বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পাসপোর্ট নবায়নের জন্য জন্ম-তারিখ পরিবর্তনের শর্ত দেয়া হয়েছে। কিন্তু ওই শর্তে ইতিবাচক কোনো সাড়া দেয়া হয়নি। এ কারণে ঝুলে রয়েছে তার পাসপোর্ট। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এক সদস্যএই তথ্য জানান। পরে বিএনপি নেতা ও আইনজীবী ব্যারিস্টার এম সারোয়ার হোসেন মানবজমিনকে জানান, আমরা এ ধরনের শর্তের কথা শুনেছি। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের এক নেত্রী আদালতে খালেদা জিয়ার জন্মতারিখ নিয়ে একটি মামলা করেছেন। সেখানে তিনি জানতে চেয়েছেন খালেদা জিয়ার আসল জন্মদিন কবে। এগুলো আসলে রাজনৈতিক মুভমেন্ট। হেয় করার উদ্দেশ্য নিয়েই এ ধরনের মামলা করা হয়েছে। খালেদা জিয়া পাসপোর্টে যে জন্মদিনের কথা বলেছেন সেটাই তার আসল জন্মদিন। এদিকে, বিএনপি ও খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে পাসপোর্ট পেতে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তা দেয়া হয়নি বলে একাধিকবার অভিযোগ করা হয়েছে। খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এবিএম আব্দুস সাত্তার মানবজমিনকে বলেন, বেগম জিয়ার পাসপোর্ট জমা দেয়া আছে। কিন্তু পাসপোর্ট অফিস থেকে এখনো আমাদের কিছুই জানানো হয়নি। এর আগে আমাদের বলা হয়েছিল, ম্যাডামের পাসপোর্ট হয়ে গেছে। এসে নিয়ে যান। যাওয়ার পর বলে, একটু সমস্যা আছে। পরে নিতে হবে। এরপর আর কোনো তথ্য আমাদের জানানো হয়নি। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পাসপোর্ট নবায়নের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। তিনি বলেন, আসলে সরকারের কাছে অন্য কোনো কারণ নেই। প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে কাজগুলো করছে সরকার। যাতে তিনি উন্নত চিকিৎসা না পান। তাকে তিলে তিলে শেষ করা। বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পাসপোর্ট নবায়নের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। ৭ মাস আগে গত ৬ই মে তিনি এই আবেদন করেছিলেন। চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার উদ্দেশ্যে পাসপোর্ট নবায়নের ওই আবেদন করা হয়েছিল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করে বলেছে, খালেদা জিয়া দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ায় আইন অনুযায়ী তার পাসপোর্ট পাওয়ার সুযোগ নেই। সরকার নির্বাহী আদেশে শর্ত সাপেক্ষে খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে তাকে বাসায় থাকার সুযোগ দিয়েছে। বর্তমানে তিনি অসুস্থ হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তার পরিবার তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে একাধিকবার সরকারের কাছে আবেদন করেছে। সম্প্রতি আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার আবেদন আগে দুইবার আইনিভাবে প্রত্যাহার করা হয়েছিল। বর্তমান আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এবং সার্বিক বিষয়ে আইনে কোনো উপায় আছে কি-না, সে ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। এ অবস্থায় বিদেশ যাওয়ার অনুমতি পেলেও খালেদা জিয়াকে নতুন করে পাসপোর্ট নবায়নের জন্য আবেদন করতে হবে। ২০১৪ সালের ১৮ই মে খালেদা জিয়ার নামে এমআরপি পাসপোর্ট দেয়া হয়। ২০১৯ সালের ১৭ই মে পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়। এমআরপি পাসপোর্টে তার জন্মস্থান লেখা রয়েছে দিনাজপুর। গত ৬ই মে খালেদা জিয়ার মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) নবায়নের আবেদন করা হয়। এখন দেয়া হচ্ছে ই-পাসপোর্ট। তাই নবায়ন করতে হলে খালেদা জিয়াকেও ই-পাসপোর্টের আবেদন করতে হবে। এমআরপি পাসপোর্ট হলে নতুন করে ছবি তোলা ও আঙ্গুলের ছাপ না নিয়েই নবায়নের সুযোগ ছিল। ই-পাসপোর্টের বেলায় নতুন করে ১০ আঙ্গুলের ছাপ ও চোখের ছবি নিতে হয়। তবে বিশেষ প্রয়োজনে এমআরপি পাসপোর্ট দেয়ার সুযোগ আছে বলে জানিয়েছেন পাসপোর্ট অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

 

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *