ডায়াল সিলেট ডেস্ক :: বঙ্গীয় সাহিত্য সংস্কৃতি সংসদের উদ্যোগে এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সহযোগিতায় মাছিমপুর মণিপুরী পাড়ায় কবিগুরুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সোমবার সকালে সম্পন্ন হয়।
বাংলা একাডেমির সভাপতি এবং বঙ্গীয় সাহিত্য সংস্কৃতি সংসদের সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. পবিত্র সরকার। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রাক্তন প্রধান তথ্য কমিশনার কবি আজিজুর রহমান আজিজ, ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনার নীরাজ কুমার জায়সওয়াল, বঙ্গীয় সাহিত্য সংস্কৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক কবি কামরুল ইসলাম, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. শরদিন্দু ভট্টাচার্য, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির প্রাক্তন সচিব কবি আসাদুল্লাহ, মণিপুরী কবিগুরু স্মরণ উৎসব উদযাপনের আহবায়ক মণিসেনা সিংহ, মণিপুরী সমাজ কল্যাণ সমিতি সিলেট জেলার সভাপতি, মণিপুরী কবিগুরু উৎসব উদযাপনের সদস্য সচিব সুনীল সিংহ।
অধ্যাপক পবিত্র সরকার বলেন, মণিপুর সম্প্রদায়ের সাথে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্র্ক। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ললিত নৃত্য মণিপুরী নৃত্য। এতো লালিত্য, এত কমনীয়তা, এত সুন্দর নৃত্য আর কোথাও দেখিনি। একটা ধর্মীয় নৃত্য পর্যায়ক্রমে জনতার নৃত্য হয়ে গেলো।

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাংলাদেশে আগমনের পর তিনি এই অঞ্চলের সংস্কৃতি তুলে ধরেন। তিনি কবিগুরুর শিলাইদহ, শাহজাদপুর ও পতিসরের কথা উত্থাপন করেন। তাঁর অধিকাংশ লেখা বাংলাদেশে বসে লেখা। তার লেখা সর্বমানুষের। তাঁর পরিচয় কোন ধর্মের নয়, কোন ভাষার নয়, কোন জাতির নয়, তিনি হলেন নিখিল মানব। অখিল মানবতার সাধনা কবিগুরুর।
ভারতের সহকারী হাই কমিশনার নীরাজ কুমার জায়শওয়াল মণিপুরী সংস্কৃতি বিকাশ, শিক্ষাসহ সকল কার্যক্রমে সহায়তা করার বিষয় তুলে ধরেন।
বঙ্গীয় সাহিত্য সংস্কৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম বক্তব্যের সূচনায় মণিপুর সম্প্রদায়ের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা শহীদ বীরমুক্তিযোদ্ধা গিরীন্দ্র সিংহ, রবীন্দ্র সিংহ, ভারতের ভাষাশহীদ সুদেষ্ণা সিংহ প্রতি শ্রদ্ধা জানান। মণিপুর বিষ্ণুপ্রিয়া সম্প্রদায়ের পৌরপত্রিকা, ইথাক পত্রিকা প্রকাশনায় সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
তিনি সভায় ৫টি প্রস্তাবনা বাস্তবায়নে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
১. রবীন্দ্রস্মৃতি বিজড়িত স্থানসমূহ সংরক্ষণ এবং ভাস্কর্য নির্মাণ; ২. লোকনাথ রতণমণি টাউন হলের স্মৃতি স্থানে ‘লোকনাথ রতণমণি নামফলক স্থাপন’; ৩. মণিপুরী পল্লীতে রবীন্দ্রস্মৃতি ইনস্টিটিউট করা; ৪. সিলেটের চাঁদনীঘাট এবং মণিপুরী পল্লীতে রাস্তাকে ‘রবীন্দ্র সরণী’ নামকরণ করা; ৫. টমাস সাহেবের বাংলোর রবীন্দ্রস্মৃতি স্থান ‘রবীন্দ্র জাদুঘর’ করা; ৬. শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ‘রবীন্দ্র চেয়ার’ স্থাপন।
আলোচনা শেষে সমবেত সংগীত পরিবেশন করেন রাণা কুমার সিনহা, তুষার কর, অনিমেষ বিজয় চৌধুরী, নিরঞ্জন দে, সোমা রায়, পল্লবী চক্রবর্তী, রুবি বেগম। নৃত্য পরিবেশন করেন শ্রুতি সিনহা (একক) এবং দলীয় নৃত্যে দিঘী, বিপাশা, ঋষিতা, অপি, দিয়া, মনীষা।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা কালচারাল অফিসার সিলেট অসিত বরণ দাশ গুপ্ত, সংগীতশিল্পী মুন্না দত্ত প্রমুখ।
এছাড়াও পরবর্তীতে বেলা ২টায় পীর হাবিবুর রহমান পাঠাগার প্রাঙ্গনে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অস্থায়ী প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেন বঙ্গীয় সাহিত্য সংস্কৃতি সংসদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক কবি প্রাবন্ধিক কামরুল ইসলাম, বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী রাণা কুমার সিনহা, কবি তুষার কর, অনিমেষ বিজয় চৌধুরীসহ প্রমুখ। কামরুল ইসলাম তাঁর বক্তব্য কবিগুরু স্মৃতি স্থান লোকনাথ রতনমুণি টাউন হল প্রাঙ্গন সংরক্ষণ, একই নামে নামফলক স্থাপন, কবিগুরুর ভাস্কর্যসহ স্মৃতি জাদুঘর করার আহবান জানান।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *