমর্থকদের নিয়ে মাগরিব নামাজ আদায় করে মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় দেখি নৌকার প্রার্থী আজাহার চেয়ারম্যানের সমর্থকরা ওই পথ দিয়ে মিছিল নিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় মিছিল থেকে আমাদের উদ্দেশ্যে করে স্লেজিং করতে থাকে আজাহারের লোকজন। ওই সময় বিষয়টি ভিডিও করে রাখতে গেলে আমার এক সমর্থকের ফোন ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে আমাকে, ছোট ভাই বাবুকে, সাইফুল ও সুরুজসহ তিন-চারজনকে মারধর করা হয়। পরে ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রাথমিক চিকিৎসা নেই আমরা।

তবে নৌকা মনোনীত প্রার্থী আজাহার আলী বলেন, একটা মারামারির ঘটনা ঘটছে শুনেছি। এর বেশি কিছু জানি না।

অন্যদিকে বালিয়া ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, বিকেলে একটি ভ্যানে মাইক নিয়ে আমার চার কর্মী প্রচারণা চালিয়ে বালিয়া ইউনিয়নের কামারপাড়ার দিকে যাচ্ছিলো। পথিমধ্যে সামনে থেকে আসা প্রায় ৪০-৫০টা মোটরসাইকেলের লোকজন তাদের উপর হামলা চালায়। তারা সবাই নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মুজিবুর রহমান রাজীবের লোক। তারা রড ও লাঠিসোটা নিয়ে আমার চারজন কর্মীকে মারধর করতে থাকে পরে আহত শরিফুলসহ চারজনকেই মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। এক জনের অবস্থা মুমূর্ষু। আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাচন অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি।

অভিযোগের বিষয়ে আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মুজিবুর রহমান বলেন, ঘটনাটি আমার জানা নেই। একটু শুনেছি পোলাপান মারামারি করছে। আমি জানি না। অভিযোগের বিষয়টি আপনার কাছেই শুনলাম।
গাংগুটিয়া ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুর রহমান বলেন, সন্ধ্যার দিকে আমার কর্মী জাকির হোসেন গান্ধুলিয়া গ্রামে পোস্টার লাগাতে গিয়েছিল। এ সময় আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্দুল কাদের মোল্লার ভাতিজা আবুল কাশেম কাশি তাকে বাঁধা দেয়। সে প্রতিবাদ জানালে কাশি তাকে চড়-থাপ্পড় দেয়। এ ঘটনায় আমি থানায় লিখিত অভিযোগ দেবো।

অভিযোগের বিষয়ে গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্দুল কাদের মোল্লার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে ব্যস্ততার অজুহাতে ফোন রেখে দেন তিনি।

গাঙ্গুটিয়ার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাওয়া ধামরাই থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আরাফাত উদ্দিন বলেন, পোস্টার ছেঁড়ার ঘটনা শুনে ঘটনাস্থলে গিয়েছি। প্রাথমিক তদন্তে সত্যতা পেয়েছি। তবে অভিযুক্ত কাউকে ঘটনাস্থলে পাইনি। এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এসব বিষয়ে ঢাকা জেলা সিনিয়র রিটার্নিং অফিসার মনির হোসেন খান বলেন, এখনো কোনো অভিযোগ পাইনি। এসব বিষয় উপজেলা রিটার্নিং অফিসার আছে তারাই ব্যবস্থা নেবেন। নির্বাচনের দায়িত্বই তাদের। রিটার্নিং বরাবর আবেদন করলেই তারা ব্যবস্থা নেবেন।

এম/এ/

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *