মনজু চৌধুরী॥ শস্য ভান্ডার খ্যাত মৌলভীবাজারে ক্রমাগতহারে বিলীন হচ্ছে সোনা ফলানো ফসলি জমি। রাস্তার পাশে এসব ফসলি জমি ভরাট করে অপরিকল্পিত ও লাগামহীনভাবে বসতঘর, রাস্তাঘাট, দালানকৌঠা ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। কয়েক বছর আগেও যে জমিতে আউস, আমন, সাইলসহ রবি মৌসুমে বিভিন্ন জাতের চাষাবাদ হতো, সে জমিতে এখন শোভা পাচ্ছে আবাসিক, বাণিজ্যিক আর বহুতল ভবন। জমির উর্বর মাটি ইটভাটায় ও অব্যাহতহারে ভরাট হওয়ায় কৃষিজমি হ্রাস পেয়ে ভবিষ্যতে খাদ্য নিরাপত্তার হুমকি আর পরিবেশ বিপর্যয়েরও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট তথ্যে জানা যায়, প্রতি বছর দেশে কমে যাচ্ছে মূল জমির আয়তনের এক ভাগ ফসলি জমি। তবে ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন তথা ফসলি জমি ধ্বংসের যে প্রবণতা তার পরিমাণ আরও অধিক বলে ধারণা করা হচ্ছে। মৌলভীবাজারে ফসলি জমির মধ্যে দু’ফসলি এমনকি তিন ফসলি জমিও রয়েছে। কৃষি ভান্ডার খ্যাত এই জেলায় এক সময়ে প্রচুর সংখ্যক খাদ্যশস্য উৎপাদন হতো। বর্তমানে বিভিন্ন স্থানে ফসলি জমি রূপান্তরিত হওয়ায় খাদ্যশস্যের ওই জায়গা সমুহে স্থান পাচ্ছে ইট দালানের ঘরে। অপরিকল্পিত বসতবাড়ি, কলকারখানা, আবাসন, রাস্তাঘাট, ইটভাটা, পুকুর খনন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ সহ নানা রকম স্থাপনা যত্রতত্র গড়ে উঠছে। ফলে ফসলি জমি বিলীন হচ্ছে। ফলে কয়েক বৎসর পর কৃষি উৎপাদন মারাত্মকহারে হ্রাস পাবে।
জেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, বর্তমান সময়েও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করেও প্রচুর পরিমাণে কৃষি উৎপাদন হচ্ছে এই উপজেলায়। তবে গত কয়েক বছর যাবত প্রবাসী, চাকুরীজীবি ও ব্যবসায়ীরা রাস্তার পাশে ফসলি জমিতে আলিশান দালানকৌঠা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নির্মান করছেন। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপজেলা পর্যায়ের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা গোপাল দেব বলেন, মৌলভীবাজারের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রবাসীদের আয়ের একটি বড় অংশ বাসা-বাড়ি, দালান, অট্রালিকা নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে। এদের পঁচাত্তর ভাগই রাস্তার ধারের কৃষিজমি।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, ফসলি জমির আশেপাশে বাড়িঘর ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান নির্মাণ, ইটভাটা এসবের কারনে জমির পরিমাণ ও ফসলের চাষাবাদ কমে যাচ্ছে। তবে অপরিকল্পিতভাবে কৃষিজমি ভরাট হওয়ায় উপজেলায় আউস, আমন, বোরো ও রবিশস্য উৎপাদন উত্তরোত্তর হ্রাস পাচ্ছে।
কমলগঞ্জের সমাজকর্মী তোয়াবুর রহমান, রাজনৈতিক নেতা ডা. শহীদ সাগ্নিক, কৃষক নেতা সিদ্দিকুর রহমান সহ স্থানীয় সচেতন মহল জানান, ফসল উৎপাদন কমে যাবার অন্যতম কারণ হচ্ছে কৃষিজমির পরিমাণ ক্রমশ কমে যাওয়া। কয়েক বছর আগেও কৃষিজমির পরিমাণ যা ছিল আবাসিক চাহিদা, শিক্ষা প্রতিষ্টান বা নদী ভাঙ্গনে অনেকটা কমে গেছে। তারা আরও বলেন, বন্যা, খরা, অতিবৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি, পাহাড়ি ঢলসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় খাদ্য ঘাটতি ও পরিবেশ বিপর্যয়েরও আশঙ্কা রয়েছে।
এ ব্যাপারে মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের জেলা প্রশিক্ষণ অফিসার মো. শামসুদ্দীন আহমদ বলেন, আসলে কৃষিজমি সুরক্ষা আইন যথাযথভাবে কার্যকর না হওয়ার কারনে অপরিকল্পিতভাবে কৃষিজমি ভরাট ও স্থাপনা রোধ সম্ভব হচ্ছে না। তবে এসব বিষয়ে জনসচেতনতার প্রয়োজন।
পরিবেশ অধিদপ্তর মৌলভীবাজারের সহকারী পরিচালক বদরুল হুদা বলেন, কৃষিজমি ভরাটের এই চিত্র দেশ জুড়েই চলছে। ফসলি জমির উর্বর মাটি ইটভাটায় চলে গেলে জমিতে ফসল উৎপাদনে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব পড়ে। এসব বিষয়ে সংবাদ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *