মনজু চৌধুরী: পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া ঘরটির দিকে তাকিয়ে চোখের পানি মুছছিলেন কমলগঞ্জ উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা মহাব্বত আলীর বিধবা স্ত্রী নূরজাহান বেগম। একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়েছেন কিছুদিন আগে।এখন মাথা গোজার একমাত্র আশ্রয়টুকু ও হঠাৎ আগুনে পুড়ে নিঃস্ব করে দিয়েছে মৌলভীবাজারের এই অসহায় নারীকে। সংবাদ পাওয়া মাত্রই ঘটনাস্থলে পৌছে গেলেন জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান।নগদ টাকা, শুকনো খাবারসহ থাকার ব্যবস্থা করে দিলেন তাকে।সেই সাথে রেলওয়ের জায়গা থেকে ৫ শতক খাস জমি বের করে তার স্থায়ী থাকার বন্দোবস্ত করে দেবার নির্দেশনা দেন।বিধবা নূরজাহান সেদিন যেন তার হারিয়ে যাওয়া ছেলেকেই খুজে পেলেন।তার চোখ বেয়ে পড়ছিলো আনন্দাশ্রু। এমনই অজস্র আনন্দাশ্রু ঝরেছে যে মানুষটির কারণে,তিনি হলেন মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান। যিনি শুধু জেলা প্রশাসকের নিয়মিত কর্মকান্ডের মধ্যেই নিজেকে সীমিত রাখেন নি। মানবতার টানে পুরো জেলা জুড়েই তার বিচরণ, অবিরাম ছুটে চলা। সমাজের প্রতিটি শ্রেণির মানুষের মুখে হাসি ফোটানোই তার এই দুর্নিবার যাত্রার উদ্দেশ্য। পথশিশুদের ঈদ উপহারের ব্যবস্থা করা,তাদের অন্নসংস্থানের খোজ রাখা, অসহায় পরিবহন শ্রমিক ও নিম্ন আয়ের মানুষের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ, কিংবা চা বাগানের মাহাতো সম্প্রদায়ের মোহনলাল মাহাতোর পরিবারের অসহায় প্রতিবন্ধী সদস্যদের জীবনমান উন্নয়নে প্রত্যক্ষভাবে এগিয়ে আসা এইসবই তার মানবিক কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম। স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য টিসিবির পণ্য বিতরণ কার্যক্রম সরাসরি তত্ত্বাবধান করছেন শুরু থেকেই।বিগত দিনগুলিতে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘরে আশ্রয় পাওয়া পরিবার গুলির জীবনযাত্রার মান কতটুকু উন্নত হয়েছে তা জানতে বিভিন্ন সময়ে সেখানে নিজেই ছুটে গিয়েছেন। শুধু সাহায্য -সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েই দায়িত্ব শেষ করেন নি।নিয়মিত তদারকি করেছেন।
প্রতিবছর সরকারি শিশু পরিবারের কোমলমতি শিশুদের সাথে ইফতার করা,নিয়মিত সশরীরে সেখানে গিয়ে তাদের খোজখবর নেওয়া ও তাদের মধ্যে খেলাধুলার উপকরণ বিতরণ করার মতো কাজগুলি করতে তিনি আনন্দ খুজে পান। প্রকৃত অভিভাবকের মতই তাদের আগলে রেখেছেন এই মমতাবান মানুষটি। শীতের রাতে কম্বল নিয়ে ছুটে গিয়েছেন অসহায় বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের বাড়ি,ধর্ম, বর্ণের উর্ধে গিয়ে তাদের জীবনকে একেবারে কাছে থেকে প্রত্যক্ষ করেছেন। শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা,ভূমিধস,পাহাড়ি ঢল,কিংবা বন্যার মতো সকল প্রাকৃতিক দুর্যোগকে উপেক্ষা করে মানুষের সেবায় ঝাপিয়ে পরেছেন। প্রত্যন্ত অঞ্চলে নৌকায় করে ত্রাণ পৌছে দিয়েছেন বন্যার্তদের।বন্যার পানি ভেদ করে ত্রাণ হাতে হেটে আসা স্বয়ং জেলা প্রশাসককে দেখে সাহস পান বন্যা কবলিত মানুষেরা।বিশ্বাস করেন এই জেলার সর্বোচ্চ পদধারী মানুষটির মন ও তাদের দুঃখে ব্যথিত হয়। আর তিনি আছেন বলেই তারা আর কোন কিছুকে ভয় পান না।