দিরাই প্রতিনিধি :: সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায় বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিমের ১০৬ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে দুই দিনব্যাপী লোক উৎসব শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার রাত পৌনে ৯টায় শাহ আব্দুল করিম স্মৃতি পরিষদ ও ধল গ্রামবাসীর আয়োজনে বাউল সম্রাটের বাড়ি দিরাই উপজেলার উজানধল গ্রামের মাঠে দুইটি দলীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এ লোক উৎসব।
এরপর রাত ৯ টায় আলোচনা সভায় বাউল পুত্র শাহ নূর জালালের সভাপতিত্বে ও শাহ আবদুল করিম স্মৃতি পরিষদের কোষাধ্যক্ষ আপেল মাহমুদ ও সহ সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার সরকারের যৌথ পরিচালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাখেন- দিরাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মঞ্জুর আলম চৌধুরী। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. কামাল মিয়া, দিরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদুর রহমান, দিরাই উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মোহন চৌধুরী প্রমুখ।
আলোচনা সভা শেষে শুরু হয় শাহ আব্দুল করিমের ভক্তদের অংশগ্রহণে গানের অনুষ্ঠান। রাতভর চলবে গান ও আব্দুল করিমকে নিয়ে স্মৃতিচারণ। এছাড়াও সঙ্গীত পরিবেশন করতে সিলেট-ঢাকা থেকে এসেছেন সঙ্গীত শিল্পী। স্থানীয় বাউল আব্দুর রহমান, সিরাজ উদ্দিন, ফয়সাল শাহ আব্দুল করিমের বিভিন্ন আধ্যাত্মিক মরমী ও সারি গান পরিবেশন করবেন।
আব্দুল করিমের ছেলে শাহ নূর জালাল বলেন, কোনো ধরনের পৃষ্ঠপোষকতা না পাওয়ায় শাহ আব্দুল করিম পরিষদ ও গ্রামবাসীর উদ্যোগেই উৎসব করছি। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্তরা এসেছেন এ উৎসবে।
শাহ আব্দুল করিম ১৯১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি গ্রামটির এক দরিদ্র মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। অভাবের তাড়নায় তিনি স্কুল ছেড়ে হয়ে যান গৃহস্থের বাড়ির রাখাল। পড়াশোনা না করতে পারলেও মুখে মুখে গান রচনা করে গাইতে শুরু করেন। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, চুয়ান্নর যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন, সাতান্নর কাগমারী সম্মেলন, উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, নব্বইয়ের গণ আন্দোলনসহ প্রতিটি আন্দোলন- সংগ্রামেই তিনি গানকে হাতিয়ার হিসেবে নিয়েছেন। আব্দুল করিমের গানে ফুটে উঠেছে সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার কথা, আছে শোষিত, বঞ্চিত, নির্যাতিত মানুষের অধিকারের কথা। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু দিরাইয়ে এসে গান শুনে তাকে পুরস্কৃত করেন। এছাড়াও মাওলানা ভাসানীসহ দেশের অনেক বড় বড় ব্যক্তিত্বের মঞ্চে তিনি গান পরিবেশন করেন।
উল্লেখ্য, জীবনের শেষ সময়ে বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিম চেয়েছিলেন তার প্রতিষ্ঠিত সঙ্গীতালয়টি পূর্ণাঙ্গ রূপ লাভ করুক। এখান থেকে শুদ্ধ সুরে বাউল গান ছড়িয়ে দেওয়ার স্বপ্ন ছিল তার। তবে, এখনো সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন হয়নি। ২০০৬ সাল থেকে এই লোকউৎসব উদযাপিত হচ্ছে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *