ডায়াল সিলেট ডেস্ক    মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার বর্ণি ইউনিয়নের পাকশাইল আইডিয়াল হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে গোপনে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি গঠনের অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

এলাকাবাসী কমিটি বাতিলের দাবিতে গত ২৯ জানুয়ারি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড সিলেট বিভাগের চেয়ারম্যান বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। পাশাপাশি গত ৩০ জানুয়ারি বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছেও লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. আনোয়ার হোসেন কতিপয় লোকজনের যোগসাজশে অত্যন্ত গোপনে গত ২৫ জানুয়ারি পরিচালনা কমিটির সভাপতি নির্বাচনের সভা এবং ম্যানেজিং কমিট গঠনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। প্রধান শিক্ষক নিজের নির্বাচনি তফশিল ঘোষণার বিষয়টি গোপন রেখে পছন্দের প্রার্থীকে সভাপতি নির্বাচিত করেন। তফশিলের বিষয়টি স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা, দাতা, অভিভাবক শ্রেণির ভোটার এবং শিক্ষার্থীরাও জানতেন না। গত ২৫ জানুয়ারি সভাপতি নির্বাচনের সভা চলাকালীন সময় তাৎক্ষণিক খবর পেয়ে বর্ণি ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্যসহ এলাকার মুরব্বিরা স্কুলে উপস্থিত হয়ে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা এএসএম রাশেদুজ্জামান বিন হাফিজকে মৌখিকভাবে বিষয়টি অবগত করেন। তারা প্রিসাইডিং অফিসারকে জানান প্রধান শিক্ষক তফশিল ঘোষণার বিষয়টি অত্যন্ত গোপন রেখেছেন। এলাকার কেউ এই বিষয়টি জানতেন না। বিধিমোতাবেক মনোনয়নপত্র বিক্রি, গ্রহণ, যাচাই-বাছাই ও প্রতীক বরাদ্দ কোনোটিই করা হয়নি। বিধি মোতাবেক না হওয়ায় কমিটি গঠনের পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ না করতে তারা (এলাকাবাসী) প্রিসাইডিং অফিসারকে অনুরোধ করেন। কিন্তু তারা এলাকবাসীর দাবি উপেক্ষা করে কমিটি গঠন করেন।

এদিকে অত্যন্ত গোপনে এবং অনিয়মের মাধ্যমে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি গঠন করায় গত ২৭ জানুয়ারি পাকশাইল এলাকাবাসীর উদ্যোগে স্থানীয় খেলার মাঠে এক প্রতিবাদ সভা হয়। সভা থেকে এই কমিটিকে অবৈধ ও বে-আইনী বলে কমিটি বিলুপ্তের দাবি জানানো হয়।

এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আনোয়ার হোসেন মুঠোফোনে বলেন, ‘নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার পর পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবেন প্রিসাইডিং অফিসার। এতে আমার কোনো দায় নেই। আমার উপর ওঠা অভিযোগ সঠিক নয়।’

তবে প্রিসাইডিং অফিসার ও উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা এএসএম রাশেদুজ্জামান বিন হাফিজ বলেন, ‘তফশিলের পর প্রধান শিক্ষককে ফলাও করে প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে সবাইকে জানানোর জন্য বলা হয়। তিনি করেছেন কি-না এটা আমি জানি না। ১৯ জানুয়ারি মনোনয়ন যাচাই-বাছাইয়ের তারিখ ছিল। নির্বাচনের পদগুলোতে একের অধিক প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় ফলাফল ঘোষণা করা হয়। আমি বিধিমোতাবে সবকিছু করেছি।’

বর্ণি ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান লোকমান উদ্দিন বলেন, ‘অত্যন্ত গোপনে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে কমিটি করায় এলাকার মানুষের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। পরিচালনা কমিটির নির্বাচনের জন্য তফশিল ঘোষণার বিষয়টি স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা, দাতা, অভিভাবক শ্রেণির ভোটার এবং শিক্ষার্থীরাও জানতেন না। মূলত প্রধান শিক্ষক নির্বাচনি তফশিল ঘোষণার বিষয়টি গোপন রেখে পছন্দের প্রার্থীকে সভাপতি নির্বাচিত করেন। যা অত্যন্ত বেদনাদায়ক এবং স্কুলের স্বার্থ বিরোধী। এলাকার মানুষকে বিষয়টি অনেক কষ্ট দিয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানটি দাঁড় করাতে এলাকার মানুষের অনেক ত্যাগ আছে। আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে আবেদন জানিয়েছি, কমিটি বাতিলের জন্য। আশা করছি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এলাকার মানুষের দাবির সাথে একাত্ম হয়ে এই কমিট বাতিল করে পুনরায় নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘ইতিমধ্যে এলাকবাসীর দাবির প্রতি একাত্মতা পোষণ করে একজন সদস্য পদত্যাগ করেছেন।’

এ ব্যাপারে বড়লেখা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হাওলাদার আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘প্রচার-প্রচারণায় অনিয়ম হয়ে থাকলে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুনজিত কুমার চন্দ বলেন, ‘এলাকাবাসীর লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *