ডায়াল সিলেট রিপোর্ট :: আবারও পরিবহন ধর্মঘটের কবলে পরতে যাচ্ছে সিলেট। কোয়ারিগুলো থেকে পাথর উত্তোলন চালুর দাবিতে আজ সোমবার থেকে সিলেট জেলায় ৪৮ ঘন্টার পণ্য পরিবহন ধর্মঘট ডেকেছে সিলেট বিভাগীয় ট্রাক পিকআপ কাভার্ডভ্যান মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। এই সময়ে মধ্যে দাবি পূরণ না হলে পুরো বিভাগে ধর্মঘট ডাকারও হুমকি দিয়েছে সংগঠনটি।
গত ১৭ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই ধর্মঘটের ডাক দেন সিলেট বিভাগীয় ট্রাক পিকআপ কাভার্ড ভ্যান মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক ও সিলেট জেলা ট্রাক পিকআপ কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম হাদী ছয়ফুল।
এ নিয়ে রোববার বিকেলে পরিবহন শ্রমিক নেতাদের সাথে বৈঠক করেন সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজবিবর রহমান। তবে বৈঠকের পরও ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেনি সিলেট বিভাগীয় ট্রাক পিকআপ কাভার্ডভ্যান মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। আজ সকাল ৬টা থেকে ধর্মঘট শুরু হবে বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির নেতারা।
বিকেলের বৈঠক প্রসঙ্গে সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবুর রহমান বলেন, কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলনের দাবির প্রেক্ষিতে খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ৩ নভেম্বর এই কমিটির সদস্যরা সিলেটের কোয়ারিগুলো পরিদর্শনে আসবেন। তারা সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখবেন পাথর উত্তোলনের যৌক্তিকতা আছে কি-না। তাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সরকার পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।
জেলা প্রশাসক বলেন, পাথর উত্তোলনের বিষয়ে আমার কিছু করার নেই। এটি সরকারের সিদ্ধান্ত। আজকের বৈঠকে পরিবহন শ্রমিক নেতাদের আমি এ কথা জানিয়েছি। মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের সা্থে দেখা করে তারা যাতে নিজেদের দাবি জানাতে পারেন এই সুযোগ করে দেওয়ারও আশ্বাস দিয়েছি। তারা বৈঠকে ধর্মঘট থেকে সরে আসার আশ্বাস দিয়েছেন। তবে এখান থেকে যাওয়ার পর বলছেন, তাদের অনেকেই নাকি ধর্মঘট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত মানছে না।
জেলা প্রশাসকের সাথে বৈঠকে কোনো সমাধান হয়নি জানিয়ে সিলেট বিভাগীয় ট্রাক পিকআপ কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক শাব্বীর আহমদ বলেন, আমরা আমাদের কর্মসূচী চালিয়ে যাবো। প্রথমে আমরা জেলায় ৪৮ ঘন্টার ধর্মঘট ডেকেছি। এরমধ্যে দাবি পূরণ না হলে ৩ নভেম্বর আমরা বিভাগীয় সমাবেশ করবো। এই সমাবেশ থেকে পুরো বিভাগে ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হবে।
এদিকে, ধর্মঘট সফল করতে রোববার দুপুরে সিলেট জেলা ট্রাক পিকআপ কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির কার্যালয়ে মালিক-শ্রমিকদের নিয়ে যৌথ সভা করা হয়।
এতে সিলেট জেলা ট্রাক পিকআপ কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. দিলু মিয়া বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সিলেটের পাথর কোয়ারী বন্ধ থাকায় দশ লক্ষাধিক মানুষ রোজগার হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। সাম্প্রতিক বন্যায় বৃহত্তর সিলেটের মানুষের জীবন ও জীবিকা মারাত্মক সংকটাপন্ন হয়ে পড়েছে। আয় রোজগার না থাকায় প্রান্তিক এ শ্রমজীবী মানুষগুলো দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। সিলেটের পাথর কোয়ারী সংশ্লিষ্ট এলাকা সমূহে বর্তমানে দুর্ভিক্ষাবস্থা বিরাজ করছে।
তিনি বলেন, করোনা সংক্রমণ এবং দেশের চলমান অর্থনৈতিক সংকটে পাথর পরিবহনে সংশ্লিষ্ট হাজার হাজার ট্রাকশ্রমিক বেকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। শত শত ট্রাকমালিক, স্টোন ক্রাশার মালিক ও ব্যবসায়ী ব্যাংক ঋণে জর্জরিত হয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে সংকটাপন্ন অবস্থায় দিনযাপন করছেন। অথচ, পাথর কোয়ারী বন্ধ রেখে বিদেশ থেকে রিজার্ভের ডলার খরচ করে পাথর আমদানি করে উন্নয়ন কাজ চালানো হচ্ছে। ফলে রাষ্ট্রীয় রিজার্ভ সংকটে নিপতিত হয়েছে। লাখো মানুষের জীবন রক্ষা এবং রাষ্ট্রীয় রিজার্ভের ডলার সাশ্রয়ের জন্য সিলেটের পাথর কোয়ারী জরুরী ভিত্তিতে খুলে দেয়া আবশ্যক।
সিলেট বিভাগীয় ট্রাক পিকআপ কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক শাব্বীর আহমদের পরিচালনায় সভায় অন্যানের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, সিলেট জেলা ট্রাক পিকআপ কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সহ সভাপতি আতিকুর রহমান আতিক, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নাজির আহমদ স্বপন, জেলা ট্রাক পিকআপ কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যকরি সভাপতি আব্দুস সালাম, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল গফুর, জেলা ট্রাক পিকআপ কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক জাকির হোসেন তালুকদার, বৃহত্তর সিলেট পাথর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল আমিন, জাফলং স্টোন ক্রাশার মালিক সমিতির সভাপতি বাবলু বখত, সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস উদ্দিন লিপু, ধোপাগুল স্টোন ক্রাশার মিল মালিক সমিতির সহ সভাপতি সৈয়দ সালেহ আহমদ শাহনাজ প্রমুখ।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *