মনজু চৌধুরী: মৌলভীবাজার জেলার ৫টি উপজেলার কমবেশি অধিকাংশ লোকজনই বন্যাকবলিত। জীবন বাঁচাতে ১২৯টি আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়াও অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন বন্যার্তরা। ঘরবাড়ি ছেড়ে যাওয়ার প্রায় ২৩ দিন। কিন্তু বানের পানি কিঞ্চিত কমলেও এখন তা দীর্ঘস্থায়ী হয়ে জলাবদ্ধতায় রূপ নিচ্ছে। এখনো বন্যাকবলিত এলাকাগুলোর ঘরবাড়িতে কোমর কিংবা গলা পানির দখলে। অধিকাংশ রাস্তাঘাটও ডুবন্ত। তাই সহসা বাড়ি ফেরার কোনো সুযোগ নেই আশ্রয়কেন্দ্র্র ও অন্যত্র থাকা বানভাসি মানুষের। জেলার হাকালুকি হাওর পাড়ের কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে খুবই ধীর গতিত। একই অবস্থা মৌলভীবাজার সদর ও রাজনগর উপজেলার কুশিয়ারা নদীতীরের কয়েকটি ইউনিয়নের ৫০-৬০টি গ্রামেরও। জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে জেলার সবক’টি আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন প্রায় ২১ হাজার বন্যার্ত মানুষ। বন্যাকবলিত হয়ে নানা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন প্রায় সাড়ে ৪ লক্ষাধিক মানুষ। তাদের খাদ্য, বিশুদ্ধ খাবার পানি, স্যানিটেশনের সংকট প্রকট। এরই সঙ্গে বানভাসিদের পিছু নিয়েছে নানান পানিবাহিত রোগবালাই। বরং প্রতিদিনের দু’বেলা দু’মুঠো খাবারের নিশ্চয়তা নিয়ে যত উদ্বিগ্নতা।ঈদের দিনক্ষণ ঘনিয়ে আসায় পরিবারের শিশুদের নানা আবদার। কিন্তু তাদের এমন আবদারে সাড়া দেয়ার সাধ্যটা কোথায়। তাই দু’চোখের নীরব অশ্রুই এখন তাদের একমাত্রই সম্বল। তারা জানালেন প্রতিবছরই ওদের কমবেশ আবদার মেটাতে পারলেও এ বছর ভিন্নতা। বাড়ি নেই। ঘর নেই। খাবারেও নেই কোনো নিশ্চয়তা। কোনোরকম গাদাগাদি করে ঠাঁই নিয়েছেন বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রে। তাই তাদের এমন অসহায়ত্ব। পানিতে টইটুম্বর হাকালুকি হাওর ও কুশিয়ারা নদী। নিজের জলসীমা ছাড়িয়ে এখন গ্রাস করেছে তীরবর্তী বাড়িঘর। বন্যায় উত্তাল হাওর ও নদী জোরপূর্বক বাড়িয়েছে নিজের আয়তন। এমন রাক্ষুসে আচরণে গৃহহীন হাওর ও নদী তীরের মানুষ। তাই পরিবার-পরিজন নিয়ে বন্যায় ছেড়েছেন বাড়ি। ঠাঁই নিয়েছেন অন্যত্র। জীবন বাঁচাতে জীবন যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন হাওর ও নদীতীরের দুর্ভোগগ্রস্ত অসহায় মানুষ।
সরজমিন হাকালুকি হাওর পাড়ের কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা আর কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী মৌলভীবাজার সদর ও রাজনগর উপজেলার বন্যাকবলিত এলাকায় গেলে দেখা মেলে এমন দৃশ্য। ঘরবাড়ি রাস্তা-ঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় উপাসনালয় আর ক্ষেত কৃষি, মৎস্য খামার সবই পানির নিচে। কথা হয় আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা একাধিক বানভাসি পরিবারের সঙ্গে তারা জানালেন আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতেও নেই কোনো প্রশান্তি। এমনিতে জেলাজুড়ে পর্যাপ্ত নয় হাওর ও নদীতীরের আশ্রয়কেন্দ্র। তেমনি নেই বিশুদ্ধ পানি কিংবা স্যানিটেশনের সু-ব্যবস্থাও। তাই কোনোরকম অনেকটা জীবন বাঁচানোর তাগিদেই ওখানে পড়ে থাকা। আসছে ঈদে তাদের কী প্রস্তুতি জানতে চাইলে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তারা বলেন, যেখানে তিন বেলা ভাতের নিশ্চয়তা নেই সেখানে নতুন জামাকাপড় আর ফিরনি সেমাই খাবো কীভাবে। তবে তারা সরকারের কাছে ত্রাণ নয়, হাওর ও নদীর সার্বিক উন্নয়নে পরবর্তী প্রজন্মের স্বার্থে বন্যা ও দীর্ঘ জলাবদ্ধতা থেকে স্থায়ী সমাধান চান।