ডায়ালসিলেট ডেস্ক::করোনাকালে দেশে ৩ কোটি ২৪ লাখ মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছে বলে এক জরিপে জানা গেছে। চলতি বছরের মার্চ মাসে নতুন দরিদ্রের সংখ্যা ছিল ২ কোটি ৪৫ লাখ। সেই হিসাবে গত ছয় মাসে ৭৯ লাখ মানুষ দরিদ্র হয়েছে। করোনার কারণে চলতি বছর এপ্রিল মাস থেকে দেয়া বিধিনিষেধের পর দরিদ্রের এই সংখ্যা বেড়েছে বলে জরিপে বলা হয়েছে। ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) এবং পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) যৌথভাবে এই জরিপ পরিচালনা করে। বৃহস্পতিবার ‘জীবিকা, খাপ খাইয়ে নেয়া ও উত্তরণে কোভিড-১৯ এর প্রভাব’ শীর্ষক এই জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে।
এতে বলা হয়, করোনাকালে দারিদ্র্যের কারণে দেশের ২৮ শতাংশ মানুষ শহর থেকে গ্রামে চলে যায়। সর্বশেষ জরিপে দেখা গেছে, তাদের মধ্যে ১৮ শতাংশ মানুষ শহরে আবার ফিরে এসেছে। অর্থাৎ ১০ শতাংশ মানুষ এখনো শহরে ফিরতে পারেনি। গত ২১শে আগস্ট থেকে ৮ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত করা এ জরিপে অংশ নেয় ৪ হাজার ৮৭২টি পরিবার। এর মধ্যে শহরের ৫৪ শতাংশ, গ্রামের ৪৫ শতাংশ এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় এক শতাংশ পরিবার ছিল। এর আগে করোনাকালে মানুষের জীবন ও জীবিকার ওপর প্রভাব নিয়ে ৩ দফা জরিপ করে বিআইজিডি ও পিপিআরসি। প্রথম দফায় জরিপ হয় গত বছরের এপ্রিল মাসে। এরপর সেই বছরের জুন মাসে দ্বিতীয় দফায়, তৃতীয় দফায় চলতি বছরের জুন মাসে।
জরিপ প্রতিবেদনটি তুলে ধরে বিআইজিডি’র নির্বাহী পরিচালক ইমরান মতিন বলেন, আয়, বেকারত্ব, খাদ্য গ্রহণ ইত্যাদি নানা খাতে গ্রামের চেয়ে শহরের মানুষ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শহর অঞ্চলের মানুষের আয় কোভিড-পূর্ব সময়ের তুলনায় ৩০ শতাংশ কমে গেছে। গ্রামাঞ্চলে এ আয় কমেছে ১২ শতাংশ। কোভিডের আগে শহরাঞ্চলের দরিদ্র মানুষদের মধ্যে বেকারত্বের হার ছিল ৭ শতাংশ, এটি সর্বশেষ জরিপে বেড়ে দাঁড়ায় ১৫ শতাংশে। গ্রামে বেকারত্ব কোভিডকালে বেড়ে গেছে ৪ শতাংশ। জরিপে দেখা যায়, মানুষের খাদ্যের ক্ষেত্রে ব্যয় কোভিডকালের তুলনায় কমে গেছে। শহরে দরিদ্র মানুষের মাথাপিছু ব্যয় ছিল ৬৫ টাকা। এখন তা ৫৪ টাকা। গ্রামে ব্যয় ছিল ৬০ টাকা, এখন ৫৩ টাকা। শুধু খাদ্য নয়, বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ব্যয়, শিক্ষা ও যোগাযোগ খাতে দরিদ্র মানুষের ব্যয়ও বেড়েছে। এ বছরের মার্চ মাসে শহরের বস্তিতে এ ব্যয় ছিল ৯৩৬ টাকা। গ্রামে এ সংক্রান্ত ব্যয় ৬৪৭ টাকা থেকে বেড়ে হয় ৭৭৭ টাকা। বাড়তি এসব ব্যয় মেটাতে শহরের দরিদ্র এবং গ্রামের মানুষদের ধার করতে হয়েছে। গ্রাম ও শহর- দুই জায়গার দরিদ্র মানুষ সবচেয়ে বেশি ধার করেছে দোকানিদের কাছ থেকে। গ্রামে এই হার ৬২ শতাংশ, শহরে ৬০ শতাংশ। দৈনন্দিন চলার জন্যই সবচেয়ে বেশি ঋণ নেয়া হয়েছে। নতুন এই দারিদ্র্য সাময়িক নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদি। এটি বেশ উদ্বেগের ও ক্ষতিকর বলে উল্লেখ করেন ইমরান মতিন।
জরিপে আরও দেখা যায়, পার্বত্য চট্টগ্রামে দারিদ্র্য পরিস্থিতিও খুব নাজুক। সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী এই এলাকায় ৩৬ শতাংশ মানুষ নতুন করে বেকার হয়ে পড়েছেন। বাংলাদেশের গ্রাম ও শহরের তুলনায় এটি অনেক বেশি। জরিপে গ্রাম-শহর-পার্বত্য এলাকার দরিদ্র মানুষের নানা বিষয়ে উদ্বেগের কথা তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে আছে ঋণ ফেরত দেয়া, চাকরির অনিশ্চয়তা, খাদ্যদ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি, চিকিৎসাসেবা, শিক্ষার খরচ ইত্যাদি।
পিপিআরসি’র নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, দ্বিতীয় দফার করোনা বিধিনিষেধ দারিদ্র্য পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করে তুলেছে। নতুন দরিদ্র মানুষের মধ্যে শহর থেকে গ্রামে চলে যাওয়া মানুষেরাই বেশি। এসব মানুষের জন্য প্রচলিত ধারার দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি নেয়া যাবে না। কারণ, নতুন দরিদ্র হওয়া এসব মানুষ হয়তো কারও কাছে সহায়তাও চাইতে পারবে না। নতুন কাজের সন্ধান চাইবে। নীতিনির্ধারণী স্তরে এসব মানুষের বিষয় সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকতে হবে।
তিনি বলেন, সবচেয়ে বেশি বিপর্যয়ে শহুরে মানুষ। দারিদ্র্যবিমোচনের প্রচলিত প্রচেষ্টায় বা সামাজিক সুরক্ষার চলমান ধারায় এ দারিদ্র্য থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে এ নিয়ে নতুন চিন্তা দরকার। তিনি বলেন, কোভিড থেকে পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টা ভঙ্গুর বলেই মনে হয়েছে। বলা হয়, আমাদের মানুষ সহিষ্ণু। কিন্তু সাধারণ মানুষ ব্যয়ের বোঝা কাঁধে নিয়ে, আরও ঝুঁকি নিয়ে, কীভাবে সহিষ্ণুতার চর্চা করছে, তা নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে পৌঁছায় না। এটা আসলে এক বিপর্যস্ত সহিষ্ণুতা। সাধারণ মানুষের জন্য আরও অনেক কিছু করার আছে।

ডায়ালসিলেট এম/

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *