সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি :: সুনামগঞ্জে নিজের ফেসবুকে ‘উসকানিমূলক’ পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া ঝুমন দাশ ওরফে আপনের (২৬) নিঃশর্ত মুক্তি চেয়েছেন তার মা নিভা রানী দাশ ও স্ত্রী সুইটি রানী দাশ।
তবে তাদের দাবি, ঝুমন দাশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। তিনি নির্দোষ। গত বছরের ঘটনার পর থেকে তিনি এলাকায় সবার সঙ্গে মিলেমিশে বসবাস করছেন। এলাকায় এমন কোনো পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি, যে কারণে তাকে গ্রেপ্তার করতে হবে। তাকে কারাগারে নিতে হবে। বুধবার দুপুরে সুনামগঞ্জ আদালত প্রাঙ্গণে নিভা রানী দাশ ও সুইটি রানী দাশ এ দাবির কথা জানান।
ঝুমন দাশকে পুলিশ আদালতে নিয়ে এলে তারাও সেখানে আসেন। নিভা রানী দাশ বলেন, ‘‘গত বছরের ঘটনার কথা দেশ-বিদেশের মানুষ জানে। তখন হয়তো সে ভুল করেছিল। এরপর তার আর কোনো ত্রুটি দেখিনি। এখন কেন আবার তার বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হলো, গ্রেপ্তার করা হলো, এটাই বুঝতে পারছি না।’’
নিভা রানী আরও বলেন, ‘‘নিরাপত্তার কথা বলে তাকে জেলে নেওয়া হবে কেন? তাহলে আমাদেরও তো নিরাপত্তা দরকার। আমাদেরও জেলে নেওয়া হোক। আমরা তার নিঃশর্ত মুক্তি চাই।’’
সুইটি রানী দাশ বলেন, ‘‘গত বছর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার হয়ে ঝুমন প্রায় ছয় মাস কারাগারে ছিলেন। পরে তিনি শর্ত সাপেক্ষে এক বছরের জন্য জামিন পান। বিভিন্নজনের সহায়তায় বাড়িতে একটি দোকান দিয়েছেন। সেখানেই থাকেন। কারও সঙ্গে কোনো বিরোধ নেই। কিন্তু মঙ্গলবার হঠাৎ করে পুলিশ এসে তাকে ধরে নিয়ে যায়।’’
সুইটি বলেন, ‘‘আমাদের দুই বছর বয়সী একমাত্র ছেলে ঈশান দাশ সারাক্ষণ বাবা বাবা বলে কাঁদছে। ঝুমন ফেসবুকে এমন কোনো কিছু লেখেনি, যে কারণে তাকে আবার জেলে যেতে হবে। এর পেছনে কেউ আছে। আমরা তার মুক্তি চাই। নিরাপত্তা চাই।’’
ঝুমন দাশের বাড়ি সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার হবিবপুর ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামে।
শাল্লা থানার পুলিশ তাকে মঙ্গলবার দুপুরে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায়। পরে রাতে তার বিরুদ্ধে শাল্লা থানার পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) সুমনুর রহমান বাদী হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন। ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে বুধবার তাকে আদালতে হাজির করে পুলিশ।
ঝুমন দাশের বিরুদ্ধে এর আগে একই থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গত বছরের ২২ মার্চ আরেকটি মামলা করেছিল পুলিশ। ওই মামলায় তিনি প্রায় ছয় মাস কারাগারে ছিলেন। মামলাটি এখন সিলেটের সাইবার ট্রাইব্যুনালে আছে।
গত মঙ্গলবার রাতে ঝুমন দাশকে গ্রেপ্তারের পর সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ২৮ আগস্ট বেলা তিনটায় ঝুমন দাশ নিজের ফেসবুক আইডি থেকে একটি ‘উসকানিমূলক’ পোস্ট দেন। এতে ধর্মী অনুভূতিতে আঘাত লেগে এলাকায় মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষোভ ও উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।
হেফাজতে ইসলামের তৎকালীন কেন্দ্রীয় নেতা মামুনুল হককে নিয়ে নিজের ফেসবুকে দেওয়া একটি পোস্টের জেরে গত বছরের ১৭ মার্চ সকালে ঝুমন দাশের গ্রাম শাল্লা নোয়াগাঁওয়ে হামলা হয়। হামলার ঘটনার আগে ১৫ মার্চ সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলা শহরে এক সমাবেশে হেফাজতের নেতা মামুনুল হক বক্তব্য দেন। পরে মামুনুল হককে নিয়ে নিজের ফেসবুকে ‘আপত্তিকর’ পোস্ট দেন বলে অভিযোগ ওঠে ঝুমন দাশের বিরুদ্ধে। ১৬ মার্চ রাতে পুলিশ ঝুমন দাশকে আটক করে। ১৭ মার্চ সকালে উপজেলার কাশিপুর, দিরাই উপজেলার নাসনি, সন্তোষপুর ও চণ্ডীপুর গ্রামের মানুষ লাঠিসোঁটা নিয়ে নোয়াগাঁও গ্রামে হামলা চালায়।
এ ঘটনায় শাল্লা থানায় তিনটি মামলা হয়। এর মধ্যে দুটি হয় হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায়। অন্য মামলাটি পুলিশ করে ঝুমন দাশের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে। এ মামলায় তিনি প্রায় ছয় মাস কারাভোগের পর হাইকোর্ট থেকে এক বছরের জন্য ২০২১ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর জামিন পান।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *