সদা হাস্যোজ্জ্বল ও চঞ্চল শিশু তফাজ্জল এখন শরীরে পুলিশের ছোড়া গুলির শত শত স্প্লিন্টার নিয়ে হাসপাতালে কাতরাচ্ছে। গত সোমবার ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন দেখতে অন্যদের সঙ্গে সে-ও বাড়ির পাশে ভোটকেন্দ্রে যায়। পরে ফলাফল ঘোষণা জানতে বাইরে অপেক্ষায় থাকা অবস্থায় এক গোলযোগের মধ্যে পুলিশের ছোড়া গুলি থেকে শত শত স্প্লিন্টার বিদ্ধ হয়ে সে রক্তাক্ত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। অনেকের সঙ্গে তাকেও উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়।

 

তিন দিন ধরে শিশুটি হাসপাতালের আইসিইউতে।
জানা যায়, শিশুটি ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মগটুলা ইউনিয়নে শ্রীরামপুর গ্রামের মৃত ফখরুল ইসলামের ছেলে। মাত্র সাত মাস বয়সে বাবা মারা যায়। গৃহপরিচারিকা মা আর এক ভাই তার। ভাই জুয়েল অটো চালিয়ে সংসারের ভার কাঁধে নিয়েছে।

আজ বুধবার সকালে তাদের বাড়িতে গেলে মা ও ভাইকে পাওয়া যায়নি, দেখা মেলে ফুফু বেদেনা বেগমের। তফাজ্জলের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাবা হারা ছেড়াডারে সবাই আদর করে। ইস্কুলে টুয়ে পড়ে। সারা দিনই এইবাড়ি-ওইবাড়ি দৌড়াদৌড়ি করে। ভোটের দিন মনে অইছে তার ঈদ লাগছে। এই যায় এই বাড়িত আয়ে। দুপুরের পর থেকে আর বাড়িত আইছে না। সন্ধ্যার পর মাইনষে কয় ছেড়াডারে পুলিশ গুলি করছে। এরপর তো হাসপাতালো। বাঁচে কি না কইতাম পারতাম না। আপনেরা তার চিকিৎসা করানোর ব্যবস্থা করুইন। ‘

স্থানীয় চান মিয়া জানান, ভোটের ফলাফল ঘোষণা না করেই নির্বাচনী সরঞ্জাম নিয়ে গাড়িতে করে চলে যাচ্ছিলেন ভোটকেন্দ্রে কর্মরত নির্বাচনী কর্মকর্তা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকজন। এ খবর পেয়ে আব্দুর হাই (ফুটবল) নামে একজন মেম্বার পদপ্রার্থীর সমর্থকরা সড়কে দাঁড়িয়ে গাড়িটিকে বাধা দেয়। এ সময় গাড়ি থেকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নেমে জনতার ওপর গুলিবর্ষণ করে। তখন ভয়ে লোকজন সড়ক ছেড়ে আশপাশের ধানক্ষেতে নেমে আত্মরক্ষা করে। পরে নির্বাচনী কর্মকর্তা, সরঞ্জাম ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য বোঝাই গাড়িটি দ্রুত উপজেলা সদরের দিকে চলে যায়।

চান মিয়া আরো জানান, এ ঘটনার পর এলাকার লোকজন নিখোঁজ কয়েকটি শিশু ও তরুণের খোঁজ করতে শুরু করে। পরে গোঙানির আওয়াজ শুনে তফাজ্জল ও শুভ নামে দুজনসহ আর অনেককেই রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

হাসপাতালে থাকা শিশু তফাজ্জলের ভাই জুয়েল বুধবার রাতে জানান, এখনো তফাজ্জল হাসপাতালের আইসিইউতে। পুলিশের লোকজন মাঝেমধ্যে আসে-যায়।

 

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *