সোহেল আহমদ :: বাংলাদেশে আবারো উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক পরিস্থিতি। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে চলছে সহিংসতা। এসব ঘটনায় মারা যাচ্ছেন রাজনৈতিক নেতাকর্মীরাও।

 

 

 

এসিয়ে গত নয় মাসে বিভিন্ন পর্যায়ের স্থানীয় নির্বাচনসহ রাজনৈতিক সংঘাত ও সহিংসতার ৩৮৭ ঘটনায় ৫৮ জন নিহত এবং ৫ হাজার ৪০০ জন আহত হয়েছেন বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চলমান পরিস্থিতি অনেক নেতিবাচক ইঙ্গিত দিচ্ছে। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে সহিংসতা আরো বেড়েই চলছে।

 

 

 

সহিংসতা দমন করতে গিয়ে উল্টো পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারাতে হচ্ছে বিরোধীদলের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির নেতাকর্মীদের।

 

 

এদিকে পুলিশের গুলিতে নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ ও ভোলায় রাজনৈতিক দলের কর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় আরো উত্তাল হয়ে উঠেছে দেশটি। তবে সরকারের শীর্ষস্থানীয়রা প্রতিবারই বলছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক এবং সাধারণ মানুষের জানমাল রক্ষার্থে প্রয়োজনীয় সব কিছুই করা হবে। কিন্তু পরিস্থিতি এর উল্টোটা।

 

 

 

গণমাধ্যমে পাঠানো আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ নূর খান স্বাক্ষরিত এক প্রতিবেদনে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে। আসকের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৩১ জুলাই ভোলায় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে আনার দাবিতে বিএনপির কর্মসূচি কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পুলিশের গুলিতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন স্বেচ্ছাসেবক দলের একজন স্থানীয় নেতা, পরে আহতাবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি ভোলা জেলা ছাত্রদল সভাপতিরও মৃত্যু হয়। ১ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জ এবং ২২ সেপ্টেম্বর মুন্সীগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হন আরও দুই যুবদল কর্মী।

 

 

 

এর আগে জুনে গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি সীতাকুন্ড বিস্ফোরণে আহতদের দেখতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গেলে তাঁদের ওপর হামলা চালায় ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ। এতে জোনায়েদ সাকিসহ বেশ কয়েকজন আহত হন।

 

 

আসকের তথ্যানুযায়ী, গত নয় মাসে বিচারবহির্ভূতভাবে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে ১৫ ব্যক্তির মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। কুমিল্লায় ২৫ সহিংসতার ঘটনায় ২জন নিহত, ২৫৬ জন আহত হয়েছেন। চট্টগ্রামে ২৩ ঘটনায় ৬ জন নিহত, ৩০২ জন আহত হয়েছেন।

 

 

 

সাদা পোশাকধারী ব্যক্তিরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে চারজনকে অপহরণ করার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে পরবর্তী সময় একজন ফেরত এসেছেন এবং একজনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। দুজন এখনো নিখোঁজ। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বরাবরের মতো এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

 

 

 

এদিকে দেশে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৭৩৪ নারী। ধর্ষণের পর ৩৪ নারীকে হত্যা করা হয়েছে । ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করেছেন ৭জন এবং ১২৮ নারীকে ধর্ষণের চেষ্টা চালানো হয়েছে। পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৩৬৭ নারী। এর মধ্যে ২২৮ নারীকে হত্যা করা হয়েছে। পারিবারিক নির্যাতনের কারণে আত্মহত্যা করেছেন ৬৭ নারী। এছাড়া শারীরিকভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৭২ নারী। যৌতুককে কেন্দ্র করে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ১৪৮ নারী। যৌতুকের জন্য শারীরিক নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে ৬৯ জনকে এবং যৌতুকের কারণে নির্যাতনের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছেন ছয় নারী।

 

 

এর মধ্যে শারীরিক নির্যাতনের শিকার ৬২ জন। এ সময়ে ১৯ গৃহকর্মী বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। অ্যাসিড সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন ১১ নারী। এর মধ্যে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।

 

 

 

এতে আরও বলা হয়, গত ৯ মাসে এক হাজার ২৭৮ শিশু বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন ও হত্যার শিকার হয়েছে। এর মধ্যে হত্যার শিকার হয়েছে ২৪০ শিশু, ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে এক শিশুকে হত্যা করা হয়েছে। আত্মহত্যা করেছে ৪৪ শিশু, বিভিন্ন সময় ৯১ শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, রহস্যমৃত্যু হয়েছে ১৮ শিশুর।

 

এছাড়া বলাৎকারের শিকার হয়েছে ৪৪ ছেলেশিশু। আর জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, নিহত ৩৯৫ শিশুর মধ্যে ঢাকায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এ সময় ঢাকায় ৫৪, নারায়ণগঞ্জে ২৪, গাজীপুরে ২১, কুমিল্লায় ১৬ ও চট্টগ্রামে ১৫ শিশু নিহত হয়েছে।

 

অন্যদিকে বিভিন্নভাবে নির্যাতন, হয়রানি, হুমকি, মামলা ও পেশাগত কাজ করতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন ১৭৯ জন সাংবাদিক। যার মধ্যে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে হামলার শিকার হয়েছেন অন্তত ৬৬ সংবাদকর্মী। দুর্বৃত্তদের গুলিতে কুমিল্লায় নিহত হয়েছেন একজন সাংবাদিক।

 

 

এদিকে সংসদ নির্বাচনের আগে জাতীয় সংসদ ভেঙে দিতে হবে এবং নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। পরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচন হতে হবে।

 

 

এছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হতে দেয়া হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম তিনি প্রশ্ন করে বলেন, আমাদের সময় তত্ত্বাবধায়ক হয়েছে। আপনাদের সময় বাধা কোথায়? আমাদের নেত্রী আপনাদের দাবি মেনে নিয়েছিলেন কারণ তিনি বুঝতে পেরেছিলেন এটি জনগণের দাবি।

 

 

তাই আপনাদেরকেও জনগণের দাবি মেনে নিতে হবে। বাংলাদেশে মানবাধিকার নেই, আইনের শাসন নেই, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী জঘন্যতম মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। এই দেশে আজ নেই কোনো সঠিক বিচার ব্যবস্থা।

 

 

 

 

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *