একবার বাংলাদেশের পক্ষে তো আরেকবার ইংল্যান্ডের দিকে-যেন পেন্ডুলামের মতো দুলছিল ম্যাচের ভাগ্য। লো স্কোরিং ম্যাচে উত্তাপ ছড়াচ্ছিল প্রতিমুহূর্তে। তবে শেষ পর্যন্ত ডেভিড মালানের হার না মানা শতরানের ইনিংসে সওয়ার হয়ে ৩ উইকেটের জয় তুলে নিল ইংল্যান্ড। তিন ম্যাচ সিরিজে সফরকারীরা এগিয়ে গেল ১-০ ব্যবধানে।

মিরপুরে কদিন আগেই ভারতবধের সাক্ষী থেকেছে ক্রিকেটবিশ্ব। বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটিতে শুরুতে ব্যাট করতে নেমে সাকিব ও মুশফিকদের ব্যর্থতায় ২০৯ রানের সাদামাটা একটা সংগ্রহ দাঁড় করিয়েছিল টিম টাইগার্স। তবে ব্যাটিংয়ে ব্যর্থতার দিনে মিরপুরের পিচে বল হাতে দাপট দেখালেন তাইজুল-তাসকিনরা। আর তাতে ইংলিশবধের আশা দেখছিল লাল-সবুজের সমর্থকরা। তবে এক মালানের কাছেই হার মানলো তামিম ইকবাল বাহিনী। ৮ চার ও ৪ ছক্কায় ১৪৫ বলে ১১৪ রান করে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকলেন মালান।
অথচ এই ম্যাচের আগে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার অভিজ্ঞতা ছিল না মালানের। তবে সেই ২০১৩ সালে প্রাইম দোলেশ্বরের হয়ে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে খেলেছেন তিনি। একই দলের হয়ে খেলেছেন পরের মৌসুমেও। পরে বিপিএল খেলেছেন চার দফায়। সবশেষটি এই মাস দুয়েক আগেই। সেই অভিজ্ঞতার সবটুকু ঢেলে দিয়ে তিনি চ্যালেঞ্জিং উইকেটে দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি করে হতাশ করলেন বাংলাদেশকে।

এর আগে হাতের নাগালে থাকা ২১০ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে শুরু থেকে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে হারের শঙ্কা জাগছিল ইংল্যান্ডের। ইংলিশ শিবিরে প্রথম আঘাত হানেন টাইগার অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। প্রথম ওভারেই বল হাতে তুলে নিয়ে ফিরিয়েছেন বিধ্বংসী ইংলিশ ওপেনার জেসন রয়কে।

সাকিবের দেখানো পথে হাঁটেন আরেক পরীক্ষিত স্পিনার তাইজুলও। নিজের ব্যক্তিগত দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলেই ফিল সল্টকে ফিরিয়ে দলকে উৎসবে ভাসান তিনি। সল্টের পর তাইজুলের দ্বিতীয় শিকার জেমস ভিন্স। ঝুলিয়ে দেওয়া বলে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন ভিন্স, তবে মিস করে গেছেন পুরোপুরি। উইকেটের পেছনে দাঁড়ানো মুশফিক ভুল করলেন না। ৯ বল খরচায় ভিন্স করলেন মোটে ৬ রান।

প্রথম তিন উইকেট ভাগাভাগি করে নেন দুই স্পিনার। তবে চতুর্থবারে সাফল্য পেলেন পেসার তাসকিন আহমেদ। টাইগার স্পিডস্টারের লাফিয়ে ওঠা বলে পুশ করতে গিয়ে এজড হয়েছেন ইংলিশ অধিনায়ক জস বাটলার। মাত্র ৬৫ রানের মাথায় চার চারটি উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিল সফরকারীরা।

বাটলারের বিদায়ের পর মালানের সঙ্গে জুটি গড়েছিলেন বিপিএল মাতিয়ে জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া উইল জ্যাকস। অভিষেক ম্যাচেই তার ব্যাট থেকে এলো মূল্যবান ২৬ রান। যদিও শেষ পর্যন্ত মিরাজের বলে সাজঘরে ফেরেন এই ব্যাটার। এক প্রান্তে খেলোয়াড় বদল হলেও অন্য প্রান্তে জমে গিয়েছিলেন মালান। নিজের চতুর্থ ওয়ানডে সেঞ্চুরির দিনে দলের জয়ও নিশ্চিত করলেন।

এর আগে বাংলাদেশের ইনিংসে ব্যাট হাতে আলো ছড়িয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। তুলে নিয়েছেন ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডে অর্ধশতক (৫৮)। এছাড়া টিম টাইগার্সের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩১ রানের ইনিংস খেলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। এ দুজন ছাড়া ব্যাট হাতে ব্যর্থ বাকিরা। শেষ পর্যন্ত বোলারদের কল্যানে ম্যাচে ফিরতে পারলেও আরও কয়েকটা রানের আক্ষেপে পুড়তে হচ্ছে স্বাগতিকদের।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

বাংলাদেশ: ৪৭.২ ওভারে ২০৯/১০ (তামিম ২৩, লিটন ৭, শান্ত ৫৮, মুশফিক ১৬, সাকিব ৮, মাহমুদউল্লাহ ৩১, আফিফ ৯, মিরাজ ৭, তাসকিন ১৪, তাইজুল ১০ ও মুস্তাফিজ ০* ; জোফরা ১০-০-৩৭-২, ক্রিস ওকস ৮-০-২৮-১, মার্ক ৮-০-৩৪-২, মঈন ৭.২-০-৩৫-২, আদিল রশিদ ৯-০-৪৭-২ ও জ্যাকস ৫-০-১৮-১)।

ইংল্যান্ড: ৪৮.৪ ওভারে ২১২/৭ (জেসন ৪, সল্ট ১২, মালান ১১৪*, ভিন্স ৬, বাটলার ৯, জ্যাকস ২৬, মঈন ১৪, ওকস ৭, রশিদ ১৭*; সাকিব ১০-০-৪৫-১, তাসকিন ৯-১-২৬-১, তাইজুল ১০-০-৫৪-৩, মিরাজ ১০-২-৩৫-২, মুস্তাফিজ ৮-০-৪২-০, শান্ত ১.৪-০-৯-০)।

ফলাফল: ইংল্যান্ড ৩ উইকেটে জয়ী।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: ডেভিড মালান।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *