ডায়াল সিলেট ডেস্ক :: দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জোবাইদা রহমানের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক মো. আসাদুজ্জামান বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন।
একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় দন্ডপ্রাপ্ত তারেক রহমান পরিবার নিয়ে বর্তমানে লন্ডনে অবস্থান করছেন। সেখানে থেকেই তিনি বিএনপির রাজনীতি কর্মকান্ডের নানা দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। যদিও সাজাপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে তার বক্তব্য প্রচার না করার জন্য নির্দেশনা রয়েছে আদালতের।
বিচারক ক্যান্টনমেন্ট থানার ওসিকে ১৯ জানুয়ারির মধ্যে সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। এর আগে তাদের বিরুদ্ধে জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকরের প্রতিবেদন দেয়া হয় বিচারিক আদালতে। তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ গ্রহণ করে গত বছরের ১ নভেম্বর একই আদালত তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
গতবছরের ২৬ জুন হাইকোর্ট তারেক ও জোবাইদাকে ‘পলাতক’ ঘোষণা করেন এবং দুর্নীতির মামলাকে চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদন খারিজ করে দেন। এই দম্পতি ২০০৮ সাল থেকে লন্ডনে অবস্থান করছেন। হাইকোর্ট ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দায়ের করা মামলার স্থগিতাদেশও প্রত্যাহার করে নেন এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিচারের কার্যক্রম শেষ করতে সংশ্লিষ্ট নিম্ন আদালতকে নির্দেশ দেন।
আদেশ পাওয়ার ১০ দিনের মধ্যে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমকে মামলার নথি ঢাকার সিনিয়র মেট্রোপলিটন দায়রা জজ আদালতে পাঠাতে বলা হয়েছে। এছাড়া তারেকের শাশুড়ি সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানুর বিরুদ্ধে বিচার কার্যক্রম বাতিল করা হয়েছে।
২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর কাফরুল থানায় তারেক, তার স্ত্রী জোবাইদা ও জোবাইদার মা সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানুর বিরুদ্ধে অবৈধভাবে ৪ কোটি ৮২ লাখ টাকার সম্পদ অর্জন এবং ২ কোটি ১৬ লাখ টাকার তথ্য গোপনের অভিযোগে মামলাটি করে দুদক। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ২০০৯ সালের ৩১ মার্চ ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে ৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এর আগে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদন্ড হয় তারেকের। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলাসহ আরও ২টি মামলায় তাকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে।
দুদকের কোর্ট পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, গ্রেপ্তারি পরোয়ানার তামিল প্রতিবেদন গ্রহণ করেন আদালত। এরপর ক্যান্টনমেন্ট থানার ওসিকে ১৯ জানুয়ারির মধ্যে তারেক ও জোবায়দার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন আদালত।
আদালত সূত্র জানিয়েছে, মামলা বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন জোবায়দা। ওই বছরই এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। এর বিরুদ্ধে আপিল করলে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখেন। তবে এ সংক্রান্ত্র চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ১২ এপ্রিল মামলা বাতিলের আবেদন খারিজ (রুল ডিসচার্জ) করে রায় দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ওই মামলায় আট সপ্তাহের মধ্যে জোবায়দাকে বিচারিক আদালতে উপস্থিত হতে নির্দেশ দেয়া হয়। উচ্চ আদালতের এ খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে ওই বছরই লিভ-টু-আপিল করেন জোবায়দা। এরপর প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ লিভ-টু-আপিল খারিজ করে হাইকোর্টের দেয়া রায় বহাল রাখেন।
বিএনপি সরকারের সময় হাওয়া ভবনে বসে সবকিছু ‘নিয়ন্ত্রণে’ তারেক রহমানকে নিয়ে বেশ আলোচনা তৈরি হয় দলটির জ্যেষ্ঠ নেতাদের পর্যায়ে। ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত সরকার ক্ষমতায় আসার পর তারেক রহমান আটক হন। এরপর চিকিৎসা করার কথা জানিয়ে দেশ ছেড়ে চলে যান পরিবার নিয়ে। দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর তারেক রহমান একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার আসামি হন। ওই মামলায় বিচারিক রাতে তাকে যাবজ্জীবন সাজাও দেয়া হয়। এছাড়া দেশ থেকে অর্থ পাচারসহ বেশ কয়েকটি দুর্নীতির মামলা রয়েছে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *