ডায়াল সিলেট ডেস্ক :: সিলেট জেলায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি মেরামত ও গৃহনির্মাণের জন্য পাঁচ হাজার পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
রোববার দুপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে বন্যার্তদের পুনর্বাসন ও ত্রাণ বিতরণ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবুর রহমান। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে পাঁচ কোটি টাকার আর্থিক অনুদানের চেক পাওয়া গেছে। পাঁচ হাজার পরিবারকে ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। সোমবার (৪ জুলাই) থেকে অনুদানের এই অর্থ বিতরণ প্রক্রিয়া শুরু হবে।
বন্যাকবলিত সিলেট জেলায় তিন কোটি টাকার বেশি নগদ অর্থ বিতরণ করা হয়েছে জানিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, বিতরণকৃত অর্থের মধ্যে সরকারিভাবে প্রাপ্ত ২ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে শিশুখাদ্যের জন্য ১০ লাখ টাকা, গো-খাদ্যের জন্য ১০ লাখ টাকা রয়েছে। এছাড়া ১ হাজার ৬১২ মেট্রিক টন চাল ও ২০ হাজার ২১৮ প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
এছাড়া বন্যার প্রথম পর্যায়ে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, সিভিল সার্জনের কার্যালয়, সিলেট সিটি করপোরেশন ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলের মাধ্যমে বন্যা উপদ্রুত এলাকায় পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট এবং বোতলজাত পানি সংগ্রহ করে বন্যাদুর্গতদের মধ্যে সরবরাহ করা হয়।
তিনি বলেন, বন্যার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ৭ হাজার ২৪৬টি জেরিকেন (১০ লিটার), ১ হাজারটি হাইজিন কিট, ২ হাজার ৯০০ কেজি ব্লিচিং পাউডার, ১৩ লাখ ১০ হাজার পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট সরবরাহ করা হয়েছে। ৫৫৬টি নলকূপ জীবানুমুক্তকরণ, ২৩০টি নলকূপ মেরামত এবং ৩১৮টি নলকূপ উঁচু করা হয়েছে। পাশাপাশি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের মাধ্যমে ৩ লাখ ৮০ হাজার বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হয়েছে। বন্যা কবলিত এলাকায় ১৪০টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। বন্যাকালীন ও বন্যা পরবর্তী বিভিন্ন রোগের প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
জেলা প্রশাসক আরও জানান, এখনো জেলায় বন্যা পরিস্থিতি বিদ্যমান থাকায় ত্রাণ কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে আরও নগদ বিতরণের জন্য ৫০ লাখ টাকা, শিশুখাদ্যের জন্য ১০ লাখ টাকা এবং গো-খাদ্যের জন্য আরও ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ চেয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
মো. মজিবুর রহমান জানান, ১৪ জুন থেকে শুরু হওয়া বন্যায় সিলেট জেলায় ৬৫৪টি আশ্রয়কেন্দ্রে ২ লাখ ৩০ হাজার ৬৩২ জন মানুষ আশ্রয় নেন। বেশিরভাগ এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় লোকজন আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে নিজেদের বাসা-বাড়িতে ফিরে গেছেন। তবে এখনো ৪১৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৩৫ হাজার ৬৮৫ জন লোক অবস্থান করছেন। এছাড়া আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ৩১ হাজার ৯৭টি গবাদিপশু নিয়ে এসেছিলেন বন্যাকবলিতরা। বর্তমানে ৫৩০টি গবাদিপশু আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছে।
জেলা প্রশাসক জানান, দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় সিলেট সিটি করপোরেশনসহ জেলার ১৩টি উপজেলার ১০৫টি ইউনিয়ন ও পাঁচটি পৌরসভা প্লাবিত হয়েছে। বন্যায় জেলার ৪ লাখ ৮৪ হাজার ৩৮৩টি পরিবারের ৩০ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন। প্রায় ৪১ হাজার ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ ও আংশিক ক্ষতি হয়েছে। হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমির ক্ষতি হওয়া ছাড়াও বন্যায় প্রাণহানি হয়েছে ১০ জনের।
সংবাদ সম্মেলনে স্থানীয় সরকার বিভাগ সিলেটের উপ-পরিচালক মামুনুর রশিদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. আনোয়ার সাদাত, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) ইয়াসমিন নাহার রুমা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
