মনজু চৌধুরী: মৌলভীবাজার জেলার বন্যাকবলিত ৫টি উপজেলার ছোট বড় সব দোকানিতে নেই আগের মতো ক্রেতা। প্রায় ২৪ দিন থেকে বন্যাকবলিত শ্রমজীবী মানুষরা কর্মহীন। ক্ষেত কৃষি ঘরবাড়ি রাস্তাঘাট সবই এখনো ডুবন্ত। এবছর বন্যার প্রভাব পড়েছে এ জেলার ঈদ বাজারেও। দোকানিরা জানালেন অন্য বছরের মতো ক্রেতা কম এ বছর। জেলার হাওর ও নদী তীরবর্তী এলাকার হাট বাজারের ব্যবসায় এমন বেহাল দশা।
জানা গেল স্থানীয় হাট বাজারগুলোতে এ সময় জমজমাট বিক্রি হলেও এ বছর অন্য দৃশ্য। ঈদের বর্ণিল সাজে দোকানগুলো সাজালেও ক্রেতা কম। কারণ একটাই এমন দুর্যোগের পর হাত খালি স্থানীয় মানুষের। এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগে দিশাহারা এ জেলার বন্যার্ত মানুষ। জেলার কুলাউড়া, জুড়ী, বড়লেখা, রাজনগর ও মৌলভীবাজার সদর উপজেলার অধিকাংশ বাসিন্দারা রয়েছেন পানিবন্দি।

ঘরবাড়ি ছেড়ে এখনো আশ্রিত রয়েছেন অন্যত্র। সেখানে নানা সংকট ও সমস্যায় কোনো রকম দিন কাটাচ্ছেন। দু’ বেলা দু’মুঠো ভাতের জন্য পরিবার বাঁচাতে যাদের দৌড়ঝাঁপ ঈদ বাজারের দিকে তাকানোর ফুরসতটা তাদের কোথায়। এমনটিই জানালেন জেলার হাওর ও নদী তীরের কৃষি, শ্রমজীবী ও মৎস্যজীবীরা। তাই ঈদ এলেও তারা এখন চরম অসহায়। একদিকে হাতে নেই টাকা। অন্যদিকে গৃহহীন। তাদের ছেলে মেয়েরা ঈদের নতুন জামা কাপড়ের আবদার করলে তারা শুধুই দু’চোখের জল ফেলে নীরবে তা সইছেন।
বাজারের দোকানগুলোতে ঈদ উপলক্ষে দোকানিদের আয়োজনের কমতি নেই। কিন্তু স্থানীয় মানুষের সাধ্য নেই। বন্যায় সব হারিয়ে অনেকটাই নিঃস্ব এ জেলার হাওর ও নদী তীরের মানুষ। স্থানীয় এ দোকানগুলোতে অনেকটাই অলস সময় পার করছেন ব্যবসায়ীরা। প্রবাসী অধ্যুষিত এ জেলায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলেও তা অকেটা কাটিয়ে উঠা সম্ভব হলেও এ বছর ভিন্ন অবস্থা। একসঙ্গে অধিক সংখ্যক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তা কাটিয়ে উঠাও হচ্ছে কষ্টকর। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো এ অঞ্চলে বন্যা খরা কিংবা যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঈদ বাজারে খুব একটা প্রভাব পড়ে না। ঈদের মাস শুরুর প্রথম সপ্তাহ পর থেকেই কাপড়ের দোকানগুলোতে কেনাকাটার ধুম পড়ে। কিন্তু এবার পুরো জেলায় পরিলক্ষিত হচ্ছে ভিন্নচিত্র। দুর্যোগ মোকাবিলায় হিমশিম খাওয়া লোকজন পরিবারের খাওয়া বাঁচা নিয়ে দুশ্চিন্তায়। তাই ঈদের কেনাকাটায় খুব একটা আগ্রহ নেই তাদের। হাওর ও নদী তীরবর্তী কয়েকটি উপজেলার স্থানীয় বাজারগুলোর দোকানিরা জানান, অন্য বছর এ সময়ে তাদের দোকানগুলোতে মানুষের উপচে পড়া ভিড় পরিলক্ষিত হতো। কিন্তু এ বছর ঠিক বিপরীত চিত্র। বিক্রি ভালো না হওয়ায় তারা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। কারণ তারা ঈদ মৌসুমের কেনাবেচা দিয়েই সারা বছর টিকিয়ে রাখেন তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *