মনজু চৌধুরী॥ ‘আসমানীরে দেখতে যদি তোমরা সবে চাও, রহিমদ্দির ছোট্ট বাড়ি রসুলপুরে যাও।’ পল্লীকবি জসীম উদ্দিনের কবিতার আরেক বাস্তব চিত্র যেনো ফুটে ওঠেছে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায়। ষাট বছরের বৃদ্ধ কৃষক নৃপেন্দ্র নাথের মাটি, বাঁশ বেড়া আর টিনের চালে অজস্র ছিদ্র থাকা ঘরে। সেই ঘরে তাঁর স্ত্রী অপর্ণা দেবনাথ ও একমাত্র ছেলে নয়ন দেবনাথকে নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন নৃপেন্দ্রনাথ। তাঁর বাড়ি উপজেলার জয়চন্ডী ইউনিয়নের আবুতালিবপুর গ্রামে।

নৃপেন্দ্র নাথ এখন নানা অসুখে প্রায় কর্মহীন। স্ত্রী অর্পণা দেবনাথও (৫২) অসুস্থ। একমাত্র ছেলে নয়ন দেবনাথ রং মিস্ত্রীর যোগালী (সহকারি) হিসেবে কাজ করেন। সেটা দিয়ে তাদের তিনজনের পরিবারের আহার জোটে। নৃপেন্দ্রনাথ বলেন, ‘বৃষ্টির ফোটা পড়ে যেন ঘরের কাপড়, বিছানা তোষক ও কাথাগুলো  না ভিজে যায় সেজন্য টিনের ছিদ্রের বিপরীতে একটি করে বাসন পাতিল রেখে দিয়েছি। নিজেও পাত্র ধরে আছি। তবুও কাজ হচ্ছে না। বৃষ্টি হলেই আমি ও আমার বউ মিলে বাসন-পাত্র হাতে নিয়ে সারারাত বসে থাকি। যেন বিছানাটা অন্তত শুকনো থাকে। ঘরের মেঝেতে কাঁদাপানি। দেয়ালগুলোও হেলে গেছে। কখন জানি ধসে পড়ে আমাদের ওপর। সব সময় আতঙ্কে থাকি। ঘরটা ভেঙে গেলে কোথায় থাকবো। কে দেবে ঘর, কিভাবে বাঁচবো এই বৃষ্টির মাঝে। দু একদিন হয়তো কারো ঘরে আশ্রয় নিতে পারবো। বাকি দিনগুলো কোথায় থাকবো। ছেলেটা একাই রোজগার করে তিনজনের সংসার চালায়। ঘর বানানো অসম্ভব।নৃপেন্দ্রনাথ আরো বলেন, এরকম বন্যার পানি আর কোনোদিন দেখছি না। ঘরেও পানি উঠি গেছে। চেষ্টা করছি থাকার জন্য। হেলে পড়া ভাঙা ঘরটি এখন শেষ ভরসা। কোনমতে টিকানির চেষ্টা করা আরকি। কি করবো কেউ তো আর আমাদের খেয়াল রাখেনা। আগে বর্গা চাষ করতাম। অসুখে এখন সেটাও করতে পারিনা।

নৃপেন্দ্রনাথের স্ত্রী অর্পণা দেবনাথ বলেন, ‘দু’জনের অসুখ। আমার ছেলের কাজ নেই বন্যার জন্য। দেবরের ঘর থেকে খাবার এলে খেয়ে থাকি। ত্রাণ হিসেবে চাল-আলু এসব পেয়েছি। চুলা ভেঁজা তাই রান্নাও করতে পারছিনা। এর মাঝে কয়েকদিন থেকে দিনে রাতে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টি হলে নির্ঘুম থেকে টিনের চালের ছিদ্র দিয়ে পড়তে থাকা পানি আটকানোর জন্য বসে থাকি। ঘর থেকেও বের হতে পারছিনা বন্যার পানি বাড়ি ও রাস্তাঘাটে। আরো বৃষ্টি দিলে আমাদের ঘরের ভেতর বন্যার পানি প্রবেশ করবে। খুবই কষ্টের মাঝে আছি। কখন যে ঘর ভেঙে পড়ে।’

স্থানীয় বাসিন্দা নিয়াজুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টি হলেই নৃপেন্দ্র নাথ তাঁর স্ত্রীকে নিযে বালতি-পাতিল নিয়ে টিনের চালের ছিদ্র দিয়ে গড়িয়ে পড়া পানি আটকাতে ব্যস্ত থাকেন। ঘরের দেয়ালও নড়বড়ে। ঝড় কিংবা পানির স্রোত এলেই নৃপেন্দ্র’র ঘর পড়ে যাবে। খুবই কষ্টের মাঝে দিনরাত কাটাচ্ছে এই পরিবার। সরকারী সহযোগিতা কিংবা সমাজের বিত্তশালীরা যদি এগিয়ে আসেন তাহলে নৃপেন্দ্রনাথের পরিবারের মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু পাবে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *