সিলেটের ওসমানীনগরে একই পরিবারের ৫ যুক্তরাজ্যপ্রবাসীকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধারের পর বাবা-ছেলের মৃত্যু হয়। চিকিৎসকদের প্রাথমিকভাবে ধারণা, খাবারে বিষক্রিয়ার কারণে তাঁরা অচেতন হয়ে পড়েন এবং এতে দুজনের মৃত্যু হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার তাজপুর স্কুল রোডের ভাড়া বাসা থেকে তাঁদের উদ্ধার করে ওসমানীনগর থানা-পুলিশ। নিহতরা হলেন—উপজেলার দয়ামীর ইউনিয়নের ধিরারাই (খাতিপুর) গ্রামের আবদুল জব্বারের ছেলে যুক্তরাজ্যপ্রবাসী রফিকুল ইসলাম (৫০) ও তাঁর ছোট ছেলে মাইকুল ইসলাম (১৬)।
আশঙ্কাজনক অবস্থায় রফিকুল ইসলামের স্ত্রী হুছনারা বেগম (৪৫), ছেলে সাদিকুল ইসলাম (২৫) এবং মেয়ে সামিরা ইসলামকে (২০) সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

পুলিশ ও নিহতদের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে সপরিবারে যুক্তরাজ্যে বসবাস করে আসছেন ধিরারাই গ্রামের রফিকুল ইসলাম। অসুস্থ ছেলে সাদিকুল ইসলামকে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য গত ১২ জুলাই সপরিবারে দেশে ফিরে এক সপ্তাহ ঢাকায় থাকেন। চিকিৎসা শেষে গত ১৮ জুলাই উপজেলার তাজপুর স্কুল রোড এলাকার তাজপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান অরুনোধয় পাল ঝলকের একটি ভবনের দ্বিতীয় তলায় বাসা ভাড়া নেন তিনি। গতকাল সোমবার রাতের খাবার শেষে প্রবাসী রফিক মিয়া তাঁর স্ত্রী সন্তানসহ একটি কক্ষে এবং রফিকুল ইসলামের শ্বশুর আনফর আলী, শাশুড়ি বদরুন্নেছা, শ্যালক দেলোয়ার হোসেন, শ্যালকের স্ত্রী শোভা বেগম ও মেয়ে সাবিলা বেগম (৮) অন্যান্য কক্ষে ঘুমিয়ে পড়েন। মঙ্গলবার সকালে বাসার সুস্থ স্বজনেরা ডাকাডাকি করে প্রবাসী রফিকুল ইসলামসহ তাঁর স্ত্রী-সন্তানরা ঘরের দরজা না খোলায় ৯৯৯ নম্বরে কল করেন তাঁরা।

খবর পেয়ে দুপুর ১২টার দিকে ওসমানীনগর থানা-পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে কক্ষের দরজা ভেঙে রফিকুল ইসলামসহ তাঁর স্ত্রী হুছনারা বেগম, ছেলে মাইকুল ইসলাম, সাদিকুল ইসলাম ও মেয়ে সামিয়া ইসলামকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে পাঠায়। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক রফিকুল ইসলাম ও মাইকুল ইসলামকে মৃত ঘোষণা করেন এবং আশঙ্কাজনক অবস্থায় বাকি তিনজনকে আইসিইউতে প্রেরণ করেন।

সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উপপরিচালক ডা. আব্দুল গফ্ফার বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে খাবারে বিষক্রিয়ার কারণে ঘটনাটি ঘটেছে। তবে আমরা নিশ্চিত নই। পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে, রিপোর্ট আসলে বলা যাবে আসল কারণ কী ছিল। দুজন মারা গেছেন, বাকি তিনজনের চিকিৎসা চলছে। তাদের অবস্থাও ভালো না।’

এ ঘটনায় নিহত রফিকুল ইসলামের শ্বশুর আনফর আলী, শাশুড়ি বদরুন্নেছা, শ্যালক দেলোয়ার হোসেন ও তাঁর স্ত্রী শোভা বেগমকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ।

সিলেটে ৫ প্রবাসীকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার, ২ জনের মৃত্যুসিলেটে ৫ প্রবাসীকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার, ২ জনের মৃত্যু
খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন সিলেটের পুলিশ সুপার (পদোন্নতিপ্রাপ্ত অতিরিক্ত ডিআইজি) মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন, ওসমানীনগর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নীলিমা রায়হানা। এ ছাড়া পিবিআই ও সিআইডির দুটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, যে বাসা থেকে প্রবাসীদের অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে, সেই বাসায় ৩টি শয়ন কক্ষ,১টি রান্নাঘর,১টি খাবার কক্ষ রয়েছে। যে কক্ষে প্রবাসী পরিবারের ৫ জন ঘুমিয়েছিলেন, কক্ষটির আসবাবপত্র এলোমেলো অবস্থায় রয়েছে।
প্রবাসী হুছনারা বেগমের চাচাতো ভাই গোলাম হোসেন বলেন, ‘খবর পেয়ে আমরা এসেছি। কে বা কারা কীভাবে ঘটনাটি ঘটিয়েছে তা জানি না। আমার বোনের পরিবারের সঙ্গে কারও শত্রুতা নেই।’
নিহত রফিকুল ইসলামের ভায়রা ভাই সাজ্জাদ আহমদ বলেন, ‘ভায়রা রফিকুল ইসলামের বড় ছেলে সাদিকুল ইসলাম অসুস্থ থাকায় তাঁকে চিকিৎসা দিতে গত ১২ জুলাই দেশে ফিরেছেন। ঢাকা থেকে ফেরার পর শ্বশুর-শাশুড়িসহ অন্যান্যদের নিয়ে ভাড়া বাসায় উঠেছিলেন। তাঁদের অচেতন অবস্থায় উদ্ধারের খবর পেয়ে এসেছি।’

সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘বিষক্রিয়ার কারণে ঘটনাটি ঘটেছে বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন। কীভাবে বিষক্রিয়া ঘটেছে, তা তদন্তের আগে বলা সম্ভব নয়। যে সকল নিকট আত্মীয় বাসায় ছিলেন, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ঘটনার রহস্য উদ্‌ঘাটনের জন্য পুলিশ তদন্ত অব্যাহত রেখেছে।’

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *