ডায়াল সিলেট ডেস্ক :: সিলেটের বিয়ানীবাজার পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছেন ১০ জন। ১০ মেয়র প্রার্থীই প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। সঙ্গে কর্মী সমর্থকদের বিশাল বহর পথে দোকানে, বাসা বাড়িতে গিয়ে ভোট চাচ্ছেন, নানা প্রতিশ্রুতিও দিচ্ছেন। লোকজনও কৌতূহল নিয়ে তাদের কথা শুনছেন। তবে ভোটারদের আলোচনায় রয়েছেন মূলত চার জন প্রার্থী।
এদিকে সোমবার মধ্যরাতে শেষ হয় সব ধরনের প্রচার-প্রচারণা। নির্বাচনের আর মাত্র এক দিন বাকি। এখন চলছে ভোট নিয়ে শেষ মুহূর্তের হিসেব নিকেষ।
পৌরসভার ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সাধারণ ভোটারদের ধারণা, মূল প্রতিদ্বন্ধিতা হবে চার প্রার্থীর মধ্যে। এবার মেয়র পদে কে নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন- এ নিয়ে নানা বিশ্লেষণ চলছে সচেতন ভোটারদের মধ্যে। শেষ মুহুর্তে মূল লড়াইয়ে কারা থাকছেন এ নিয়েও চলছে আলোচনা।
জনসমর্থন ও প্রচার-প্রচারণায় এগিয়ে থাকা এই চার প্রার্থী হলেন- আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আব্দুস শুক্কুর(নৌকা), আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক জিএস ফারুকুল হক (চামচ), সাবেক পৌর প্রশাসক তফজ্জুল হোসেন (জগ) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুস সবুর (মোবাইল ফোন)।
নিজস্ব ভোট ব্যাংক, ব্যাক্তি ইমেজ আর আঞ্চলিকতায় এই চার প্রার্থীদের এগিয়ে থাকায় তাদের মধ্যে লড়াইয়ের আভাস দিচ্ছেন সাধারণ ভোটারা। তবে শেষ পর্যন্ত কে পৌরসভার দায়িত্ব পাবেন তা নির্ধারণ করবে নিরব ভোটার।
বিয়ানীবাজার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আতাউর রহমান খান বলেন, নৌকার বিজয়ের ক্ষেত্রে বিদ্রোহী প্রার্থী কোন বাধা নয়। আঞ্চালিকতায় নৌকার কিছু ভোট অন্য দিকে মুভ করতে পারে। ভোটের সময় যত এগোচ্ছে নৌকার ভোট বাড়তে শুরু করছে। তবে দিন শেষে বিয়ানীবাজারে নৌকার বিজয় নিশ্চিত হবে।
আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ফারুকুল হক বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেও গত পাঁচ বছরে বিয়ানীবাজারে তেমন উন্নয়ন হয়নি। মেয়রের কর্মকান্ডে কোনো জবাবদিহিতা ছিল না। ফলে মানুষ তার ওপর ক্ষুব্ধ। মানুষের ক্ষোভ আঁচ করতে পেরেই আমি প্রার্থী হয়েছি।’
নির্বাচিত হলে পৌরবাসীর নাগরিক অধিকার শতভাগ নিশ্চিতকরণ, উন্নয়ন প্রকল্পের সমবণ্টন ও জবাবদিহি নিশ্চিত করবেন বলে জানান ফারুকুল হক।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. আব্দুস শুকুর বলেন, ‘আমি বিগত পাঁচ বছরে পৌরসভার যে উন্নয়ন করেছি, পৌরবাসী তার মূলায়ন করবে। নৌকা প্রতীক হচ্ছে উন্নয়নের প্রতীক- বিয়ানীবাজারের জনগণ তা জানে। তাই এবারের নির্বাচনেও তারা ভুল করবেন না।’
সাবেক পৌর প্রশাসক তফজ্জুল হোসেন বলেন, ‘আমি ১৭ বছর পৌরসভা মানুষকে সেবা দিয়ে গেছি। কিন্তু গত পাঁচ বছর প্রবাসী অধ্যুষিত বিয়ানীবাজার পৌরসভায় যেভাবে উন্নয়ন হওয়ার কথা ছিল তার কিছুই হয়নি। পৌরবাসী নাগরিক সুবিধা বঞ্চিত ছিল। তাই আমি আবার প্রার্থী হয়েছি। জনগণ গত পাঁচ বছরের কর্মকান্ডে বিরক্ত। তাই তারা এবার আমাকে নির্বাচিত করবে।’
বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্র জানায়, আগামী ১৫ জুন অনুষ্ঠিতব্য এই নির্বাচনে বিয়ানীবাজার পৌরসভার ২৭ হাজার ৭শত ৯৩জন ভোটার প্রথমবারের মতো ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) এর মাধ্যমে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। মেয়র পদে প্রার্থী ১০ জন। আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মো. আব্দুস শুকুর (নৌকা),আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী আহবাবুর রহমান সাজু (কম্পিউটার) প্রতীক, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ফারুকুল হক (চামচ) ও আব্দুল কুদ্দুছ টিটু (হেলমেট), স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রভাষক আব্দুস সামাদ আজাদ (হ্যাঙ্গার), মোহাম্মদ অজি উদ্দিন (নারিকেল গাছ) মোহাম্মদ আব্দুস সবুর (মোবাইল ফোন), সাবেক পৌর প্রশাসক তফজ্জুল হোসেন (জগ), জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী মো. সুনাম উদ্দিন (লাঙল) এবং বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ আবুল কাশেম (কাস্তে)।
সুজন বিয়ানীবাজার উপজেলা শাখা’র সভাপতি এডভোকেট মো. আমান উদ্দিন বলেন, এখন পর্যন্ত নির্বাচনী পরিবেশ খুবই সুন্দর। প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থীদের মধ্যে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির ধারা বিরাজমান রয়েছে। তিনি নির্বাচন কমিশনের কাছে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রত্যাশা করেন তিনি।
বিয়ানীবাজার পৌর নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন জানান, ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যা করণীয় তাই করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণের ব্যাপারে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে এবং ভোটের আগেই কেন্দ্রে ইভিএম পাঠিয়ে সাধারণ ভোটারদেরকে ভোট প্রয়োগের ব্যাপারে জানানো হবে।’

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *