ডায়াল সিলেট ডেস্ক :: পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন এমপি বলেছেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য বিশ্বের অবস্থা খুব একটা ভালো না। আরও অনেক দেশ বিভিন্ন অবস্থায় মুখোমুখি অবস্থান করছে। সেই কারণে আগামী বছর সারা বিশ্বে একটা খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে। ফলে এই দুর্যোগ মোকাবেলায় এখন থেকে আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। সে জন্য এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদী রাখা যাবে না। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ থাকার জন্য যতটুকু সম্ভব খাদ্য উৎপাদনে জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।’
বৃহস্পতিবার বিকেলে মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার দাসেরবাজার ইউনিয়নের দাসেরবাজার উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের মাঝে বিনামূল্যে রোপা আমনের হালিচারা বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিবেশমন্ত্রী এসব কথা বলেন। উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগের যৌথ আয়োজনে এই অনুষ্ঠান হয়েছে।
পরিবেশমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের খাদ্যের যে চাহিদা আছে, তা যদি উৎপাদন করতে পারি; তাহলে কোনো সমস্যা হবে না। বিশ্বের কোনো দেশ থেকে আমদানি করতে চাই না। আমরা বাংলাদেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ রাখতে চাই। আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছিলাম। কিন্তু মাঝখানে পিছিয়ে গেছি প্রাকৃতিকসহ নানা কারণে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘বন্যা ও দুর্যোগ পরিস্থিতে মানুষের পাশে দাঁড়ানো, বিদ্যালয়ের খেলার মাঠে হালিচারা উৎপাদন, কৃষকদের মধ্যে বিতরণ, বিদ্যালয়ের আশ্রয় কেন্দ্রে শিক্ষার্থীদের স্বেচ্ছায় পাঠদান- এইগুলোই হচ্ছে দেশপ্রেম। এভাবে যদি আমাদের মধ্যে দেশপ্রেম জাগে তাহলে আমরা দেশকে উন্নত করতে পারব। দেশ পিছিয়ে যাবে না, দেশ সোনার বাংলায় রূপান্তরিত হবে।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের রোপা আমন আবাদ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিলে কৃষি কর্মকর্তা আমাকে ফোন দেন। তারা উঁচু এলাকার বিদ্যালয় মাঠে বীজতলা করতে চান বলে জানান। বন্যার্ত চাষিদের বাঁচাতে আমি তাতে মত দেই। ধারণা করেছিলাম হয়তো ৪-৫ বিঘায় বীজতলা করা হবে। কিন্তু কৃষি বিভাগ ৪৮ বিঘা জমিতে বীজতলা করে হালিচারা উৎপাদন করেছে।
‘এই হালিচারা এখন ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের দেওয়া হচ্ছে। সংকটকালে স্থানীয় কৃষি বিভাগের এটি একটি শুভ উদ্যোগ। এ রকম একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলার অংশ হিসেবে উপজেলা পরিষদ, প্রশাসন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এগিয়ে এসেছে, এটিকে অভিনন্দন জানাই। আমার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে ধন্যবাদপত্র দেব।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বড়লেখা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ দেবল সরকার।
বড়লেখা উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ তাজ উদ্দিনের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সোয়েব আহমদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম সুন্দর প্রমুখ।
কৃষি বিভাগ ও উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বড়লেখা উপজেলার ৯১০ জন কৃষকের মাঝে রোপা আমনের হালিচারা বিতরণ করা হচ্ছে। প্রত্যেক চাষিকে ১ বিঘা জমিতে আবাদের পরিমাণ হালিচারা দেওয়া হচ্ছে। বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে দাসেরবাজার ইউনিয়নের ১০০ জন কৃষকের মাঝে এই চারা বিতরণ করা হয়েছে। বন্যায় বড়লেখায় ৩২৫ হেক্টর বোনা আমন ধান নষ্ট হয়েছে। বন্যার ক্ষতি পোষাতে কৃষকদের জন্য বিকল্প এই উদ্যোগ। উপজেলায় এবার আমনের লক্ষ্যমাত্রা ৮ হাজার ৭৬০ হেক্টর। আমন চাষি হচ্ছেন ১৩ হাজার ১৪০ জন। এই কার্যক্রমে উপজেলার মোট আমন চাষির ৭ শতাংশ এবং বন্যাকবলিত এলাকার ১২ শতাংশ উপকৃত হবেন। ৯১০ জন কৃষক ৩৪টি বীজতলার হালিচারা রোপণ করতে পারবেন।
অপরদিকে পরিবেশমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন এমপি দুপুরে বড়লেখা উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে প্রশাসনিক ভবনে নির্মিত বঙ্গবন্ধু কর্ণারের উদ্বোধন এবং অনগ্রসর জনগোষ্ঠী ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের মাঝে বিজ্ঞানসামগ্রী বিতরণ করেন।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *